নতুন করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় বৈরুতে ব্যাপক বিস্ফোরণ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:০৭ এএম, ৪ অক্টোবর ২০২৪ শুক্রবার
হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে লেবাননে আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বোমা হামলায় বৈরুত বিমানবন্দরের ঠিক বাইরে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
তাদের লক্ষ্য কী ছিল সেটি এখনও স্পষ্ট না। তবে রাজধানীতে বিমানবন্দরের এই দাহিয়েহ এলাকার সীমানা হেজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি।
অন্যদিকে হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে চালানো আক্রমণে লেবাননের দক্ষিণে দেশটির দুই সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তাদের সেনাবাহিনী।
আরও ২০টি শহর ও গ্রামকে খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এনিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে জানিয়েছে যে তাদের সেনারা সীমান্তের কাছে হেজবুল্লাহ যোদ্ধাদের হত্যা করেছে।
হিজবুল্লাহ বলছে, তারা সীমান্তের দুই দিক থেকে ইসরায়েলি সেনাদের নিশানা করেছে।
আক্রমণের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে লেবানিজ সেনাবাহিনীর সৈন্যদের ওপর এই প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়।
সেনাবাহিনী বলেছে, “তাইবেহ গ্রামে লেবানিজ রেড ক্রসের সঙ্গে উচ্ছেদ ও উদ্ধার অভিযান চলাকালীন ইসরায়েলি শত্রুর আগ্রাসনের ফলে” প্রথম ঘটনায় একজন সৈন্য নিহত এবং অন্য একজন আহত হয়।
রেড ক্রস জানিয়েছে, তাদের চারজন স্বেচ্ছাসেবকও সামান্য আহত হয়েছে আর তাদের চলাচল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।
আর “ইসরায়েলি শত্রুরা বিনতে জবিল এলাকায় একটি সেনা চৌকিকে লক্ষ্যবস্তু করার পর” আরেক সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
লেবাননের সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, “পোস্টে থাকা কর্মীরা আগুন দেখে সারা দেয়” যা কি না নিজেরা জড়িত না থেকেও কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার বিরল ঘটনা।
মঙ্গলবার সরে যাওয়ার নির্দেশের বিপরীতে তারা সবাই লিটানি নদীর উত্তরে থাকে, যা সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৮ মাইল) দূরে অবস্থিত।
আক্রমণের আগে ২০০৬ সালে তাদের শেষ যুদ্ধের অবসান ঘটানো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি রেজ্যুলেশন অনুসারে ইসরায়েল লিটানি থেকে হেজবুল্লাহর সরে যাওয়ার দাবি জানায়।
বৈরুত থেকে বিবিসির সাথে কথা বলার সময় লেবাননে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাথিউ হলিংওয়ার্থ সেখানকার পরিস্থিতিকে “ভয়াবহ” বলে বর্ণনা করেন।
“দক্ষিণ শহরতলির উপর কালো ধোঁয়া উড়ছে। প্রতিদিন সকালে আমরা যখন কাজে আসা থেকে শুরু করে সারা দিন ধরে আমরা তা দেখি। শহরের চারপাশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে”।
“দক্ষিণে এবং দক্ষিণ শহরতলিতে চলা যুদ্ধ থেকে পালানো মানুষের গাড়ি সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে। সবখানে যানজট, মানুষ বাইরে ঘুমাচ্ছে।”
ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির লেবাননের কান্ট্রি ডিরেক্টর হুয়ান গ্যাব্রিয়েল ওয়েলস জানান, তার সংস্থার জরিপ অনুযায়ী সরকার পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রে বাস্তুচ্যুতদের প্রায় অর্ধেকই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।
রাজধানীর কেন্দ্রে একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানার ২৪ ঘণ্টা পর বৈরুতে ইসরায়েল সবশেষ বিমান হামলা চালালো। হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থাও বলেছে, হামলায় নিহত নয়জনের মধ্যে তাদের সাতজন ছিলেন।
পরে লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান যে গত তিন দিনে ইসরায়েলি আগুনে ৪০ জনেরও বেশি প্যারামেডিক এবং অগ্নিনির্বাপক নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হেজবুল্লাহর গোয়েন্দা সদর দফতর, অস্ত্র উৎপাদন সাইট, অস্ত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, হেজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে দুই সপ্তাহের ইসরায়েলি হামলা ও অন্যান্য আক্রমণে লেবাননে ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে এবং এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গাজায় যুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত লড়াইয়ের প্রায় এক বছর পর ইসরায়েল এই আক্রমণ চালিয়েছে। আর এর কারণ হিসেবে বলছে, হেজবুল্লাহর রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে ফিরে আসা তারা নিশ্চিত করতে চায়।
হেজবুল্লাহ একটি শিয়া ইসলামপন্থী সামরিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন যা লেবাননে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতার মালিক। ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশ একে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনে করে।
আইডিএফ বৃহস্পতিবারও ঘোষণা করেছে যে তাদের বিমান দক্ষিণ লেবাননে এবং অস্ত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও নজরদারি পোস্টসহ ২০০টি হেজবুল্লাহ "সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে" আঘাত করেছে। এতে বলা হয়, বিনতে জবিলের পৌরসভা ভবনে হানা আঘাতে প্রায় ১৫ জন হেজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
পরে এটি জানায় যে বিমান ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত যৌথ অভিযানের সময় তিন হেজবুল্লাহ কমান্ডারের একটি আবাসন কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।
হেজবুল্লাহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে যে তার যোদ্ধারা দিনের বেলায় কিছু সীমান্তবর্তী গ্রামে অগ্রসর হওয়ার জন্য ইসরায়েলি কমান্ডোদের “ব্যর্থ প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছে”।
গোষ্ঠীটি আরও বলেছে, তারা সীমান্তের অন্য দিকে “শত্রু জমায়েত” এবং বাড়িগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, পাশাপাশি উত্তর ইসরায়েলের ভেতরে রকেট নিক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে।
আইডিএফ বলেছে যে সারাদিনে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ২৩০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। বেশিরভাগই আটকানো হয়েছে বা খোলা জায়গায় পড়েছে এবং এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসবি/