স্বৈরাচারের পতন হয়েছে কিন্তু ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে: তারেক রহমান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৩১ এএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সোমবার
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত আছে এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তা চলমান থাকবে।’
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লাখো মানুষের সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। রোববার বিকেলে সাতক্ষীরার কলারোয়া হাইস্কুল মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার মামলায় ৭০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি'র প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব ৪ বছর কারাভোগ শেষে নিজ এলাকা সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আসলে স্থানীয় বিএনপি এই গণসংবর্ধনার আয়োজন করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি। অনেক কাজ এখনো বাকী রয়েছে, আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। এখন চেনা শত্রুর সাথে প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্রে ফাঁদে পা দিয়েছে দেশের কিছু রাজনৈতিক দল। তারা আপনাদের আশেপাশেই রয়েছে। তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকুন, নিজেদের বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে তাদের মোকাবেলা করুন।’
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারের পতন হয়তো হয়েছে কিন্তু ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। সকল ষড়যন্ত্রের বিষ দাঁত ভেঙে দিয়ে জাতীয়তাবাদী সকল শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রদর্শিত মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণের রাজনীতিই হবে বিএনপির রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা।
তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা সবাই গত ১৭ বছর ধরে শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে সীমাহীনভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। গত দেড় যুগ ধরে গুম খুন নির্যাতন, জমি-বাড়ী দখল, ব্যবসা নষ্ট করা থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। আজ শেখ হাসিনা ও তার দলবলকে কেমন অপমানজনকভাবে পালাতে হয়েছে সেটাও আপনারা দেখেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এটাও জানি আপনারাই আমের মৌসুমে সারা দেশে আপনাদের বাগান থেকে সর্বপ্রথম ক্ষীরসাপাতি, ল্যাংড়া আম দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। আপনাদের থেকে প্রায় ৬ হাজার মাইল দূরে থাকলেও আমি আমার অন্তর দিয়ে সবসময়ই আপনাদের দেখতে পাই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে দেশের আর সবার মতই আপনারাও স্বৈরাচারী হাসিনার দেয়া নিদারুণ কষ্ট আর যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। জেল, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছেন, প্রাণ খুলে কথা বলতে পারেননি। ঠিক মতো ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেননি। আওয়ামী চাঁদাবাজের অত্যাচারে এখানে বড় কোন শিল্প কারখানা কিছুই নাই, নেই বেকারদের চাকরি।
তারেক রহমান বলেন, এখানে আমের মৌসুমের সবচাইতে প্রথমে আম উৎপাদন হলেও আম সংরক্ষণ বা আমের রস কিম্বা আচার চাটনীর কোন কারখানা নেই। অথচ দেশে নাকি উন্নয়নের আর কিছু বাকী নেই।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি আপনারা নিজেদের শ্রম আর বুদ্ধি দিয়ে এখানে ছাদের জন্য অসাধারণ সুন্দর মাটির টালি তৈরি করেন, সেটা ইটালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানিও হয়, কিন্তু এগুলো আরো সামনে এগিয়ে নিতে কোন বড় কারখানা বানানোর চেষ্টা নেই সরকারের।’
তারেক রহমান আরও বলেন,‘আমাদের মা-বোনেরা যারা মাটির টাইলস বানান, সুযোগ পেলে তাঁরা আরও বিভিন্ন রকম কুটির শিল্প গড়ে তুলতে পারেন।’
তিনি বলেন, আর যাদের কিছু চিংড়ি বা মাছের ঘের আছে তারা সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকেন আকাশে কালো মেঘ দেখলেই, কখন বুঝি আজ থেকে ৭০ বছর আগে তৈরী বেড়িবাঁধ সামান্য বৃষ্টি বা প্লাবনেই ভেঙে যায়, মেরামতের জন্য টাকা লুটপাট ছাড়া আর কিছু হয় না। ফলে মাঠ লবনাক্ত হয়ে ফসল হয় না, আর ঘেরের মাছ ভেসে যায়, চাষি মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। পর্যটন ছাড়াও এত বড় সুন্দরবনের বিরাট সম্ভবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এর সামন্যই আমাদের কাজে লাগছে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে, প্রতিটি এলাকার সমস্যা আর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পিতভাবে আগামীতে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণে তার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য ও সদ্য কারামুক্ত নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শহিদুল আলম, সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দীন, এডভোকেট শাহানারা আক্তার বকুল, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক তারিকুল হাসান এবং আইনুল ইসলাম।
এএইচ