ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস

ক্যাম্প আয়োজন স্বেচ্ছা রক্তদাতার সংখ্যা বাড়াবে 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৩৯ পিএম, ১১ জুন ২০২৪ মঙ্গলবার

সাধারণত থ্যালাসেমিয়া, রক্তস্বল্পতা, প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অগ্নিদগ্ধ রোগী, বড় অপারেশন, দুর্ঘটনা ইত্যাদি নানা কারণে একজন রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের কোনো বিকল্প নেই। রক্তের প্রয়োজনে রক্তই দিতে হয়। নিকটজনের কাছ থেকে না পেলে রক্তের জন্যে ছুটতে হয় ব্লাড ব্যাংকে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এ কাজে এগিয়ে আসে এবং রক্তচাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ডব্লিউএইচও এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, 20 years of celebrating giving: thank you blood donors!
সহজ বাংলা করলে দাঁড়ায়- ‘দিবস উদযাপনের ২০ বছর: ধন্যবাদ হে রক্তদাতা!’।

রক্ত সংগ্রহের জন্যে ল্যাবে রক্তদানের পাশাপাশি ক্যাম্প আয়োজনও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ নতুন রক্তদাতার সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিসহ অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতেও ক্যাম্পের ভূমিকা অনেক। রক্তচাহিদা পূরণে সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে সচেতনতাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের সংগঠন কোয়ান্টামের কথা উল্লেখ করা যায়। কোয়ান্টামের ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে। শুরু থেকেই ব্লাড ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহের উদ্যোগকে সক্রিয়ভাবে চালু রেখেছে স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠন। ক্যাম্পের মাধ্যমে মে ২০২৪ পর্যন্ত কোয়ান্টামের রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি ইউনিট।

ল্যাব প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৯৮ সাল থেকে মোবাইল ব্লাড ডোনার পুল নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল। দেশব্যাপী ফাউন্ডেশনের শাখা-সেলগুলোও সক্রিয়ভাবে এই কার্যক্রমের সাথে যুক্ত রয়েছে। নিয়মিত দাতাদের ল্যাবে এসে রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি নেয়া হয় বিভিন্ন স্থানে ব্লাড ক্যাম্প আয়োজনের উদ্যোগ। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এ পরিবারের সদস্যদের উদ্যোগ ও সহযোগিতার ফলে প্রতিষ্ঠার প্রথম বছর থেকে স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের ব্যানারে ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে অনুষ্ঠিত হয়েছে হাজার হাজার ব্লাড ক্যাম্প। এসব আয়োজনে রক্তদাতা হিসেবে সম্পৃক্ত হন অসংখ্য রক্তদাতা।

দেশের রক্তচাহিদা পূরণে অসংখ্য ক্যাম্প আয়োজনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে কোয়ান্টাম। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যাম্প আয়োজনসহ রয়েছে নানা আঙ্গিকে নানা দিবসেও রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণ, সংগ্রহ ও সরবরাহের প্রচেষ্টা।  

এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প আয়োজন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন, অডিট অফিস, লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্স, বিজিএমইএ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প করা হয়েছে। এ তালিকায় আরো রয়েছে রেডিও টুডে, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, হোলসিম-এর মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও। এছাড়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, হাউজিং কমপ্লেক্স, বিভিন্ন মার্কেট, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও ক্যাম্প করা হয়েছে। মাসব্যাপী ব্লাড ক্যাম্পের আয়োজনেও অংশ নেয় কোয়ান্টাম। ২০০২ সাল থেকে বহুবার ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ব্লাড ক্যাম্প আয়োজন করেছে রক্তদানের এ সংগঠন। রক্ত সংগ্রহের পাশাপাশি গ্রুপ যাচাইসহ বিপুল সংখ্যক উৎসাহী তরুণ-তরুণীর কাছে স্বেচ্ছা রক্তদানের গুরুত্ব তুলে ধরার সুযোগ হয় এসব ক্যাম্পের মাধ্যমে। 

বছরের বিশেষ দিনগুলো, যেমন- বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ১লা বৈশাখ, নজরুল জয়ন্তী, পবিত্র আশুরা এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবে বিভিন্ন পূজাম-পে ক্যাম্প আয়োজন করা হয়। এসব ক্যাম্পে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্ত দান করেন হাজারো রক্তদাতা। কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদানের ক্যাম্প কার্যক্রমে ২০১২ সালে যুক্ত করা হয় নতুন মাত্রা- মোবাইল ব্লাড ক্যাম্প। নিজস্ব একটি কাভার্ড ভ্যানকে এ উদ্দেশ্যে ২টি বেডসহ রক্ত সংগ্রহের অন্যান্য ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থা সম্পৃক্ত করে সুসজ্জিত করা হয়। একসাথে এখানে রক্ত দিতে পারেন দুইজন রক্তদাতা। কোয়ান্টাম মোবাইল ব্লাড ক্যাম্পে এখন এমন মোবাইল গাড়ির সংখ্যা ৩টি। একদল স্বেচ্ছাসেবীর সহযোগিতায় মোবাইল ভ্যানগুলোর মাধ্যমে ঢাকা ও এর আশেপাশে নিয়মিতভাবেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম ও ক্যাম্প। এসব ক্যাম্প থেকে প্রতিদিন গড় সংগ্রহ ১৫-২০ ইউনিট রক্ত।

যে কেউ চাইলে এমন ক্যাম্প আয়োজন করতে পারেন। ব্লাড ক্যাম্প আয়োজনের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতিতেই সহযোগিতা করতে পারে কোয়ান্টাম। এক্ষেত্রে রসদ, তহবিল বা সরঞ্জামাদির যোগানও করা হয় কোয়ান্টামের পক্ষ থেকে। তাই আপনিও হতে পারেন মহৎ এ কার্যক্রমের অংশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা পেশাজীবী, বাণিজ্যিক, সামাজিক বা সেবামূলক সংগঠনে ব্লাড ক্যাম্পের আয়োজনের উদ্যোগ নিতে পারেন। আপনার ছোট্ট একটি উদ্যোগে এমন একটি ক্যাম্প আয়োজন হতে পারে অসংখ্য মুমূর্ষের সেবায় অনন্য এক সৎকর্ম। সবাইকে বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের শুভেচ্ছা। 

লেখক-কো-অর্ডিনেটর, স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। 
কেআই//