ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

‘আবু সাইদের মতো মরবো, তাও আন্দোলনে যাবো’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০৭ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বুধবার | আপডেট: ০৩:১৬ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বুধবার

দরিদ্র পিতার কষ্ট দূর করার স্বপ্ন পূরণ হলো না মেধাবী কিশোর হাসাইনের। স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে অনেক বড় হবে। চাকরি করে বাবার অভাবের সংসারের দুঃখ ঘোচাবে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে ঘাতকের নির্মম বুলেটে স্বপ্ন ভেস্তে গেলো ১২ বছরের কিশোর হাসাইনের। 

মো. হাসাইন মিয়া স্থানীয় লোকনাথ রমনবিহারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ যাত্রাপাশা ঠাকুরবাড়ির বাসিন্দা হাসাইন ছয় ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বাবা মো.সানু মিয়া পেশায় সবজি বিক্রেতা এবং মা মাজেদা আক্তার গৃহিনী। 

ভ্যানগাড়িতে ফেরি করে সবজি বিক্রি করেন সানু। স্ত্রী, পুত্র-কন্যাদের নিয়ে সানু মিয়ার অভাবের সংসার। তাই বড় ছেলে জাহেদ মিয়া কুয়ারপাড় মাদরাসায় পড়লেও স্বপ্ন ছিল হাসাইনকে নিয়ে। মেধাবী হাসাইন একদিন বড় হবে, সংসারের দুঃখ ঘোচাবে। 

হাসাইনের বাবা সানু মিয়া বলেন, ‘হাসাইন বলত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নাকি আবু সাইদ নামে একজন শহীদ হয়েছে। তাই এর প্রতিবাদ করতে হবে। বৈষম্য দূর করতে হবে। লেখাপড়া শেষে চাকরি নিতে হবে। দরকার হলে আবু সাইদের মতো মরবো। তাও আন্দোলনে যাবো।’

বাবা-মায়ের নিষেধ সত্বেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে প্রতিদিনই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে হাসাইন। হাসাইনের স্বপ্ন ছিল পরিবারের দুঃখ ঘুচাবার। আজ সে নিজেই পরিবারের কাছে চির দুঃখের স্মৃতি হয়ে গেলো।

হাসাইনের মা সাজিদা আক্তার বলেন, আমরা ছেলের এই কথাগুলো সেভাবে আমলে নেইনি। মিছিলে গিয়ে গুলিতে মরতে পারে-এটা কল্পনাও করতে পারিনি। ছেলের কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। 

হাসাইনের বড় ভাই জাহেদ মিয়া বলেন, ‘মাথায় লাল কাপড় ও ছোট্ট একটি লাঠি হাতে হাসাইন মিছিলে যোগ দেয়। পরে তার হাতে একটি ছোট্ট ঢালও দেখা যায়।’ 

লোকনাথ রমনবিহারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘হাসাইন মেধাবী ছাত্র ছিল। শুধু লেখাপড়া নয়, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সে ছিল পারদর্শী। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, লেখাপড়া শেষে হাসাইন বড় কিছু হবে। কিন্তু ঘাতকের বুলেট ফুল ফোটার আগেই নিভিয়ে দিল সুন্দর একটি স্বপ্ন। তার স্মৃতিকে ধরে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’ (বাসস)

এএইচ