ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১

রোইং ফেডারেশন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ক্রীড়া উপদেষ্টার দপ্তরে 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৪০ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সোমবার

রোইং ফেডারেশনের অর্থ কেলেংকারীসহ নানা অনিয়মের বিষয় উল্লেখ করে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা এবং সচিবকে চিঠি দিয়েছে। রোববার  অনিয়মের নানা বিষয় যুক্ত করে উপদেষ্টা বরাবার ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলভার বিজয়ী খেলোয়াড় মাকসুদ আলম এ চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, ক্যাসিনো হোতা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কারের পরেও মোল্লা  মো. আবু কাওছার দাপটের সঙ্গে ছিলেন ক্রীড়াঙ্গণে। তিনি দীর্ঘ এক যুগ দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে। শুধু তিনিই রাজত্ব করেননি রোইং ফেডারেশনে। তার হাত ধরে ফেডারেশনে কার্যনির্বাহী কমিটিতেও স্থান হয়েছে র্দূর্ধষ সন্ত্রাসী গণপূর্তের টপ সিন্ডিকেট ঠিকাদার ও ভাগ্নে হাসান মোল্লাসহ অনেকে। 

গত ১৬ই জুলাই যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলন তুঙ্গে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হেলমেট পরা অবস্থায় পিস্তল হাতে গুলি চালাতে দেখা যায় ফেডারেশনের এই সদস্য হাসান মোল্লাকে। পিস্তল হাতে গুলি করার এমন একটি ছবিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। 

গত ৫ই আগস্ট যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটে তখন থেকই তারা লাপাত্তা। তবে তাদের সঙ্গে গা ঢাকা দেয় তৎকালীন সরকারের দলীয় ক্যাডারের ভূমিকা পালন করা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. খোরশেদ আলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ও ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, ফেডারেশনের অর্থ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কোষাধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দিন মন্টুসহ আরও বেশ কয়েকজন। 

সম্প্রতি ফেডারেশনে তাদের আনাগোনা বেড়েছে। আওয়ামী আমলের এসব সুবিধাভোগীরা বোল পাল্টে ফের সরব হচ্ছেন। এদের মধ্যে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী খোরশেদ আলম নিজেকে সার্চ কমিটির একজনকে কাছের লোক বলে দাবি করেন। তাদের কিছুই হবেনা বলে অধিনস্থদের আশ্বস্ত করছেন। সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দের দাবি দ্রুত ফেডারেশনের একাউন্ট বন্ধ করে ও নতুন পুরাতন মিলিয়ে ফেডারেশনে আহ্বায়ক কমিটি গঠন।

সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত রোইং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদে দুই তিন টার্ম বাদে সব সময়ই ছিলেন ৯৩ বছর বয়সী হাজী খোরশেদ আলম। নিজের পদ ধরে রাখার জন্য ইচ্ছা মতো ক্লাবের এফিলিয়েটেড করেছে। ৫৮টি ক্লাবের মধ্যে ১৫/২০টি ছাড়া কোনো ক্লাবেরই অস্তিত্ব নেই। অস্তিতহীন এসব ক্লাব একযুগেও কোনো খেলায় অংশও নেয়ার তথ্য নেই। শুধু তাই নয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গেইমে তার দুই ছেলে ও মেয়ের জামাই অংশ নিয়ে আর দেশে ফিরে আসেনি। 
গত কয়েক বছর আগে  ফেডারেশনের খেলোয়ার ও নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম মিঠুকে আমেরিকাতে একটি গেইমে অংশ নিতে পাঠায়। পরে খোরশেদ আলমের নির্দেশে সেখান থেকে পালিয়ে স্পেনে পাড়ি জমায় মিঠু। এখানেই শেষ নয় গত বছর  খেলোয়ার ও নির্বাহী সদস্য মারুফ খানকে ফিলিপাইনে পাঠিয়েছে। এমন আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে এই চক্রের বিরুদ্ধে। 

ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য মাকসুদ আলম জানায়, ১৯৯১ সালে টোডা সিটি জাপানে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক রোইং। এতে খেলোয়ার হিসেবে অংশ নেয় তার বড় ছেলেসহ চারজন। কিন্তু আদম পাচারের উদ্দেশ্যে অফিসিয়াল কর্মকর্তা দেখিয়ে নেয়া হয় আরও ২৬ জনকে। এদের মধ্যে তার ছেলেসহ ২৮ জনই ফিরেনি বাংলাদেশে। ১৯৯২ সালে কানাডায় ওয়াল্ড রোইং চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নিতে প্লেয়ার হিসেবে আমি ও সাধারণ সম্পাদকের ছোট ছেলে যাই। আমাদের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আর ৪ জনকে নেন। পরে ওই চার জন আর ফিরে আসেনি। ফেডারেশনের অপর  নির্বাহী সম্পাদক নাসির উদ্দিন চৌধুরী স্বপন বলেন, এতো কিছুর পরেও তাদেরকে রোখা যায়নি, ফেডারেশনে কোন খেলাধুলা না হলেও গত আগস্ট মাসেই সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম ও কোষাধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন মন্টু চেক বই এর ১৪টি পাতা ব্যবহার করে আড়াই লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। এই টাকা উত্তোলনে ইসির অনুমোদনের প্রয়োজন হলেও তোয়াক্কা না করেই তুলেছেন অর্থ। ইসি সভায় এ নিয়ে চরম উত্তেজনা হয়। তাকে দ্রুত হিসেব দেয়ারও আল্টিমেটামও দেয়া হয়। একইসঙ্গে পরবর্তীতে ইসির অনুমোদন ছাড়া কোন অর্থ উত্তোলন না করার জন্য কোষাধ্যক্ষকে নির্দেশ দেয় ইসি। তবে টাকা তুলতে স্বৈরাচার সরকার সমর্থক সদস্যদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এসব বিষয়ে ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, আমি  কোনো আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। তবে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. খোরশেদ আলম ও কোষাধ্যক্ষ মন্টু তাদের  ইচ্ছা মতো বিভিন সময় দফায় দফায় ইসির অনুমোদন ছাড়াই অর্থ উত্তোলন করেছেন। সর্বশেষ আমরা ফেডারেশনের অর্থ অনিয়মের বিষয়ে একটি তদন্ত একটি কমিটি করেছি। কিন্তু তারা কয়েকদফা সময় নিয়েও ইসি মিটিং-এ উপস্থিত না হয়ে একটি চিঠি দিয়ে দায় সারা হিসাব দিয়েছেন। তার ওই হিসাব আমি সঠিক বলে মনে করিনা। অভিযোগের বিষয় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম ও কোষাধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দিন মন্টু বলেন, আমরা কোনো আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। ক্রিড়া পরিষদে আমরা নিয়মিত হিসাব প্রদান করি।

/আআ/