ঢাকা, বুধবার   ০৯ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৪ ১৪৩১

লেবাননকে হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৫৯ পিএম, ৯ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু লেবাননের জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তারা “গাজার মতো ধ্বংস ও দুর্ভোগ এড়াতে” চাইলে তারা যেনো দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহকে বিতাড়িত করে।

ইসরায়েল হেজবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে তাদের চলমান স্থল অভিযানের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধির পর গতকাল মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

ওইদিন লেবাননের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের নতুন একটি স্থানে আরও হাজার হাজার সৈন্যও পাঠিয়েছে ইসরায়েল।

নেতানিয়াহু আরও দাবি করেছেন,ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) অর্থাৎ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী হেজবুল্লাহ’র সাবেক নেতা হাসান নাসরাল্লাহ’র উত্তরসূরিকে হত্যা করেছে। তবে পরবর্তীতে আইডিএফ বলেছে যে তারা হাশেম সাফিয়েদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।

এদিকে, হেজবুল্লাহ’র যোদ্ধারা টানা তিনদিন ইসরায়েলের বন্দর নগরী হাইফা’র দিকে রকেট নিক্ষেপ করে। এতে করে ১২ জন আহত হয়।

লেবাননের জনগণকে উদ্দেশ্য করে একটি ভিডিও ভাষণে মি. নেতানিয়াহু বলেন, “একটি দীর্ঘ যুদ্ধের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার আগে আপনাদের কাছে লেবাননকে রক্ষা করার একটি সুযোগ আছে। এই যুদ্ধ লেবাননকে ধ্বংস ও দুর্ভোগের দিকে নিয়ে যাবে, ঠিক যেমনটা আমরা গাজায় দেখছি।”

“লেবাননের জনগণ, আমি আপনাদেরকে বলছি: আপনারা আপনাদের দেশকে হেজবুল্লাহ থেকে মুক্ত করুন, যাতে করে এই যুদ্ধ শেষ হয়।”

লেবাননের কর্মকর্তারা বলছেন, তিন সপ্তাহ ধরে তীব্র হামলা করার পরও হেজবুল্লাহকে দমন করা যায়নি। এ ক’দিনে লেবাননে এক হাজার ৪০০ জন মানুষ নিহত ও ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

এর আগে মঙ্গলবার হাসান নাসরাল্লাহ’র সাবেক ডেপুটি নাইম কাসেম জোর দিয়ে বলেছিলেন যে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আঘাত কাটিয়ে উঠেছে হেজবুল্লাহ।

গাজায় যুদ্ধের কারণে গত প্রায় এক বছর ধরে ইসরায়েল ও লেবাননের মাঝে চলমান আন্তঃসীমান্ত লড়াইয়ের পর ইসরায়েল লেবাননে আক্রমণ চালিয়েছে।

ইসরায়েলের ভাষ্য, ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী যেসব মানুষ হেজবুল্লাহ’র রকেট, মিসাইল ও ড্রোন হামলার কারণে নিজেদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে চায় ইসরায়েল।

গত বছরের আটই অক্টোবর হেজবুল্লাহ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলের উত্তর অঞ্চলে রকেট ছোঁড়া শুরু করার পর থেকে দুই দেশের মাঝে ক্রমশ উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। হেজবুল্লাহ’র মিত্র সংগঠন সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস দক্ষিণ লেবাননে মারাত্মক হামলা করার পর হেজবুল্লাহ ওই হামলা করে।

মঙ্গলবার সকালে আইডিএফ ঘোষণা করেছে যে তাদের ১৪৬তম ডিভিশনের সংরক্ষিত সৈন্যরা দক্ষিণ-পশ্চিম লেবাননে “সীমিত” এবং “সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে” অভিযান চালানো শুরু করেছে।

গত ৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তিনটি স্ট্যান্ডিং ডিভিশন যোগ দিয়েছে। ধারণা করা হয়, তিনটি ডিভিশনে মোট সৈন্য সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।

আইডিএফ বলছে যে তাদের সৈন্যরা সীমান্তবর্তী গ্রাম মারুন আল-রাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। এই গ্রামকে হেজবুল্লাহ “কমব্যাট কম্পাউন্ড” নামে অভিহিত করেছে।

আইডিএফ এই গ্রামের যেসব ছবি প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে যে সেখানে একটি রকেট লঞ্চার আছে। সেইসাথে, একটি আবাসিক ভবনের মাঝে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে ও সরঞ্জামও রয়েছে।

এদিকে, ড্রোন ফুটেজে মারুন আল-রাসের নিকটবর্তী গ্রাম ইয়ারুনের ব্যাপক ধ্বংসলীলা দেখা গেছে। স্থল অভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু ছিল এই গ্রামটি।

লেবাননের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ কো-অর্ডিনেটর ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর প্রধান একটি যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করেছেন, সংঘাতের মানবিক প্রভাব “বিপর্যয় থেকে কম কিছু নয়”।

লেবাননের সরকার বলেছে, গত এক বছরে প্রায় ১২ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। এই বাস্তুচ্যুতদের জন্য অনুমোদিত আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ।

সেইসাথে, চার লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ বাঁচাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ায় পালিয়েছে গেছে। পালিয়ে যাওয়াদের মাঝে দুই লাখের বেশি সিরিয়ার শরণার্থী রয়েছে। এটি এমন এক পরিস্থিতি, যেটিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান "অর্থহীন ভোগান্তি" হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছেন, লেবাননের জনগণ নিজেদের খাবার নিজেরা উৎপাদন করতে পারে কি না, তা নিয়েও উদ্বেগ আছে। কারণ, দেশটি হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি পুড়ে গেছে বা পরিত্যক্ত হয়েছে।

আইডিএফ আরও বলেছে যে মঙ্গলবার বৈরুতের দক্ষিণ দিকের শহরতলিতে ও অন্যান্য অঞ্চলে থাকা হেজবুল্লাহ’র ঘাঁটিগুলোতে তারা নতুন দফা বিমান হামলা চালিয়েছে।

এর আগে আইডিএফ আরও ঘোষণা করেছিলো, গত সোমবার বৈরুতে হেজবুল্লাহ সদর দপ্তরে বৈরুতে হেজবুল্লাহ কমান্ডার সুহাইল হুসেইনি নিহত হয়েছেন।

হেজবুল্লাহ এখনও ওই দাবির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/