সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বাড়ির অবস্থা জানতে পরিদর্শক নিয়োগের আদেশ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৩৭ পিএম, ৪ জুলাই ২০২৪ বৃহস্পতিবার
ঢাকার গুলশানে কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বাড়ির প্রকৃত অবস্থা জানতে পরিদর্শক নিয়োগের আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত।
ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আলমগীর আল মামুন গত ৯ এপ্রিল দুই পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দিলেও সম্পূর্ণ লিখিত আদেশ পাওয়া যায় বুধবার।
বিচারক আদেশে বলেছেন, এ মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তির স্বার্থে ওই বাড়ির প্রকৃত অবস্থা জানা দরকার। সেই কারণে একজন আইনজীবীকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করা হবে এবং তিনি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
আদালতে বাদীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত, চিত্তরঞ্জন বল সুশান্ত বসু, ও দীপঙ্কর ঘোষ। আদালতের আদেশের বিষয়টি আইনজীবী দীপঙ্কর ঘোষ সাংবাদিকদের জানান।
বছর কয়েক আগে দখল হয়ে যাওয়া পৈত্রিক বাড়ি ফিরে পেতে মামলা করেছিলেন জনপ্রিয় এই কথা সাহিত্যিকের দুই সন্তান, ছেলে ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ ও মেয়ে সিমিন ওয়ালীউল্লাহ।
সেইসাথে মামলা চলাকালে বাড়ির পরিস্থিতি জানতে, একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের আবেদন করেছিলেন তারা।
১৯৭১ সালে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করার সময়, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই মৃত্যু হয় বাংলার অন্যতম এই কথা সাহিত্যিকের।
তখন তার স্ত্রী আন-মারি ওয়ালীউল্লাহ (আজিজা নাসরিন) ছিলেন ফরাসি নাগরিক এবং তাদের দুই সন্তান ছিলেন অপ্রাপ্ত বয়স্ক।
যেকারণে এক বিঘা দুই কাঠা জমি এবং তার ওপর দুই তলা ভবনের সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য আন-মারি তার স্বামী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর মামাতো ভাই ও তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠজন কে জেড ইসলামকে আইনীভাবে দেখাশোনার দায়িত্ব দেন।
পরবর্তীতে ছেলে-মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে কে জেড ইসলামের বরাবরে নতুন আরেকটি আম-মোক্তারনামা দেওয়া হয়। সেই সূত্রে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়ে কে জেড ইসলাম ওই বাড়িতেই পরিবারসহ থাকতেন। আন-মারি ও তার দুই সন্তান ঢাকায় এলেও কে জেড ইসলামের সঙ্গেই ওই বাড়িতে উঠতেন।
১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই আন-মারি মারা যান। তার মৃত্যুর আগেই মায়ের সঙ্গে তার দুই সন্তানও ওই সম্পত্তিতে নাম জারি করে মালিকানাপ্রাপ্ত হন। তখনও আম-মোক্তারনামা সূত্রে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের চাচা কে জেড ইসলামের কাছেই ছিল।
এরপর মৃত মা আন-মারিকে বাদ দিয়ে সম্পত্তিটি নিজেদের নামে নামজারি করার উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল ফ্রান্স থেকে ঢাকায় আসেন ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ ও সিমিন ওয়ালীউল্লাহ।
কিন্তু সে সময় তারা জানতে পারেন জায়গা ও বাড়িটি কে জেড ইসলাম তার বড় ছেলে রাইয়ান কামালের কাছে আম-মোক্তারনামার শর্ত লংঘন করে হস্তান্তর করেছেন। তবে সম্পত্তিটি নিজের নামে নামজারি করতে রাজউকে গিয়ে ব্যর্থ হন রাইয়ান কামাল। এরপর রাজউকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেও নামজারির আদেশ পাননি তিনি।
এরপর ২০২০ সালে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ছেলে ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ ও মেয়ে সিমিন ওয়ালীউল্লাহ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দেড়শ কোটি টাকা মূল্যের গুলশানের ওই সম্পত্তির মালিকানা ও দখল বুঝে পেতে মামলা করেন। মামলাটি এখন ঢাকার নিম্ন আদালতে বিচারাধীন। জমিটি ফেরত পেলে সেখানে তারা একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করবেন বলেও মত প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, কে জেড ইসলামের ছোট ছেলে রাহাত কামাল বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলাটি করা হয়েছে।
লালসালু, চাঁদের আমবস্যা, কাঁদো নদী কাঁদোর মতো বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাসের রচয়িতা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তাঁর ইচ্ছে ছিলো ফরাসী স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে দেশেই থিতু হতে।
এজন্য ১৯৬৯ সালে গুলশানের ২৬ নম্বর রোডের বি ব্লকের ১০ নম্বর প্লটের দোতলা বাড়িটি কিনেছিলেন তিনি। স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কিছুদিন থেকেও গিয়েছিলেন সেখানে।
এসবি/