ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

এশিয়ায় প্রথম থাইল্যান্ডে এমপক্সের নতুন প্রাণঘাতী ধরন শনাক্ত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২১ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০২৪ শুক্রবার

থাইল্যান্ডে মাঙ্কিপক্স বা এমপক্সের নতুন প্রাণঘাতী ধরনের সংক্রমণ শণাক্ত হয়েছে। এশিয়ার ভেতরে এমপক্স ধরা পরার ঘটনা এটিই প্রথম। আর আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে এমপক্স শনাক্ত হওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা এটি।

থাইল্যান্ডের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ বলছে, এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তি একজন ইউরোপিয়ান, যার বয়স ৬৬ বছর। তিনি গত ১৪ই অগাস্ট আফ্রিকার একটি দেশ থেকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে পৌঁছান। আফ্রিকান ওই দেশটির নাম জানা যায়নি।

পরদিন তার দেহে এমপক্সের কিছু লক্ষণ দেখা দিলে তিনি সাথে সাথে হাসপাতালে যান। তখন জানা যায় যে তিনি এমপক্সের নতুন ধরন ‘ক্লেইড ওয়ানবি’ তে আক্রান্ত হয়েছেন।

থাইল্যান্ডে অবতরণ করার পর মোট ৪৩ জন ওই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলো। তাদের সবাইকে এখন ২১ দিনের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

বিশ্বের মোট ৪২টি দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে থাইল্যান্ড। তাদের থাইল্যান্ডে আসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

মূলত, গত বছর গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে অন্তত ৪৫০ জন মানুষ এমপক্সে মারা গেছে।

এরপর কঙ্গো থেকে এটি আশেপাশের আরও কয়েকটি দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন– বুরুন্ডি, কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও উগান্ডা। এসব দেশে আগে কেউ এমপক্সে আক্রান্ত হয়নি।

ক্লেইড ওয়ানবি শুরুতে কঙ্গোর পূর্ব দিকে শনাক্ত হয়েছিলো। কিন্তু এখন তা সীমান্তবর্তী ও আশেপাশের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে।

এক সপ্তাহ আগে এশিয়া মহাদেশের বাইরে ক্লেইড ওয়ানবি সর্বপ্রথম ধরা পড়ে সুইডেনে। যে ব্যক্তির দেহে এটি শনাক্ত হয়, তিনিও সম্প্রতি আফ্রিকার কোনও দেশ থেকে সুইডেনে গিয়েছিলেন বলে জানায় দেশটির জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এবার এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে প্রথম এমপক্সের ক্লেইড ওয়ানবি ধরনের সংক্রমণ ধরা পড়লো।

ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ, যেমন– যৌন সম্পর্ক, গায়ে গায়ে লাগা, মুখের কাছে গিয়ে কথা বলা বা নিশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে এমপক্স ছড়ায়।

তবে আফ্রিকার দিকে এমপক্সের নতুন সংক্রমণের বিস্তার ও এর উচ্চ মৃত্যু হার বিজ্ঞানীদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাই, আফ্রিকার কিছু অংশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও।

এমপক্স কী এবং এর লক্ষণগুলো কী?

গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় ভাইরাস হলেও এমপক্স সাধারণত অনেক কম ক্ষতিকারক।

প্রথমে এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়।

এই রোগে আক্রান্তদের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলা, পিঠে এবং পেশিতে ব্যথা।

আক্রান্ত ব্যক্তির একবার জ্বর উঠলে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশসহ শরীরের অন্যান্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে।

অত্যন্ত চুলকানো বা ব্যথাদায়ক এই ফুসকুড়িগুলো পরিবর্তন হয় এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে স্ক্যাব বা গোল গোল পুরু আস্তরে পরিণত হয়ে শেষে পড়ে যায়। এর ফলে দাগ সৃষ্টি হতে পারে।

সংক্রমণের ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এটি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যেতে পারে।

তবে ছোট শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য কিছু ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মারাত্মক।

এর আক্রমণের কারণে গুরুতর ক্ষেত্রে মুখ, চোখ এবং যৌনাঙ্গসহ পুরো শরীরে ক্ষত তৈরি হতে পারে।

এমপক্স কীভাবে ছড়ায়?

এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা বা শ্বাস নেয়ার মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে এটি একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে।

ভাইরাসটি ফাটা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

ভাইরাসে দূষিত হয়েছে এমন জিনিস যেমন বিছানা, পোশাক এবং তোয়ালে স্পর্শের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে।

বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির মতো কোনো প্রাণী যদি এতে সংক্রমিত হয় আর কেউ যদি ওই সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে বেশি কাছাকাছি আসে তবে তিনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

২০২২ সালের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।

কঙ্গোর বর্তমান প্রাদুর্ভাবের বড় একটি কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।

এমপএক্সের কোনো টিকা আছে?

এমপএক্সের টিকা আছে, তবে যারা ঝুঁকিতে আছে বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকছে কেবল তারাই এটি পেতে পারে।

তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, যাদের প্রয়োজন তাদের সবার কাছে টিকা পৌঁছাবার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নেই।

এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত না হলেও জরুরি ব্যবহারের জন্য এমপক্সের টিকাগুলো দেয়ার জন্য সম্প্রতি ওষুধ প্রস্তুতকারকদের নির্দেশ দিয়েছে ডব্লিউএইচও।

আর এখন যেহেতু আফ্রিকার সিডিসি মহাদেশব্যাপী ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা’ ঘোষণা করেছে, আশা করা যায় এর প্রতিক্রিয়ায় সরকারগুলো আরও ভালভাবে সমন্বয় করতে সক্ষম হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চিকিৎসা সরবরাহ এবং সহায়তার প্রবাহকে সম্ভাব্য পরিমাণে বাড়াবে।

বৈশ্বিক কোনো পদক্ষেপ ছাড়া বর্তমান প্রাদুর্ভাব মহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ রয়েছে।

এশিয়া এবং আফ্রিকার মতো যে দেশগুলোতে সাধারণত এই ভাইরাস দেখা যায় না এমন প্রায় ১০০টি দেশে এটি ছড়িয়ে পড়ে। 

কোন কোন দেশে এমপক্স ছড়িয়ে পড়েছে?

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মতো পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট সমৃদ্ধ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এমপক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

এই অঞ্চলগুলোতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হয় আর শত শত মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা।

বর্তমানে অনেকগুলো দেশে বিভিন্ন প্রাদুর্ভাব একইসঙ্গে দেখা যাচ্ছে- বিশেষ করে কঙ্গো এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে।

রোগটি সম্প্রতি বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, উগান্ডা এবং কেনিয়াতে দেখা গেছে যা সাধারণত সেখানে দেখা যায় না।

মোটাদাগে এমপক্সের দুটি ধরন রয়েছে - ক্লেড ১, যা সাধারণত আরও গুরুতর হয় এবং ক্লেড ২।

ক্লেড ১ ভাইরাস – কয়েক দশক ধরে কঙ্গোতে বিক্ষিপ্ত প্রাদুর্ভাবের কারণ ছিল এবং এখন ছড়িয়ে পড়া ধরনটিও এটি।

ক্লেড ১’র কিছু ধরনে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/