উওরার পশুর হাঁট
শেষ মুহুর্তে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে: দামও বেশ সস্তা
এস.এম.মনির হোসেন জীবন
প্রকাশিত : ০৬:০৩ পিএম, ১৫ জুন ২০২৪ শনিবার | আপডেট: ০৬:১২ পিএম, ১৫ জুন ২০২৪ শনিবার
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিএ ঈদ- উল- আজহা'র আর মাত্র বাকী এক দিন। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদ উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য কোরবানি। এলক্ষে মানুষ ও কোরবানির পশুতে একাকার রাজধানীর উওরার বড় দু'টি পশুর হাট। উওরার পশুর হাঁটে বেচাকেনা শেষ মুহূর্তে বেশ জমে উঠেছে। ক্রেতারাও গরুর তাদের সাধ্যমত দামে পছন্দের গরুটি কিনে নিয়ে যাচেছন। গত কয়েক দিনের তুলনায় হাটে গরুর দাম ও বেশ সস্তা।
আজ শনিবার উত্তরার গরুর হাট সরেজমিন ঘুরে এবং ক্রেতা- বিক্রেতা কথা বলে জানা গেছে, হার্ট ভর্তি বিভিন্ন জাতের দেশিয় ছোট, মাঝারি ও বড় জাতের অসংখ্য গরু উঠেছে, হাটে ক্রেতাদের প্রচন্ড ভিড় ও বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে, পশুর হাটে আসা অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে খামারে লালন-পালন করা দেশি গরুই পছন্দ করছেন। অনেক ক্রেতা মনে করছেন শেষ দিনে দাম কমে যাবে। তখন কোরবানির পশু তারা সস্তায় কিনবেন। একশ্রেণীর মানুষ অনলাইনে কুবাণী পশুটি ঘরে বসেই তার পছন্দ মত কিনতে পারছেন। দরদামে বনিবনা হয়ে গেলেই মোবাইল অথবা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পছন্দ মত পশু কিনে ফেলছেন। বর্তমানে এই দু'টি হাটে দেশি গরুই বেশি উঠেছে।
আজ রাজধানীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট ‘উওরা ১৮ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন সিটির পশুর হাট ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতা,ব্যবসায়ী, ইজারাদার, বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন পরিদর্শননে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা উত্তরে অস্থায়ী ৮টি হাটের মধ্যে রয়েছে-উত্তরা দিয়াবাড়ীর ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা, মস্তুল চেকপোস্ট এলাকা, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাটারার সুতিভোলা খালের কাছের খোলা জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে রানাভোলা স্লুইচগেট পর্যন্ত খালি জায়গা ও দক্ষিণখানের জামুনখান এলাকার খালি জায়গা।
উওরা ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন পশুর হাটে কেনাবেচা জমজমাট হয়ে উঠেছে। কিন্তু এবার ঈদের মাত্র একদিন আগে এই হাটে গরু ছাগল কেনাবেচা জমে উঠে। যারা হাটে যাচ্ছেন তারা মাঝারি আকৃতির গরু খুঁজছেন কম দামে কেনার জন্য। এজন্য মাঝারি আকৃতির গরুর তুলনামূলক ভাবে চাহিদা একটু বেশি। বড় গরু নিয়ে যারা হাটে আছেন তাদের কাছে ক্রেতারা খুব কম ভিড় করছেন। তবে,হাটে কোরবানির জন্য তৈরি করা বড় গরুগুলো ও এসেছে। কিন্তু দাম তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি। বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু নিয়ে উত্তরার হাটে আসা পাইকার মোস্তফা মাতাব্বর, মো, রাসেল ও রফিক নামে তিনজন গরু ব্যবসায়ী বাসসকে বলেন, এবছর পশুর হাটে ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। হাটে যেসব ক্রেতা আসছেন তারা দেশীয় জাতের গরু এবং স্বাভাবিক খাবার দিয়ে খামারে লালন-পালন করা গরুই বেশি পছন্দ করছেন। উওরার হাটে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হাটে এলেও দর-দাম করেই তাদের পছন্দের গরু কিংবা ছাগলটি ক্রয় করে বাড়ি নিয়ে যাচেছন। সেই সাথে বাজার বড় বড় গরুর ও কমতি নেই। তবে, ছোট জাতের গরুর চাহিদা বেশি।
উওরার হাটে পাবনা থেকে গরু নিয়ে আসা রফিক বেপারী নামে এক খামারি বলেন, পরিবহনে করে গরুর নিয়ে আসা, হাটে তোলা, খাওয়ানো ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা- এই পুরো সময়টা জুড়ে তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। এছাড়া সব সময় গরুর দড়ি ধরে থাকা, তাকে সামলানো এবং গরুর গোবর তোলাসহ নানান কারণে তারা হাতও পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শিশির জানান, আগামী ১৭ জুন পালিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। আসন্ন ঈদকে ঘিরে উত্তরার কোরবানির পশুর হাট ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারনায় জমে উঠেছে ।
গরুর পাশাপাশি হাটে ব্যাপক কোরবানির ছাগল ও উঠেছে। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানি পশু (ছাগল) ক্রয় করা সম্ভব। বগুড়ার নবাব, লাট বাহাদুর ও কালো মানিক ও লাল বাদশা নামে চারটি বড় জাতের বিশাল গরু উত্তরার হাটে আনা হয়েছে। কিন্তু গরু দু'টির দাম চাওয়া হয়েছে ১২/১৫ লাখ টাকা।
