ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

ইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্য করে নৌ ও বিমান হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৫০ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে তারা ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথিদের অন্তত পনেরটি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।

পেন্টাগন বলেছে ‘নৌ চলাচল নির্বিঘ্ন’ রাখতে যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের প্রধান কয়েকটি শহরে কিছু বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

গত নভেম্বর থেকে হুথিরা লোহিত সাগরে অন্তত একশ জাহাজে হামলা করেছে এবং এর মধ্যে দুটি নৌযান ডুবে গেছে। বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীটি বলেছে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ নিতে তারা এসব হামলা করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকাণ্ডের দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে এবার হুথিদের অস্ত্র সম্ভার, ঘাঁটি ও অন্য উপকরণ লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে।

হুথি সমর্থিত মিডিয়া জানিয়েছে যেসব শহর আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে সানা একটি।

সোমবার হুথিরা জানিয়েছে তারা ইয়েমেনের আকাশসীমায় থাকা যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত এমকিউ-৯ রিয়েপার ড্রোন ভূপাতিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী একটি মনুষ্যহীন আকাশযান হারানোর কথা স্বীকার করেছে।

গত সপ্তাহে পেন্টাগন বলেছে হুথিরা ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জাহাজ লক্ষ্য করে ‘জটিল হামলা’ চালিয়েছে। যদিও হুথিদের নিক্ষেপ করা সব কিছুই গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।

ইয়েমেনের লড়াইরত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় সানায় গত দু বছর তেমন কোন বোমাবর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।

তবে লোহিত সাগরে নৌযানের ওপর হামলার পাশাপাশি হুথিরা সরাসরি ইসরায়েলে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

গত জুলাইতে ইয়েমেন থেকে পাঠানো ড্রোন হামলা হয়েছে তেল আবিবে। এ ঘটনায় একজন নিহত ও দশ জন আহত হয়।

গত মাসে তারা ইসরায়েলে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে, যার একটির লক্ষ্য ছিলো ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর।

উভয় ঘটনাতেই ইসরায়েল ইয়েমেনের বিভিন্ন জায়গায় হামলা করে পাল্টা জবাব দেয়।

এর আগে বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আরটি দেশ লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হুথিদের বিরুদ্ধে হামলা চালায়।

গাজায় হামাস, লেবাননে হেজবুল্লাহর পর মধ্যপ্রাচ্যে হুতিরাও ইরান সমর্থিত নেটওয়ার্কের অংশ।

হুথিদের সামরিক সক্ষমতা কেমন?

লোহিত সাগরে জাহাজে হুথিদের বিভিন্ন হামলায় দেখা গিয়েছে তারা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক মিসাইল, ড্রোন (ইউএভি) ও চালকবিহীন জাহাজ (ইউএসভিস) ব্যবহার করেছে।

এছাড়া শুরুর দিকে হামলায় দেখা যায় হুথিরা ছোট ছোট নৌকা বা হেলিকপ্টার নিয়ে বড় জাহাজে উঠে পড়ছে ও সেটা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইউএভি বা তথাকথিত “কামিকাজে ড্রোন”- যেটা হুথিরা ব্যবহার করছে, ধারণা করা হচ্ছে এগুলো কাসেফ ড্রোন, সেই সাথে আছে অনেক দূর পর্যন্ত হামলায় সক্ষম সামাদস যুদ্ধবিমান - লেজের দিকে যেটায় ভি আকৃতির পাখা থাকে। এই অস্ত্র হুথিরা ব্যবহার শুরু করে আসছে সৌদি আরবের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের সংঘাতে।

দ্য ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি বলছে, বিভিন্ন ধরনের জাহাজ বিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে হুথিদের, যেগুলো ৮০ কিলোমিটার থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। এর মধ্যে আছে সায়াদ এবং সেজ্জিল মিসাইল।

এই থিঙ্কট্যাঙ্ক মনে করে হুথি গোষ্ঠীর কাছে এমন জাহাজ বিধ্বংসী ব্যালিস্টিক মিসাইলও আছে যা ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

এই মিসাইলগুলোর অবস্থান নির্ণয় করাও কঠিন কারণ তারা খুব দ্রুতগতির হয় এবং মূহুর্তের মধ্যে আক্রমণ করতে পারে। তবে এর জন্য দরকার হয় “ড্রোন, অন্য জাহাজ বা অস্ত্রের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে বিশদ তথ্য।”

সমুদ্রের ইতিহাসবিদ সাল মারকোগলিয়ানো বিবিসিকে বলেন, ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ এই দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রই ড্রোনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, কারণ “তাদের সাথে বড় যুদ্ধাস্ত্র থাকে এবং আরও বেশি গতিশক্তি থাকে।”

ইতিহাসবিদ সাল মারকোগলিয়ানো বলেন, একমুখী ড্রোনগুলো সংখ্যায় অসংখ্য কারণ এগুলো খুবই সস্তা এবং সহজেই ব্যবহার করা যায়, তবে একটু ধীরগতির।

এই ড্রোনগুলো ঠিক পানির উপর জাহাজের ভেসে থাকা জায়গা বরাবর আঘাত করে এবং তা থেকে আগুন ধরে যাওয়াটা হল সবচেয়ে দুশ্চিন্তার।

তবে মি. মারকোগলিয়ানোর বিশ্বাস ‘সবচেয়ে ভয়ের’ হল ইউএসভিস বা চালকবিহীন জাহাজ, “কারণ এটি পানির উপরে জাহাজে আঘাত করে, যার মাধ্যমে এটি ফুটো হয়ে ভেতরে পানি ঢোকে এবং জাহাজটি ডুবে যায়।”

ইউএস নেভি বলছে চলমান সংঘাতে হুথিরা প্রথম এই চালকবিহীন জাহাজটি বিস্ফারণ সহকারে ব্যবহার করে গত ৪ই জানুয়ারি এবং সেটি জাহাজ চলাচলের আন্তর্জাতিক লেনে এসে বিস্ফারিত হয়।

“সৌভাগ্যক্রমে কোন হতাহত হয়নি বা কোন জাহাজকেও এটি আঘাত করতে পারেনি, কিন্তু এই একমুখী ইউএসভিস ব্যবহারের সূচনাটা চিন্তার কারণ,” বলেন ইউএস নেভি কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল ব্রাড কুপার।

তিনি বলেন, এরকম আক্রমণ তাদের “নতুন সক্ষমতা” সম্পর্কে জানান দেয়।

তবে সৌদি সরকার জানাচ্ছে, হুথিরা এই এইএসভিস প্রথম ব্যবহার হয় ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে সৌদি বাহিনীর আল-মদিনার উপর একটা হামলায়, আর এরপর “২০২০ সালে মার্চে এডেন উপসাগর দিয়ে একটা তেলবাহী জাহাজ ইয়েমেন যাওয়ার পথে সেটার উপর হামলার একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালায় তারা।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা 

এসবি/