বারবার দাবি পরিবর্তন
অবশেষে `অরাজনৈতিক` মোড়ক খুলে বিএনপি-জামায়াতের সরকার পতনের কর্মসূচী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৪৪ এএম, ৪ আগস্ট ২০২৪ রবিবার | আপডেট: ১০:৪৫ এএম, ৪ আগস্ট ২০২৪ রবিবার
এটা কোটা সংস্কার আন্দোলন! এটা কি অরাজনৈতিক আন্দোলন! এটা কি সাধারণ মানুষের আন্দোলন! অরাজনৈতিক দাবি করলেও নিজেদের অবস্থান থেকে একেবারে ইউটার্ন নিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের খোলস পরা এই রাজনৈতিক ছাত্র নেতারা। কোটা সংস্কারের নামে বারবার নিজেদের দাবি পরিবর্তন করে শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের প্রেশক্রিপশন অনুসারে সরকার পতনের ডাক দিল 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নাম ব্যবহার করা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম।
যখন সরকার একের পর এক তাদের দাবি মেনে নেয়ার মাধ্যমে এই আন্দোলন তার উদ্দেশ্য হারাচ্ছে, তখনই আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখতে অযৌক্তিক সরকার পতনের ডাক। মূলত সরকার যেনো কখনই তাদের সব দাবি পূরণ করতে না পারে এমনভাবেই গত ১ জুলাই থেকে দাবি পরিবর্তন করে এসেছে এই রাজনৈতিক কর্মীরা।
শুরু থেকেই নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে সমন্বয়ক হয়ে যাওয়া নাহিদ এবার শহীদ মিনার থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানালেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাহিদ ইসলামকে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সচিব হলেও মূলত নুরুল হক নুরের সঙ্গে একত্রে ছাত্র সংগঠনটি যাত্রা শুরু করেন। আন্দোলনের জন্য ঘোষিত প্রাথমিক সমন্বয়কদের মধ্যে ২৩ জন ছিলেন নুরুল হক নুরের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যিনি ইসরাইলের সংযোগে তীব্র সমালোচিত হন বাংলাদেশে। সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ ভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন নুরুল হক নুর। যা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে, তার শিষ্যদের এই আন্দোলনের শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিলো সরকার পতনের ডাক দেয়া।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, বারবার দাবি পরিবর্তন করে সরকার ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য জামায়াত-বিএনপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করে গেছেন অধিকাংশ সমন্বয়কেরা। এর মধ্যে অরাজনৈতিক হিসেবে কাজ করে যাওয়া সমন্বয়কের অধিকাংশরাই ইতোমধ্যে এই প্লাটফর্ম থেকে বিদায় নিয়েছেন। আছেন শুধু বিএনপি, জামায়াত ও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট নুরুল হক নুরের শিষ্যরা। তাদের লক্ষ্যই ছিলো সরকার পতনের এক দফা দাবি তুলে বিশৃঙ্খলা তৈরি।
শুরু থেকেই এই আন্দোলন ছিলো ১ দফা দাবি নিয়ে। সেখানে 'এক দাবি, কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না'। আদালতে চলমান মামলা নিয়ে নির্বাহী বিভাগ ও সরকারকে দায়ী করে চলে আন্দোলন। পরবর্তীতে আদালত থেকে কোটা পুনর্বহালের রায় বাতিলের ঠিক আগের দিন আন্দোলনের দাবি পরিবর্তন হয়ে বলা হয় 'কোটা সংস্কার করতে হবে'। পরবর্তীতে আদালতের নতুন রায়ের তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হলেও তারা সেটি না মেনে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পেশ করতে চলে যান। সেখানে আবার অন্য দাবি করে বলা হয় সংসদে কোটা সংস্কারের জন্য বিল পাশ করতে হবে। এভাবেই বার বার দাবি পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য কাজ করে যান সমন্বয়কেরা। এমনকি নিজেদের আন্দোলনের প্লাটফর্মে এ সময় থেকে তারা যুক্ত করেন ছাত্রদলের অ্যাক্টিভিস্ট ও কর্মীদের।
তাদের প্রথম রাজনৈতিক স্লোগানটি আসে ১৫ জুলাই। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উস্কানি প্রদান করা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লোগান প্রদান করা হয় 'তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার'। রাত্রে রেকর্ডকৃত ভিডিওতে শুধু এই স্লোগান শোনা যাওয়ায় সমালোচনার মুখে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীই আন্দলনের এই বার্তাকে প্রত্যাহার করতে শুরু করেন। এমন অবস্থায় সকালে নিজেদের স্লোগান পরিবর্তন করে বলা হয় ''তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার'। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এই স্লোগান নিয়েও নিজেদের অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে দাবি করেন বিএনপি-জামায়াত এক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করা এই রাজনৈতিক কর্মীরা। ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের পেছনেও পার্শ্বভূমিকা রাখেন তারা।
১৫ তারিখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহতের সম্ভাবনা তৈরি হলে হলগুলো যখন খালি করার নির্দেশনা প্রদান করা হয় তখনও কর্মসূচি প্রত্যাহার না করে এবং আলোচনার কোন সম্ভাবনা খোলা না রেখে আন্দোলন চালিয়ে যায় তারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৬ তারিখ থেকেই এই সংঘর্ষে সরাসরি অংশ নিয়ে হত্যাযজ্ঞ ও হামলা শুরু করে ছাত্রদল ও শিবির। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন থেকে এর পাল্টা উত্তর দিতে গেলেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় শিক্ষার্থীদের। দেশ জুড়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডারগণ আশ্রয় নেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে। এভাবেই ১৭-১৯ তারিখ পর্যন্ত এই সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার লক্ষ্য নিয়েই চলে তাদের কার্যক্রম। যার মূল লক্ষ্য ছিলে সরকার পতনের দাবি উত্থাপনের জন্য একটি প্রেক্ষাপট তৈরি। অবশেষে সাধারণ মানুষকে রাজপথে ডেকে তাদের সেই দাবিই উত্থাপন করা হলো শহীদ মিনারে। যেই দাবি উত্থাপনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন তাদের নেতা তারেক রহমান।
এমএম//