ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

সৌদিতে আগুনে পুড়ে নিহত নওগাঁর ৩ পরিবারে শোকের মাতম

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৩৪ এএম, ৬ জুলাই ২০২৪ শনিবার | আপডেট: ১০:৩৬ এএম, ৬ জুলাই ২০২৪ শনিবার

সৌদি আরবের রিয়াদে আগুনে পুড়ে চার বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ফারুক হোসেন (৪০), শুকবর রহমান (৪২) ও এনামুল হক (২৫) নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বাসিন্দা। ঘটনা জানার পর থেকে নিহতদের পরিবারের চলছে শোকের মাতম।

সৌদির রাজধানী রিয়াদের মুসাসানাইয়া নামক এলাকার একটি সোফা তৈরির কারখানায় বুধবার বিকালে এই ঘটনা ঘটে। 

নিহতদের মধ্যে ফারুক হোসেন আত্রাই উপজেলার তেজনন্দি গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে, সুখবর রহমান একই উপজেলা  দিঘা স্কুলপাড়া গ্রামের কবেজ আলীর ছেলে ও  এনামুল হক পাশের শিকারপুর গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে বলে জানা গেছে। 

একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে নিহতদের পরিবারগুলো এখন দিশেহারা। মৃতদেহগুলো ফিরিয়ে আনার মতো অর্থও তাদের নেই। মৃতদেহ কিভাবে দেশে আনা হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসী। 

শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় নিহতদের বাড়িতে গ্রামের লোকজন, পাড়া-প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষিরা ভীড় করে আছেন। গ্রাম জুড়েই যেন কান্না আর শোকের রোল পড়ে গেছে। 

উপজেলা তেজনন্দি গ্রামের ফারুকের স্ত্রী দুই সন্তানকে যেন কেউ থামাতেই পারছেন না। বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন।

ফারুকের ভাতিজা পিন্টু আলী জানান, চাচা ফারুক হোসেন গার্মেন্টসে কাজ করতেন। গত প্রায় ৬ বছর আগে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু যাবার পর থেকেই সেখানে নানা সমস্যার মধ্যে পরেন। প্রায় ৮ মাস হচ্ছে স্থায়ীভাবে সোফা তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ মোবাইল ফোনে জানতে পারেন কারখানায় আগুন লেগে ফারুক নিহত হয়েছেন।

উপজেলার দিঘা গ্রামের নিহত শুকবর আলীর জামাই বিদ্যুত হোসেন বলেন, তার শ্বশুর কৃষি শ্রমিক ছিলেন। গত আড়াই বছর আগে একমাত্র সম্বল ১১ শতক জায়গা বিক্রি এবং ধার-দেনার টাকায় সৌদি আরবে যান। এখন পর্যন্ত ধার-দেনার টাকা শোধ করতে পারেননি।

শুকবরের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে বড় ছেলে শামিম হোসেন প্রতিবন্ধি। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বাড়ির তিন শতক জায়গা ছাড়া আর কোন জমি নেই। কিভাবে শাশুড়ী, শ্যালোকদের নিয়ে চলবেন তা নিয়ে ঘোরবিপাকে পরেছেন। শ্বশুর শুকবর আলীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

শিকারপুর গ্রামের নিহত যুবক এনামুলের চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান, এনামুল গার্মেন্ট শ্রমিক ছিলেন। অনেকটা সুখের আসায় ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে কেবলমাত্র রোজগারের টাকায় ধার-দেনা শোধ করে ইটের বাড়ি নির্মাণ করছেন। বাড়ির কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিল তার। কিন্তু সেটা তার ভাগ্যে সইলনা। বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টা নাগাদ আগুনে পুরে মারা যাবার খবর আসে। তখন থেকেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা-মা পাথর হয়ে পরেছেন। কিছুতেই যেন তাদেরকে বুঝ দিয়ে থামানো যাচ্ছেনা।

এদিকে, মৃতদেহগুলো বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার মত অর্থ এসব পরিবারের হাতে নেই বলে জানান গ্রামবাসী। তাই সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় লাশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, সৌদি আরবে আগুনে পুরে তিনজনের নিহতের খবর পেয়েছি। তাদের পরিবারের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। এছাড়া নিহতদের মৃতদেহ দেশে ফেরাতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। 

এএইচ