দপ্তর ছেড়ে পালালেন দক্ষিণ সিটির সেই প্রধান প্রকৌশলী!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:০৮ এএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শুক্রবার
দপ্তর ছেড়ে পালিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান। বেশ কয়দিন ধরে বেশ আলোচনায় ছিলেন সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠ খ্যাত এই কর্মকর্তা।
সরকার পতনের কয়েকদিন পরেই বরখাস্ত হয়েছিলেন আশিকুর রহমান। তবু এই কর্মকর্তা গত ২ সেপ্টেম্বর বহিরাগত একদল লোক নিয়ে নগর ভবনে ঢোকেন। এরপর থেকে আগের মতোই নিজ দপ্তরে অফিস করে আসছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল বিএনপির কিছু স্থানীয় নেতাদের যোগসাজশে তিনি ফের সিটি কর্পোরেশনের ফিরে এসেছিল স্বপদে।
সরকারি কোনো আদেশ ছাড়াই গত সোমবার মিছিল নিয়ে বরখাস্ত হওয়া আশিকুরকে চেয়ারে বসান বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা ফুলেল শুভেচ্ছাও জানান এই প্রকৌশলীকে।
এ ঘটনায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দলটির সাবেক মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। বিএনপি নেতার এই ঘোষণা জানাজানি হলে আজ (বৃহস্পতিবার) নগর ভবন ছেড়ে পালিয়েছেন আশিকুর।
নগর ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার চেয়ারে বসানোর পর বরখাস্ত হওয়া প্রকৌশলী আশিকুর প্রতিদিনই অফিস করেছেন। অফিস চলাকালে তাকে পাহারা দিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলীকে নিয়ে বিবৃতির খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই আজ তিনি হুট করেই দ্রুত তার দপ্তর থেকে বেড়িয়ে গেছেন। কাউকে কিছু না বলেই দ্রুত দক্ষিণ সিটির তার অফিস থেকে পালিয়ে যান তিনি।
এদিকে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেন, আমার নাম ভাঙ্গিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যারা চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বসহ নানা অপকর্ম করছে আসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হলো।
একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বে তার নাম জড়িয়ে সংবাদ প্রচার বিশেষত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে জোরপূর্বক স্বপদে পুনর্বহালের পেছনে তার ইন্ধন রয়েছে… বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারেরও তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে নানাভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একটি গোষ্ঠি বা কতিপয় দুর্বৃত্ত আমার নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিভিন্ন মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, চাঁদাবাজি ও নগর ভবনের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসছে। এমনকি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে জোরপূর্বক পুনরায় বসানোর পেছনে আমার ইন্ধন রয়েছে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করে আসছে। এ বিষয়ে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ ধরনের অপকর্মে আমার ন্যূনতম কোন সম্পৃক্ততা নেই।
‘আমার নাম ভাঙ্গিয়ে একটি চক্র এমন অপ্রচার চালাচ্ছে। যারা আমার নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে, আমি তাদেরকে চিনি না। পাশাপাশি, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজিসহ যারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে, আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন প্রশাসনকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। বিএনপির নাম পরিচয় দিয়ে কোনো নেতা-কর্মীর এসব কর্মকাণ্ড জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানাচ্ছি।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আশিকুর রহমান ১৯৯৩ সালের ২৭ জানুয়ারি তৎকালীন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে সহকারী প্রকৌশলী (পুর) হিসেবে যোগদান করেন। পরে সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে খুব কম সময়ের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান। সর্বশেষ দুই বছর আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে যোগ্যদের পিছনে ফেলে বাগিয়ে নেন প্রধান প্রকৌশলীর পদটি।
২০১৫ সালে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোল সংক্রান্ত দুর্নীতিতে আশিকুর রহমানকে সিটি কর্পোরেশন থেকে সরিয়ে নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তখন তাকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানেও নানা অপকর্মে জড়িয়েছিলেন তিনি।
পরে ২০২১ সালের ৭ জুন আবার তাকে নগর ভবনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেন সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ১৩ আগস্ট স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের আবেদন করেন আশিকুর রহমান। তবে সেই আবেদন গৃহীত হয়নি। পরে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগে গুরুদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধের কথা উল্লেখ করে পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
কেআই//