আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সরদার হাকিম তার ৮ সহযোগী সহ আটক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:০২ পিএম, ১ জুলাই ২০২৪ সোমবার
রাজধানীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সরদার আব্দুল হাকিম ও তার প্রধান সহযোগী সোহাগসহ ৮ জন দুর্ধর্ষ ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এসময় তাদের নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, একটি খেলনা পিস্তল ও ডাকাতির সরঞ্জামাদি উদ্বার মূলে জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বেশকয়েকটি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ফলে অত্র অঞ্চলের মানুষের জানমাল ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিসহ জনসাধারণের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। র্যাব-৮ ও র্যাব-১০ এর পৃথক যৌথ দল রাজধানীর দক্ষিন কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বরী টোল প্লাজা ও বরিশালের বাকেরগঞ্জ এলাকায় পৃথক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। র্যাব-১০ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এম. জে. সোহেল এই প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, বরিশালের বাকেরগঞ্জের মহেশপুর এলাকায় একটি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্যরা বরিশাল, পটুয়াখালী, কুয়াকাটার কয়েকটি এলাকায় পর্যায়ক্রমে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ডাকাত দলের সরদার আব্দুল হাকিমের বসত ঘরে অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার রাতে র্যাব-৮ ও র্যাব-১০ এর যৌথ দল বরিশালের বাকেরগঞ্জ এলাকায় ডাকাত সরদারের বসত ঘরের নিকট উপস্থিত হলে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টাকালে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার আব্দুল হাকিম (৪৮)সহ তার সহযোগী মিজান চৌকিদার (৪০) , মোঃ রহিম হাওলাদার (৪০)কে আটক করা হয়।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ, কাউনিয়া, মহেশপুর, পটুয়াখালীর রাঙাবালি, বরগুনার আমতলী এলাকায় তাদের গ্রামের বাড়ি বলে জানিয়েছে র্যাব। র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মতে রাজধানীর দক্ষিন কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বরী টোল প্লাজা এলাকায় অপর একটি ঝটিকা অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের অন্যতম প্রধান সহযোগী মোঃ শাওন ইসলাম সোহাগ (২৪), মোঃ রাজা খলিফা (২৫), মোঃ নাসির হাওলাদার (৪০), মোঃ কালাম হোসেন (৩৫) ও মোঃ সেলিম মাতবর (৫০)কে আটক করা হয়। এসময় তাদের নিকট থেকেব ১টি খেলনা পিস্তল, বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃজেলা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। এই দলের সদস্য সংখ্যা ১০/১৫ জন। আটক আব্দুল হাকিম ওই ডাকাত দলের সরদার এবং গ্রেফতারকৃত শাওন ইসলাম সোহাগ তার অন্যতম প্রধান সহযোগী। এম. জে. সোহেল জানান, আটকরা দীর্ঘদিন যাবৎ আব্দুল হাকিম ও সোহাগ এর নেতৃত্বে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা এবং মুন্সিগঞ্জ, মাদরীপুর, ঢাকায় বাসা, অফিস, গ্যারেজসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ডাকাতি করে আসছিল। এই ডাকাত চক্রের সদস্যরা মাঝে মধ্য দুটি গ্রুপ একত্রিত হয়ে বরিশালসহ আশপাশ এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল বলে স্বীকার করেছে।
র্যাব-১০ এর সহকারী পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতারকৃত আব্দুল হাকিম এবং সোহাগ এর নেতৃত্ব ও পরিকল্পনায় প্রথমে দলের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়ি/অফিস/গ্যারেজসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ রেকি করে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক টার্গেট নির্ধারণ করতো। পরবর্তীতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দলের কিছু সদস্য টার্গেটকৃত বাসা/অফিস/গ্যারেজসহ অন্যান্য স্থাপনার বাহিরে পাহারা দিতো এবং অন্যান্য সদস্যরা সুড়ঙ্গো করে অথবা জানালার গ্রিল কেটে অথবা দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করতো। এসময় দলের কিছু সদস্য সেখানে অবস্থানরতদের অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে রাখতো, নির্যাতন করতো এবং অন্য সদস্যরা নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী সংগ্রহ শেষে একত্রে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতো। গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতির অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতো বলে জানা যায়।
তিনি জানান, বিভিন্ন মামলায় তারা কারাভোগের সময় কারাগারে থাকা অন্যান্য আন্তঃজেলা ডাকাতদের সাথে তাদের পরিচয় হয় এবং সেখানে তাদের কাছ থেকে ডাকাতির বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করতো। পরবর্তীতে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে রপ্তকৃত কৌশল ব্যবহার করে ডাকাতি করতো ।
র্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক জানান, আটক আব্দুল হাকিম একজন দুর্ধর্ষ পেশাদার ডাকাত। সে বিগত ২০/২২ বছর যাবৎ ডাকাতির সাথে জড়িত। সে অল্প সময়ে অধিক অর্থ লাভের আশায় নিজেই ১০/১৫ জনের আন্তঃজেলা একটি ডাকাত চক্র গড়ে তোলে। তার নির্দেশে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, জালিয়াতি ও ডাকাতি সংক্রান্তে ১০টি মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
র্যাব সূত্র বলছে, গ্রেফতারকৃত সোহাগ পেশায় একজন গাড়ী চালক। সে এই ডাকাত দলের সরদার গ্রেফতারকৃত আব্দুল হাকিম এর অন্যতম প্রধান সহযোগী। এছাড়াও সে ওই ডাকাত দলে যোগদানের পূর্বে অত্র অঞ্চলে বিভিন্ন দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত সরদার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মারামারি ও ডাকাতি সংক্রান্তে ৮টি মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত মিজান পেশায় একজন গাড়ির হেলপার ও গ্রেফতারকৃত রহিম একজন ব্যবসায়ী। বাকিরা এই ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা এই ডাকাত দলের সরদার আব্দুল হাকিম এর মাধ্যমে ডাকাতি পেশায় জড়িত হয়। তারা আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতো বলে স্বীকার করেছে।
এম. জে. সোহেল জানান, আটককৃত কামাল, রাজা, নাসির ও সেলিম এই ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য। তারা সোহাগের মাধ্যমে এই ডাকাত দলের সাথে যুক্ত হয়। গ্রেফতারকৃত কামাল এর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মারামারি ও ডাকাতি সংক্রান্তে ৮টি মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে। এছাড়াও রাজা, নাসির ও সেলিমের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও মারামারি সংক্রান্তে একাধিক মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় তারা বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।