ঢাকা, শুক্রবার   ০৫ জুলাই ২০২৪,   আষাঢ় ২১ ১৪৩১

রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক, প্রয়োজন সতর্কতা 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৮ পিএম, ২৪ জুন ২০২৪ সোমবার

বাংলাদেশের বেশ কিছু জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে অনেকে নানাভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অনেকে প্রচার করছেন যে সাপটি কামড় দিলে দ্রুত মানুষের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে রাসেলস ভাইপার সাপ মেরে ফেরার প্রচারণাও চালানো হচ্ছে ফেসবুকে।

এর পরিপেক্ষিতে দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে অ্যান্টি ভেনম মজুদ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

বিবিসি এক প্রিতবেদনে জানিয়েছে, রাসেলস ভাইপার সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইঁদুর শিকার রাসেলস ভাইপার প্রায়শই মানুষের বসতির কাছাকাছি এবং বিশেষ করে ফসল কাটার সময় কৃষি জমিতে চলে আসছে। ২০২৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। 

রাসেলস ভাইপর এদেশের মানুষের কাছে চন্দ্রবোড়া সাপ হিসাবেই বেশি পরিচিত। এ সময়ের বিলুপ্ত প্রায় এই বিষধর সাপটিই এখন সারাদেশে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এরিই মধ্যে, দেশের প্রায় ২৮টি জেলাতে এই রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত এই সাপের কামড়ে ১০ জন মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তবে এই বিষধর সাপে কামড়ের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে। রাসেলস ভাইপারকে বাংলাদেশে ২০০২ সালে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও এখন ফিরে এসেছে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, সাপ সাধারণত শুষ্ক এলাকায় পাওয়া যায়। বিভিন্ন জলবায়ু পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং এখন বাংলাদেশের ২৮টিরও বেশি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সাপের কামড় অবহেলিত একটি ঝুঁকির মধ্যে একটি এবং এটি মোকাবেলাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

সরকারের ভেনম রিসার্চ সেন্টার বলছে, পদ্মা অববাহিকার জেলাগুলোতে রাসেলস ভাইপরর বেশি ছড়াচ্ছে। গবেষকেরা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়ার কারণেই ছড়াচ্ছে এই সাপ। এটি একমাত্র বিষধর সাপ, যে বাচ্চা দেয়। প্রতিবারে জন্ম নেয় ৪০ থেকে ৫০টি বাচ্চা। কোন কোন সাপ ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে। বন বিভাগ বলছে, রাসেলস ভাইপার স্বভাবগতই কিছুটা তেজী। সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে।

বিন বিভাগ বলছে, কালের বিবর্তনে রাসেলস ভাইপার এখন দক্ষ সাঁতারু। এর ফলে নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। এটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সাথে সহজে মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে চলে যাতে পারে এবং আক্রান্ত হতে পারে। যেসব প্রাণী এই সাপটি খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে, সেগুলো কমে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এরই মধ্যে ৫০টি রাসেলস ভাইপার সংগ্রহ করা হয়েছে। এন্টি ভেনম তৈরির গবেষণা চলছে। বর্তমানে এই সাপে কাটলে ভারতে তৈরি এন্টি ভেনম দেয়া হয়। নিজস্ব সাপের বিরুদ্ধে নিজস্ব অ্যান্টি ভেনম তৈরি হলেই এই সাপে কাটা রোগীদের সঠিক সেবা দেয়া যাবে। এর আগ পর্যন্ত ভারতের অ্যান্টিভেনমের ওপর ভরসা করে থাকতে হবে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত এটি দেয়া আছে। 

রাসেলস ভাইপার নিয়ে বন বিভাগের পরামর্শ

যথাসম্ভব সাপ এড়িয়ে চলতে হবে। সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করা যাবে না। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নিতে হবে বা কাছের বন বিভাগ অফিসে খবর দিতে হবে। 
যেসব এলাকায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে। 
সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করা যাবে না। রোগীকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে। দংশিত স্থানের উপরে হালকা করে বেঁধে দিতে হবে। রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আতঙ্কিত হবেন না, রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টি ভেনম নিকটস্থ হাসপাতালেই পাওয়া যায়।

এমএম//