আমরা গাছ লাগাই আর বিএনপি-জামাত সেগুলো ধ্বংস করে: শেখ পরশ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫৮ পিএম, ১৪ জুন ২০২৪ শুক্রবার
আজ ১৪ জুন, বিকাল ৩:৩০টায়, গ্রীন মডেল টাউন, মান্ডা, মুগদায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করা হয়। উক্ত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন ও সভাপতিত্ব করেন- শেখ ফজলে শামস্ পরশ, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, মন্ত্রী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। সঞ্চালনা করেন-আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল এমপি, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
উদ্বোধক ও সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন-আপনারা জানেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটা অন্যতম প্রধান কারণ বৃক্ষনিধন। নগরায়ণের সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণের বৃক্ষনিধন হয়ে থাকে, যার কারণে পরিবেশ হয় বিপন্ন এবং ভারসাম্যহীন। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার একর বনভূমি জবরদখলমুক্ত করা হয়েছে এবং বনায়ন সম্পন্ন হয়েছে। শুধু বনেই বনায়ন নয়, যখনই সরকার রাস্তা-ঘাট তৈরি করছে বা উন্নয়ন স্থাপনা নির্মাণ করছে সেখানে একটি সুনির্দিষ্ট নিদের্শনা থাকে যে কি পরিমাণ বৃক্ষরোপণ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ, দেশের জনগণ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করাই তার সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। পরিবেশ রক্ষায় বাসা-বাড়ির চারপাশ ও অফিসের ফাঁকা জায়গায় গাছের চারা রোপণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আমাদের সুন্দর জীবন ও সুস্বাস্থ্যের জন্য সুন্দর পরিবেশ দরকার। কাজেই সেদিকে সবাইকে সচেতন হতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্যই হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ, দেশের মানুষ এবং প্রকৃতিকে রক্ষা করা।
তিনি আরও বলেন-আষাঢ়-শ্রাবণ এবং ভাদ্র মাস বৃক্ষরোপণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তবে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কারণ শুধু বৃক্ষরোপণ করলে চলবে না, বৃক্ষ পরিচর্যা করতে হবে। আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ উয়ন্ননের জন্য বৃক্ষরোপণ তথা উন্নত প্রাকৃতিক পরিবেশের কোন বিকল্প নাই। তিনি বলেন-বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিবেশ সুরক্ষায় যুবলীগ প্রতিবছর নেতৃত্ব দেয়। গত ৩ বছরে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আহ্বানে প্রতিবছর কম-বেশি ১ কোটি বৃক্ষরোপণ করেছি। এবারও আমাদের সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। তারই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখলে আমরা একদিন একদিকে দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারব, বঙ্গবন্ধুকন্যার বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করতে পারব এবং আগামী প্রজন্মের জন্যও সুজলা সুফলা বাংলাদেশ রেখে যেতে পারব।
তিনি আরও বলেন-আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি সারা দেশের যুবলীগের নেতৃবৃন্দদের নির্দেশ দিচ্ছি যে, এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিবেন। নামকা ওয়াস্তে দায়সারাভাবে গাছ লাগাবেন না, গাছের পরিচর্যাও প্রয়োজন। এমন জায়গায় লাগাবেন না-মানুষের জাতায়াতের পথের মধ্যে পরে; যে পরের দিন মানুষজন বিরক্ত হয়ে গাছটা তুলে ফেলতে বাধ্য হয়। গাছ শুধু লাগালে হবে না, গাছ বাঁচাতেও হবে। এই দেশ আমাদের। আজকের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের সবুজ বাংলাকে আরও সবুজ রঙে আঁকতে হবে। বর্তমান সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বনভূমি এলাকা বাড়িয়ে ২৫% শতাংশ করার লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। আমাদের জনসচেতনামূলক কাজ করে সরকারের এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে হবে।
তিনি বলেন-আওয়ামী লীগ আত্মকেন্দ্রিক, বর্তমান নির্ভর রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, সুদূরপ্রসারী ও সার্বজনীন রাজনীতিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৭২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। ৯৬ সালে সরকার গঠন করে জননেত্রী শেখ হাসিনাও পরিবেশ রক্ষার্থে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখেন। কিন্তু বিএনপি-জামাত ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে নিজেদের পকেট ভারীর রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে পরিবেশ রক্ষায় কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে নাই, বরং আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। আপনাদের মনে আছ ২০১৩ সালে সরকার উৎখাতের নামে বিএনপি-জামাত বৃক্ষ নিধন করেছে। শুধু মানুষ এবং মানুষের সম্পদ পুড়িয়ে ওরা ক্ষ্যান্ত হয় নাই, ওরা জীব-জন্তু, গরু, সাগল