জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন, নেতৃত্বে যারা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৪৫ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রবিবার
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সংহতি ও প্রতিরোধের চেতনায় বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হয়েছে। মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া, কমিটির মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন সামান্তা শারমিন।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান নব গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।
৫৬ সদস্যের এ কমিটির অন্য সদস্যগণ হলেন, আরিফুল ইসলাম আদীব, সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরি, সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, অনিক রায়, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আব্দুল্লাহ আল আমিন, হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়ক চাকমা, সানজিদা রহমান তুলি, আবু রায়হান খান, মাহমুদা আলম মিতু, অলিক মৃ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, মো. আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল, আতাউল্লাহ, এস. এম. শাহরিয়ার, মানজুর- আল- মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, সালেহ উদ্দিন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান, মো. আব্দুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক মুজাহিদ, তানজিল মাহমুদ, আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, এস.এম. সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, কানেতা ইয়া লাম লাম, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির ও আকরাম হুসেইন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ও বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে ফ্যাসিবাদী রেজিমের বিরুদ্ধে একটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। সহস্রাধিক শহিদ ও আহত ছাত্র- জনতার ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মুক্ত হয়েছি এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সরকার গঠিত হয়েছে। এই অভ্যুত্থানের ঘোষিত লক্ষ্য ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এখনো দীর্ঘ রাজনৈতিক ও নীতি নির্ধারণের লড়াই দাবি করে।
বাংলাদেশের জনগণ ৪৭ সালের পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং এবারকার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে নিজেদের আকাঙ্ক্ষা বারবার ব্যক্ত করেছে। ১৯৯০ এর গণ-আন্দোলনও জনগণকে দীর্ঘমেয়াদে কোনো ফলপ্রসূ সমাধান বা বন্দোবস্ত জাতির সামনে হাজির করতে পারেনি। কিন্তু পূর্বেকার লড়াইগুলোর অভিজ্ঞতা আমাদের বলে, যখনই মুক্তিকামী জনতা কোনো একজন ব্যক্তি বা সমষ্টিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে, তখন জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি দেখা যায়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সরকার গঠিত হলেও পূর্বেকার ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনো জনগণের সাফল্যের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে সক্রিয়।
নিপীড়ক রাষ্ট্রযন্ত্রের ধ্বংসাবশেষ প্রতি পদে রাষ্ট্রের পুনর্গঠনকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজপথে নেমে আসা জনতাকে সংগঠিত করা, ৮ আগস্টে গঠিত সরকারকে যুগপৎ সহযোগিতা করা এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনা, তদুপরি জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে আমরা নাগরিক দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করছি।
আমরা মনে করি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সংহতি ও প্রতিরোধের চেতনা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার শক্তি। এই নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীকে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে পূর্ণ বিজয় অর্জন করতে হবে। গণহত্যাকারীদের যথাযথ বিচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন, জনস্বার্থের প্রতি সংবেদনশীল নীতি নির্ধারণ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পূর্বশর্ত।
জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু করছে। অচিরেই সকল মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে আমরা আলোচনা করবো। তৃণমুল পর্যন্ত এ কমিটির বিস্তৃতি ঘটানোর মাধ্যমে আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাব।
আহ্বায়ক কমিটির প্রাথমিক কাজ :
এক. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা।
দুই. ছাত্র-জনতার উপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ করা।
তিন. রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি করা।
চার. বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে আলোচনা, মত বিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচীর মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা।
পাঁচ. দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা।
ছয়. জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা।
সাত. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষপে গ্রহণ করা
আট. গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা।
উল্লেখিত কাজের পরিধি ও পদ্ধতি সাপেক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে নিজ নিজ এলাকায় সংঘবদ্ধ থাকার আহ্বান করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। অচিরেই জেলা ও উপজেলা, এলাকাভিত্তিক আলোচনা ও মত বিনিময় সভা আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা রক্ষার চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে।
কেআই//