ঢাকা, শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৭ ১৪৩১

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আমাদের আত্মবিধ্বংসী মনোভাব

অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশিত : ০৩:৫১ পিএম, ৩০ জুন ২০২৪ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা এ কথাটা আমরা বিশ্বাস করতাম। একসময় ছড়া কাটা হতো এই বলে, খেলার রাজা ক্রিকেট, রাজার খেলা পোলো....। কালক্রমে রাজা গেছেন রাজ্যও গেছে। কিন্তু খেলার রাজা ক্রিকেট বেঁচে আছে। সগৌরবে চলছে তার জয়যাত্রা। 

আশ্চর্যজনকভাবে ইংরেজদের দেয়া দুটো জিনিস আমরা অনিবার্য হিসেবে গ্রহণ করেছি। রোজ সকাল সন্ধ্যায় এক কাপ চা আর খেলা মানেই এখন ক্রিকেট। কেন জানি উপমহাদেশের সবগুলো দেশই ক্রিকেট পাগল। এমন কি শ্রীলঙ্কাও। যাদের নাম বা ঐতিহ্যে পর্তুগিজীয় প্রভাব সর্বাধিক। 

উপমহাদেশের ক্রিকেটে আরেকটি বিষয় ঢুকে আছে। উন্মাদনা জোশ আর পাগলামির সাথে ঢুকে গেছে তীব্র বিরোধিতা। যার আরেক নাম সাম্প্রদায়িকতা। ভারত-পাকিস্তান খেলা মানেই যেন যুদ্ধ। এই দুই দেশের উত্তেজনা সমর্থকদের শান্ত রাখার কোন পরিকল্পনা বা প্রক্রিয়াই কাজে আসে না। বরং এযেন ছাই চাপা আগুন। কিছুদিন চাপা থাকলেও আবার দ্বিগুণ হয়ে জ্বলে ওঠে। 

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সে লড়াই জমেনি। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে পাকিস্তানের অর্থনীতি সমাজ ও রাষ্ট্রের মতো তাদের ক্রিকেটের অবস্থাও নাজুক। ভারতের সাথে হারাটা এখন প্রায় অভ্যাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান বিদায় নিলেও আমরা টিকে ছিলাম। 

যে যাই বলুক না কেন বাংলাদেশ মাঝে মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায়। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোটা ধারাবাহিক হতে পারলে অন্যদের খবর ছিল। এ নিয়ে বহু জল্পনা কল্পনা আর গালমন্দ আছে। সেটা থাকতেই পারে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ দর্শকদের মনে ভয়াবহ ধরণের সাম্প্রদায়িকতা বাসা বেঁধেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। বিশেষত: ভারত জিতুক এটা কোনভাবেই যেন মেনে নিতে পারে না। যারা এমনটি করে বা এমন ধারণা পোষণ করে তাদের সংখ্যা প্রচুর। কেন এবং কি কারণে এমন মনোভাব?

এর উত্তর দেয়া সহজ কিছু না। এর সাথে দেশ জাতি অর্থনীতি দু’দেশের সম্পর্ক সবার ওপরে ধর্মীয় পরিচয় জড়িত। বিশেষত: ধর্ম ভিত্তিক পরিচয়টাই যেন বড়। না হলে দেশের শেষ খেলায় ভালো ব্যাটিং করার পরও লিটন দাসকে গঞ্জনার শিকার হতে হবে কেন? আমি এবার আশ্চর্য হয়ে দেখলাম লেখক হিসেবে খ্যাতিমান একজন, যার লেখার পাঠক মূলত: ওপার বাংলায়ই বেশি তিনিও ভারত এবং শেষে লিটনকে অযথা এক হাত নিতে কসুর করেননি। এভাবেই সমাজের সব অংশে এখন এই ব্যধি ছড়িয়ে পড়েছে। 

গতকালকের ফাইন্যাল ছিল অসাধারণ, অবিশ্বাস্য । জিততে জিততে হেরে যাওয়া সাউথ আফ্রিকার জন্য মনটা খারাপ হতে বাধ্য। এই পরাজয় বীরের পরাজয়। হার মানা হারের এক দুর্দান্ত উদাহরণ। বিশেষ করে সূর্য কুমার যাদব যদি ওই ক্যাচটি ধরতে না পারতেন আজ বাংলাদেশের একটি চিহ্নিত মহলে আনন্দের ঢেউ বয়ে যেতো। 
সাপোর্ট আপনি যে কোন দলকেই করতে পারেন কিন্তু ঘৃণা করার একটা লিমিট থাকা উচিৎ। ঘৃণা বা বিদ্বেষ কতটা গভীরে পৌঁছেছে আমার ধারণা নীচের পয়েন্টসগুলো পড়লেই তা টের পাবেন : 

ওর নাম সূর্য কুমার তাই ওর অসাধারণ ক্যাচটি আসলে ছয় হয়েছে।

ওর নাম পান্ডিয়া তাই ওর বলগুলো নো বল হয়েছিল।

ওর নাম বিরাট তাই ওর রান আসলে আইসিসি'র তোফা।

কাল যে ভারত জিতেছে তার কারণ মাঠের খেলা নয় গ্যালারির সাধু সন্ন্যাসীদের দেয়া ফুঁ ও দোয়া।

যে কোন জাতির মাথা খারাপকে উপেক্ষা করে কাল ভারত না জিতলে বাংলাদেশী বাঙালি হিসেবে আমরাই হেরে যেতাম।

অভিনন্দন টিম ইন্ডিয়া

দুর্দান্ত ফাইনালের জন্য সাউথ আফ্রিকাকেও শুভেচ্ছা ভালোবাসা। আমরা যেন ভুলে না যাই ক্রিকেট দিনশেষে একটি খেলা মাত্র। আর জাতিগত বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক চিরকালের বন্ধন। 

এএইচ