পুরনো ভিডিও ছড়িয়ে গুজব সৃষ্টির চেষ্টা, পূজা কমিটির প্রতিবাদ
দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০:৪২ এএম, ১১ অক্টোবর ২০২৪ শুক্রবার
সারাদেশের ন্যায় ঢাকার দোহারেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে। তবে পুরনো একটি ভিডিও নতুন করে ছেড়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে একটি চক্র। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে পূজা কমিটি।
যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে BP Binoy Roy নামের একটি আইডি থেকে দোহার থানাধীন দক্ষিণ জয়পাড়া সার্বজনীন দাসপাড়া একতা যুব সংঘ দূর্গা মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে এমন একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। যেটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
ভিডিওটি ঢাকা জেলা সাইবার টিমের নজরে আসার সাথে সাথে পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদের নির্দেশে দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম ও দোহার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তারা জানতে পারেন, এবছর ওই মন্দিরে কোন ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সেখানে খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে দূর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জানা যায়, ভিডিও আপলোডকারী প্রায় দেড় বছর পুরনো (২২/০৬/২০২৩ইং তারিখের) একটি ঘটনার ভিডিও আপলোড করে বিভ্রান্তি ছড়ায়।
ইতিমধ্যে উক্ত ঘটনায় মন্দির কমিটির সভাপতি বাদী হয়ে দোহার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-১৭, তারিখ-২২/০৬/২০২৩, ধারা-৪৪৮/ ২৯৫/৪২৭ পেনাল কোড)। পুলিশ ঐ ঘটনায় অভিযুক্ত আসামিকে সাথে সাথে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করে।
পরবর্তীতে মামলার তদন্ত শেষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেন আদালতে।
এ ঘটনায় বর্তমানে উৎসমুখর পরিবেশে শারদীয় দূর্গাপুজা উদযাপিত হওয়া সত্ত্বেও পুরনো ভিডিও দিয়ে গুজব সৃষ্টির প্রতিবাদ জানান মন্দির কমিটি ও উপজেলা পুজা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
দক্ষিণ জয়পাড়া সার্বজনীন দাসপাড়া একতা যুব সংঘ দূর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি নিতাই চন্দ্র জানান,, "বর্তমানে আমরা নিরাপদে নির্বিঘ্নে পূজা করছি। এখানে পরিবেশ খুবই ভালো। কিন্তু যারা পুরনো ভিডিও ছেড়ে গুজব ছড়াতে চায়, তারা মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।"
দোহার উপজেলা পূজা কমিটির সভাপতি অমিতাভ পাল অপু বলেন, "প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও দোহারের প্রতিটি পূজামণ্ডপে আনন্দঘন পরিবেশে দূর্গাপুজা আয়োজিত হচ্ছে। দোহারে সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভালো ছিলো, এখনো আছে। এই বছর পুলিশ ও প্রশাসনও অনেক বেশি তৎপর। এছাড়া সেনাবাহিনীও টহল দিচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে পুরনো ভিডিও দিয়ে গুজব সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের এই প্রচেষ্টাকে আমরা ধিক্কার জানাই ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই।"
তিনি এধরনের গুজব থেকে সতর্ক থাকার জন্য সকল সনাতনীদের আহবান জানান।
দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম বলেন, “দোহার ও নবাবগঞ্জে শুধু হিন্দু-মুসলিম নয়, বিভিন্ন ধর্মের লোক মিলেমিশে বাস করে। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি খুবই ভালো এবং সারাদেশের জন্য অনুকরণীয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের নাগরিকগণ খুবই আনন্দঘন পরিবেশে দূর্গাপুজা উদযাপন করছে। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুরনো ভিডিও ছড়িয়ে গুজব সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “উক্ত পোস্টদাতাকে সনাক্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনুগ্রহ করে এধরনের গুজবে কেউ কান দিবেন না। যে কোন তথ্য ও ঘটনা যাচাই না করে পোস্ট বা শেয়ার করা উচিত নয়। এ বিষয়ে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরে দোহার ও নবাবগঞ্জের প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসিটিভি আছে, আনসার বাহিনীর সদস্যগণ আছেন, স্বেচ্ছাসেবক আছেন। বাংলাদেশ পুলিশ পুজার নিরাপত্তায় দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। দোহারে ১০টি ও নবাবগঞ্জে ১৪টি মোবাইল টিমের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশের গোয়েন্দা দল কাজ করছে।
এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
এএইচ