ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

১৯৮৮ সালের পর এমন পরিস্থিতি কখনও দেখেননি শেরপুরবাসী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫২ এএম, ৬ অক্টোবর ২০২৪ রবিবার

ভারত থেকে নেমে আসাঢল ও ভারি বৃষ্টিতে বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে ঘর, আসবাবপত্র, গবাদিপশু; পানির সঙ্গে বাড়ছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। শেরপুরবাসী এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি বহুদিন।

শেরপুরের ঝিনাইগিতী উপজেলার ফাকরাবাদ এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, আটাশি সনের পর এমন বন্যা দেখলেন তিনি। তার ধারণা এবারের ২০২৪ সালের বন্যা আরও বেশি ভয়াবহ। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় কিনা, সেই চিন্তায় আছেন তিনি।

হঠাৎ আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী উপজেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীতে বেশি বন্যা কবলিত হয়েছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় মহারশি, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালি, ভোগাই ও মৃগী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শেরপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে তিন উপজেলার শতাধিক গ্রাম। আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষ মানুষ। গত ৩৫ বছরের মধ্যে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি স্থানীয়রা। ঘরের ভিতরে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষজন আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন উঁচু স্থানের দিকে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করেছে প্রশাসন। তবে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পানি রয়েছে।

মহারশি নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা সালেহা বেগম বলেন, রান্নাঘর, গোয়ালঘর, টিউবওয়েল ও টয়লেট সব পানির নিচে ডুবে গেছে। চুলায় এখনো আগুন জ্বলেনি। তাই পেটে এখনো দানা পরেনি। বিছানার ৩ ফুট উপর দিয়ে পানি যাচ্ছে। চারদিকে পানি, কাঁচা ঘর কখন ভেঙে যায়, এ শঙ্কায় তার ঘুম নেই। সঙ্গে রয়েছে সাপের উপদ্রবও।

নালিতাবাড়ী উপজেলার ঘোগড়াকান্দি এলাকার মমেলা বেগম নামে এক বৃদ্ধা জানান, বাড়ি ঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছেন না। গরুগুলোকেও খাদ্য দিতে পারছিনা। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুব বিপদে পড়ে গেছি।

নালিতাবাড়ী উপজেলার বেল্লামারি এলাকার বাসিন্দা আলেয়া খাতুন বলেন, ছোট দুই নাতিকে লইয়া, পার্শ্ববতী উপজেলার উচু স্থানে এক আত্মীয়র বাড়ি যাচ্ছি৷। বাড়িতে সবকিছু রেখে আসছি। জানিনা এই বন্যার পানি কখন নামবে। বাড়ির কোন কিছু চুরি হয় কিনা। এই শঙ্কায় বোধহয় ঘুমও হবেনা।

নালিতাবাড়ী উপজেলার সুর্যনগর বড়বিলা এলাকার মন্টু মিয়া বলেন, ঘরে কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি। তার উপর বিদ্যুৎ নেই তিনদিন ধরে। পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার উত্তর রানীগাও এলাকার রাজিব হাসান বলেন, পুরো ঘরে পানি। মাটির চুলা ছিল সেটাও তলিয়ে গেছে, রান্না করতে পারছি না। খাবার পানিও নেই। আমার এক আত্মীয় কিছু খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছিলেন। পরে আমরা পরিবারের সবাই মিলে স্থানীয় একটা মসজিদের দুতলায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। পরে উদ্ধারকারী দল এসে আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসছে তিনি আরও বলেন, আমার এই বয়সে এত দ্রুত পানি দেখি নাই।

শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহানিয়া এলাকার বিল্লাল হোসেন বলেন, আগে এমন বন্যার ভয়াবহতা দেখিনি আমরা। একটা ফার্নিচারও ব্যবহার করার মতো নেই। এতো ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে যে, বলে বোঝাতে পারবোনা। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে শেরপুরে ৩৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ১৭০ ও ১০০ মিলিমিটার।

শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, আটকে পড়াদের উদ্ধারে অংশ নিয়েছেন ঝিনাইগাতি এবং নালিতাবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। তবে আজ ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার শেরপুর জেলা বিএনপি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে পানিতে আটকাপড়াদের উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

এসএস//