উত্তরার শ্রমিক নেতা রুবেল জানান, গতকাল রাতে আমার বন্ধু উত্তরার গরুর হাট থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি বিশাল আকৃতির গরু কিনেছেন। আমার কাছে মনে হল হাটে হঠাৎ করে গরুর দাম কমে গেছে। এতে আমি বেশ খুশি। এবছর সবার পশু কোরবানি দিতে পারবে।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে ছোট-বড় নানা ধরনের নানা জাতের গরু উঠেছে হাটটিতে। ক্রেতারা আসছেন, দেখছেন, কথা বলছেন, দাম জানছেন। কেউ কেউ গরু কিনেও ফিরছেন। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের এখনো ৩/এক দিন বাকি। এখন শুধু ছোট সাইজের গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রচুর পরিমান খাসি ও ছাগল উঠেছে। বেচাকেনাও বেশ জমে উঠেছে। ছোট খাসির দাম ১০/ ১৫ হাজার টাকা। মাঝারি খাসি ২০/২৫ হাজার এবং বড় জাতের খাসি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচেছ।
এদিকে, উওরার দু'টি গরুর হাটে কোরবানির পশুর দাম গত বছরের তুলনায় এবছর অনেকটাই কম বলে জানিয়েছে উত্তরা ও তুরাগের স্হায়ী ক্রেতারা। গত বছর ছোট গরু ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা, মাঝারি আকৃতির গরু থেকে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বড় আকৃতির গরু দেড় লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচচ ১৫ লাখ টাকার মধ্যেই বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবছর ছোট সাইজের গরু বিক্রি হচেছ ৭০ /৮০ হাজার, মাঝারী গরু ১ লাখ থেকে ১লাখ ২০ আর বড় জাতের গরু ১ লাখ ১৫০ থেকে ১২/১৫ লাখ টাকায়।
তুরাগের নলভোগ গ্রামের স্হায়ী বাসিন্দা ও গরু ব্যবসায়ী মোস্তফা মাতাব্বর জানান, গত বছর তিনি প্রচুর গরু বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন। তাই এবছর তিনি ৫ /৬ মণ ওজনের মাত্র ১৪টি কালো ও লাল জাতের গরু নিজস্ব খামারে লালন পালন করে হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। সব গুলো গরু বড় এবং দাম সাড়ে ৪ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত।
একটি মাত্র গরু ছাড়া তিনি বাকি সব কয়টি গরু ইতিমধ্যে বিক্রি করে দিয়ে বেশ লাভবান হয়েছেন বলে জানান।
আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখে যায়, কোরবানির পশু রাখার জন্য তৈরি করা হচ্ছে পেন্ডেল। তুরাগের বিশাল মাঠ জুড়ে পেন্ডেল তৈরিতে বাঁশ, দরি ও ত্রিপল টানানো হয়েছে। মাঠ ঘুরে দেখা যায়, গরুর ব্যাপারী ও শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গাবতলী পশুর হাটে ভারতের রাজস্থান থেকে আনা উট তোলা হয়েছে। উট দেখতে ভিড় করছে দর্শনার্থী ও ইউটিউবাররা। মো. মাহফুজুর রহমান অপু দু'টি উট এক মাস আগে কিনেছেন। এরপর সড়কপথে উট দু'টি বাংলাদেশে আনা হয়।
উটের মালিক মো. মাহফুজুর রহমান অপু জানান, প্রতি উটে ১৪/১৫ মণ মাংস হবে। আমার পরিবার উটের ব্যবসার সঙ্গে ২০-৩০ বছর জড়িত। আমার বাবাও এই ব্যবসার সাথে জরিত। পরিচর্যা হিসেবে ঘাস, কুড়া ও ভুসি খাওয়ানো হচ্ছে উট দুটিকে।
তিনি বলেন, রাজস্থান থেকে দুটি উট নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য কোরবানির সময় বিক্রি করা। আমরা দুটি উটের দাম চাচ্ছি ৬০ লাখ টাকা। তবে কিছু কমে বিক্রি করবো।
উওরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন পশুর হাটের ইজারাদার আলহাজ্ব মো, কফিল উদ্দিন মেম্বার জানান, হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। হাটে গরুতে সয়লাভ হয়ে গেছে। প্রচুর পরিমান গরু উঠেছে। তবে, পশুর হাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। আশা করছি,আজ ও রোববার আবহাওয়া ভালো থাকলে বিকেল থেকে হাঁটে পশুর বেচাকেনা তুলনামূলক ভাবে বাড়বে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশু আসা অব্যাহত রয়েছে। এই হাটে শতকরা ৫% হাসিল নেয়া হচেছ। হাটে নিরাপত্তার কোন অভাব নেই বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে জানতে ডিএমপির তুরাগ থানার ওসি (তদন্ত) মো, আমিনুল ইসলাম জানান, উত্তরার গরুর হাঁটে ডিএমপির পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্হা গ্রহন করা হয়েছে। গরুর হাটে বসানো হয়েছে ওয়ার্চ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে। হাটে পুলিশি চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। জাল টাকার মেশিন বসানো হয়েছে এবং নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। বিপুল পরিমান পুলিশ সদস্য এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। যা কিছু করা দরকার এখানে সব কিছুই আছে। আশা করি কোন ধরনের অসুবিধা হবে না।
ডিএনসিসি ৫৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বীরমুক্তিযোদ্বা আলহাজ্ব মো: নাসির উদ্দিন বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৩ নং ওয়ার্ডের কোরবানির পশুর হাট উত্তরা দিয়াবাড়ীর ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর এবারও ক্রেতা বিক্রেতাদের প্রত্যাশা পূরণে পশুর হাটটি ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি। এই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। গরু ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারবেন। এখানে যেন কেউ কোন চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে না পারে সেজন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।