জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন আসছে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৩৯ এএম, ৩১ জুলাই ২০২৪ বুধবার
একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। সরকারের নির্বাহী আদেশে আজকের মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত-শিবিরকে বুধবারের (আজ) মধ্যে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এটি করা হবে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের পর সরকারের সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছেন। এ বিষয়ে গতকাল সরকারের সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী একটি বৈঠকও করেছেন।
ওই বৈঠকের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত শিবিরের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোটার আন্দোলনে ক্ষয়ক্ষতি ও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে বেশি। জামায়াত নিষিদ্ধ করা নিয়ে সরকার যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন দেবে বলেও জানান দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র।
উচ্চ আদালতের রায়ে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। দলটির ছাত্রসংগঠনের নাম ইসলামী ছাত্রশিবির। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর এই আপিল খারিজ করে দেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।
জানা গেছে, এর আগে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য বিভিন্ন সংগঠনকে নিষিদ্ধ করলে সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেই করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তেও সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখা থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এক কর্মকর্তা জানান, এই ধরনের দলকে নিষিদ্ধের অভিজ্ঞতা আগে নেই। তবে এটি আমাদের মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অনুবিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। যেহেতু এটি সরকারের সিদ্ধান্ত, শুধু মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং সে সময় দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থান আর পালটা অভ্যুত্থানের পালাবদলে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান।
১৯৭৯ সালের মে মাসে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে দলটিকে নিবন্ধন দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলে। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করে। দলটির বিরুদ্ধে সে সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে।
এএইচ