সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের বিবৃতি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:১৬ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৪ শনিবার
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী চালানো সন্ত্রাসী তাণ্ডব ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ। শুক্রবার (২৬ জুলাই) কে. এইচ. মাসুদ সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা এ নিন্দা জানান।
নাগরকি সমাজের নেতৃবৃন্দ যুক্ত বিবৃতিতে দেশবাসীকে এই ধ্বংস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের বিষয়টি সামনে রেখে সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশব্যাপী সন্ত্রাসী তাণ্ডব ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বহু মূল্যবান প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কয়েকদিনের সন্ত্রাসী ঘটনায় পথচারী, ছাত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং আহত হয়ে যারা চিকিৎসাধীন তাদের সুস্থতা কামনা করছি।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এরই মধ্যে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জনগণের সমর্থন নিয়ে জাতি তা দ্রুত পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা দেশবাসীকে এই ধ্বংস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানাই।
তারা বলেন, গত ১৬ জুলাই থেকে এ নাশকতামূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, বাংলাদেশের মানুষের বহু আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেতু ভবন, মেট্রোরেল, বিআরটিএ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ডিজিটাল ডাটা সার্ভার স্টেশন, কারাগার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, নবনির্মিত এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করেছে। অস্ত্রলুটসহ জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ায় সহায়তা করেছে। জনজীবন বিপন্ন ও দুর্বিষহ করে তুলছে এবং কর্তব্যরত আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আক্রমণ ও হত্যার মাধ্যমে নিজেদের স্বরূপ উন্মোচন করেছে।
‘আমরা এ ধরনের দেশবিরোধী কার্যক্রমের নিন্দা জানাই। এ বিষয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও যারা বিদেশি হস্তক্ষেপ আহ্বান করে তাদের নেতিবাচক ভূমিকার নিন্দা জ্ঞাপন করছি। এই গোষ্ঠী ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যা, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবন, পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ ও নাশকতা চালিয়েছে। এরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বর্তমানের এই ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম।’ যোগ করেন তারা।
নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেন, এরই মধ্যে কোটা সংস্কারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করায় আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা বিশ্বাস করি এর মাধ্যমে ছাত্রদের মূল দাবি পূরণ হয়েছে। এখন ছাত্রদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হওয়ার সময়। একই সঙ্গে আমাদের সবার প্রত্যাশা, কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে যে সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পুনরায় অগ্নিসন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং জনজীবন বিপন্ন করেছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় এনে রাষ্ট্র, জাতীয় সম্পদ ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সামগ্রিক বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান, চিত্রশিল্পী রফিকুন্নবী, আবুল বারক আলভী, সাবেক মুখ্যসচিব আবদুল করিম, সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত, সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নূরুল হুদা, ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, অধ্যাপক নিসার হোসেন, ড. নিজামুল হক ভূইয়া, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো মোতাহার হোসেন, অধ্যাপক ড. জিনাত হুসা, অধ্যাপক ড. মো. মমিন উদ্দীন, অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম, অধ্যাপক ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, অধ্যাপক ড. আ জ ম শফিউল আলম, সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, মনজুরুল আহসান বুলবুল, ওমর ফারুক, শ্যামল দত্ত, শুকুর আলী শুভ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান, অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, বিচারপতি সামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক, চিত্রনায়ক আলমগীর, সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম শামীম চৌধুরী, নাট্যব্যক্তিত্ব ম হামিদ, অভিনেত্রী জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার এস এম মনজুরুল হক মঞ্জু, কাজী খায়রুল বাশার, আবুল কালাম হাজারী, নুরুজ্জামান, শাহাদত হোসেন, আবদুর রশিদ, মনিরুজ্জামান, একেএম এ হামিদ, মো. শামসুর রহমান, এইচ কে নাথ, অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. উত্তম বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. এ এস এম আমিন, অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
এসবি/