বনের হারুনের যত কুকীর্তি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:১৫ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বুধবার | আপডেট: ০৬:১৯ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বুধবার
ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদের দুর্নীতি ও অপকর্মে অতিষ্ট এলাকাবাসী। এলাকাবাসী বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট এলাকাবাসী লাঠি হতে নিয়ে বিক্ষোভও করেছেন। প্রতিবাদে ফুসে উঠেছেন এলাকাবাসী। বিচারের আওতায় আনার দাবি তাদের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বনায়নের নামে তাদের পৈতৃক বাড়িতে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। নিজেদের জমিতে ঘর করতে গেলেও চাঁদা দিতে হয়। নইলে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয়।
ভুক্তোভোগীরা জানান, সঠিক কাগজপত্র থাকার পরও তাদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করা হচ্ছে। হবিরবাড়ির বনবিট অফিসের রেঞ্জার হারুন অর রশিদের একের পর এক মিথ্যা মামলা ও চাঁদাবাজিতে তারা অতিষ্ট।
রফিক নামে একজন বাসিন্দা একুশে টিভিকে বলেন, ‘আমার এখানে সিএস আছে, ডিআরএস আছে। তারপরও বলছে ১৫ হাজার টাকা দিলে ঘর করতে পারবেন। না হলে পারবেন না।’
রহিমা নামের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘ঘর করতে গেলেই বলে টাকা পয়সা লাগবে। কিচু লোকের মাধ্যমে এই কাজগুলো করা হয় যেগুলো অমানবিক। কথা না শুনলে মামলা-হামলার ভয় দেখায়।’
মোবাইল ফোনে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন হবিরবাড়ির বন ও বিট অফিসের রেঞ্জার হারুন আর রশিদ। একুশে টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে?প্রমাণ নিয়ে তারপর দয়া করে আসবেন প্লিজ।’
বিক্ষোভে উপস্থিত বিভিন্ন পেশার মানুষ হারুন অর রশিদ ও তার লোকদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বক্তব্য তুলে ধরে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলো হলো- স্থানীয়দের ফল-ফসল, বাঁশ, সবজি আবাদের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের সুযোগ দেয়া; হুমকি, হয়রানিসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা; অবৈধ টাকা নেওয়া ছাড়া থাকার ঘর নির্মাণের সুযোগ দেয়া; স্থানীয়দের রেকর্ডকৃত জমি ও বন বিভাগের জমির সীমানা নির্ধারণ; সরকারের বন্দোবস্ত দেওয়া জমির নামজারির মাধ্যমে হস্তান্তরের সুযোগ রাখা; স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বনবিভাগের লোকদের মতবিরোধ হলে বনভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী করনীয় ঠিক করা।
স্থানীয় হাফেজি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকবছর আগে বনবিভাগের দাবিকৃত জমিতে একটি হাফেজি মাদ্র্রাসা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মাদ্রাসায় ছাত্রের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে আরেকটি ঘর নির্মাণের প্রয়োজন। কিন্তু রেঞ্জ কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং মামলার ভয় দেখান। অথচ স্থানীয় সাংসদ সব কিছু জেনে ওই মাদ্রাসার জন্য সরকারিভাবে ঢেউটিন বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছিলেন।’
সবকিছু ’ম্যানেজ’ করেন হারুন
এলাকাবাসীরা জানান, দুর্নীতি ও অপকর্মের দায়ে একবার চাকরিও গিয়েছিল হারুন অর রশিদ। কিন্তু উর্ধ্বতনদের ’ম্যানেজ’ করে ঠিকই আবার চাকরি ফিরে পান তিনি। এলাকাবাসী জানান, হারুন অর রশিদের অনেক টাকা। এই টাকা দিয়েই তিনি সব ম্যানেজ করেন। দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই অভিযোগও আলোর মুখ দেখেনি। ম্যানেজ করে ফেলেন হারুন।
টেন্ডার ছাড়াই বন বিভাগের ১০টি বড়গাছ কাটা
এর আগে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি এলাকায় রেঞ্জে অফিসের সামনে থেকে টেন্ডার ছাড়াই বিশাল আকারের বেশ কয়েকটি আকাশমনি ও কাঠালগাছ কেটে ফেলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। রেঞ্জ অফিসের উত্তর পাশে প্রায় ৫০ ফুট ইটের প্রাচীরসহ চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়। আর এ সুযোগে ওই স্থানের সারিবদ্ধ ৩০-৩৫ বছর বয়সী বেশ কয়েকটি আকাশমনি ও কাঠালগাছ কাটা হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গাছগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ড্রাইভার সুমন, চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা গিয়াস উদ্দিন ও লবনকোঠা গ্রামের জনৈক নাজমুল নামে তিন ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন।
রেঞ্জার হারুন অর রশিদের দাবি, বিভাগীয় বনকর্মকর্তার (ডিএফও) লিখিত অনুমতি নিয়েই ৮-১০টি গাছ কেটে অফিসের সামনে রাখা হয়েছে।
দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকের নামে মামলা
হারুন অর রশিদের দুর্নীতি ও অপকর্মের খবর একটি পত্রিকায় প্রকাশের পর ভালুকার ওই প্রতিনিধিকে ‘সাইজ’ করতে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বাদী হয়ে ওই সাংবাদিকের নামে ৫টি মামলা করেন। এটি গত বছরের ঘটনা। এর প্রতিবাদে সেসময় মানববন্ধনও করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
মানবন্ধনে স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে একজন বিট অফিসার মামলা দিয়ে সাংবাদিককে সাইজ করার ঘোষণা দিয়ে সম্পুর্ন বানোয়াট পাঁচটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে আমারা হতভম্ভ হয়েছি।
ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, ’মামলা দেওয়ার বিষয়টা বিট অফিসার দেখেন।’
উথুরা রেঞ্জে দায়িত্ব পালনকালেও বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী
হারুন অর রশিদ উথুরা রেঞ্জে দায়িত্ব পালনকালেও ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এলাকাবাসী তখন বিক্ষোভ করেন।
২০২২ সালে উথুরা রেঞ্জের অধীনে বনাঞ্চল থেকে চুরি হওয়া গাছ উদ্ধার করে সেগুলো নথিভূক্ত না করে উদ্ধারকৃত গাছ চোর চক্রের সঙ্গে দফারফা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার মতো অপকর্মে করতেন এই হারুন। এমন অসংখ্য অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে এলাকায়।
সেই সময়ও বনভূমি রক্ষার নামে চালাচ্ছে রমরমা বাণিজ্য চালাতেন হারুন। বনাঞ্চল এলাকায় বসবাসকৃত দখলীয় ভূমিতে অবস্থিত বাঁশের ঝাড় স্থানীয় লোকজনেরা সাংসারিক চাহিদার প্রয়োজনে বিক্রয় করলে ওই বাঁশ জব্দ করেন তিনি। পরবর্তীতে বাঁশকে পুঁজি করে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করেন।
২২ হাজার একর বনভূমি ছিল। সেটি ছয় হাজার একরে নেমে এসেছে। দখল, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালীদের নিয়মবহির্ভূতভাবে বরাদ্দ দেওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
কেআই//