পুড়িয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ বৃক্ষও তারা কেটে ফেলে। আমরা গাছ লাগাই আর ওরা সেগুলো ধ্বংস করে। এই তাদের চরিত্র। তিনি বলেন-আওয়ামী লীগ সরকার আমলে আমাদের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীতে পরিবেশ রক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ১৮ অনুচ্ছেদে সংযোজন আনা হয়েছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা করা এখন নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের নিজেদের সুরক্ষা না, আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশ ভূমিকা রাখছে। আর প্রকৃতিকে রক্ষা করা সকলেরই কর্তব্য, কারণ প্রকৃতি থেকে আমরা সবকিছুই পাই। আমরা বলি দেশ এবং দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করতে আমাদের পূর্বপুরুষরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে। দেশ যদি মায়ের মত হয়, তাহলে প্রকৃতিও আমাদের বড়-মা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন এমপি বলেন-জননেত্রী শেখ হাসিনা আজকে প্রমাণ করেছেন, আমরা শুধু দেশকে স্বাধীন করি নাই, আমরা দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে সারাবিশ্বের নেতৃবৃন্দ আমাদের নেত্রীকে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে। আপনারা জানেন-গত ৫ই জুন আমাদের প্রিয়নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নয়, আমাদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠন কাজ করে এবং সারা বাংলাদেশে তারা গাছ লাগাবে। আপনারা বলছেন এটা মানবিক কর্মসূচি।
আমরা কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের যে চ্যালেঞ্জ গুলো আছে সেটাকে আমরা বাংলাদেশের জন্য একটা অস্তিত্বের সংকট হিসেবে নিয়েছি। কারণ যেভাবে সমদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, যেভাবে হিমালয়ের বরফ গলছে তাতে বাংলাদেশের একটা বড় অংশ পানির নীচে তলিয়ে যাবে। প্রতিদিন নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি হারানো মানুষ ঢাকা শহরে আসছে, একটা পর্যায়ে আমাদের খাদ্য শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নয়, আমাদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠন কাজ করে এবং সারা বাংলাদেশে তারা গাছ লাগাবে। আপনারা বলছেন এটা মানবিক কর্মসূচি। আমরা কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের যে চ্যালেঞ্জ গুলো আছে সেটাকে আমরা বাংলাদেশের জন্য একটা অস্তিত্বের সংকট হিসেবে নিয়েছি। কারণ যেভাবে সমদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, যেভাবে হিমালয়ের বরফ গলছে তাতে বাংলাদেশের একটা বড় অংশ পানির নীচে তলিয়ে যাবে। প্রতিদিন নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি হারানো মানুষ ঢাকা শহরে আসছে, একটা পর্যায়ে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে। এই সকল পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে, পাহাড় রক্ষা করতে হবে। আর এই গুরু দায়িত্ব যুবলীগকেই নিতে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সঞ্চালকের বক্তব্যে বাংলদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল এমপি বলেন-বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বার বার ষড়যন্ত্রের সম্মুখিন হয়েছে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশকে ধ্বংস করার জন্য, স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার জন্য একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় করানোর জন্য যা যা করার তা তিনি করেছেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ২৮ বছর দেশবিরোধীরা ক্ষমতায় থেকেছে। তাদের তখন কোন অবদানের নিদর্শন দেখাতে পারেন নি।
তিনি আরও বলেন-আপনারা জানেন করোনার মহামারি সময়ও বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে যুবলীগ পরিবেশ রক্ষাকাজ করেছে। সারাদেশে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা প্রায় ৩৫ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করেলি। পরবর্তীতে সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে যুবলীগ। বাংলদেশের পরিবেশ নষ্টের অন্যতম মূল হোতা বিএনপি-জামাত। আপনারা জানেন ২০১৩-১৪ সালে সরকার উৎখাতের নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারা, গাড়ি পুড়ানোসহ লক্ষ লক্ষ গাছ কেটে ধ্বংস করেছিল তারা। আর এভাবেই তারা পরিবেশ নষ্ট করেছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, তাজউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, মোঃ রফিকুল আলম জোয়ার্দার সৈকত, সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন খসরু, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হারিছ মিয়া শেখ সাগর, উপ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মোঃ রাশেদুল হাসান সুপ্ত, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শামছুল ইসলাম পাটোয়ারী, উপ-ধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।
কেআই//