ঢাকা, বুধবার   ১৬ অক্টোবর ২০২৪,   কার্তিক ১ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গে দুই তরুণীর দেহ উদ্ধার, ধর্ষণ-খুনের অভিযোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৪৮ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার

গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে দুইজন নারীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। কৃষ্ণনগর ও পুরুলিয়া থেকে। দুইজনকেই খুন করা হয়েছে। কৃষ্ণনগরে এক তরুণীর অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মুখ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

পুরুলিয়ায় বরাবাজার থানার সিন্ধ্রি এলাকায় এক তরুণীর মৃতদেহ বালিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। তাকেও খুন করে পুঁতে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

মালদহে চার বছরের একটি শিশুকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। কর্তব্যরত চিকিৎসককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

কৃষ্ণনগরের ঘটনা

কৃষ্ণনগরে তরুণীর দেহ ফেলে রাখা হয়েছিল পুলিশ সুপার বা এসপি-র অফিসের পিছনে আশ্রমপাড়া বারোয়ারির উল্টোদিকের মাঠে। তরুণীর মুখ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল বলে তাকে চেনা যায়নি।

বুধবার প্রাতঃভ্রমণকারীরা প্রথম এই দেহ দেখতে পান। পরে কোতয়ালি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, তরুণীকে ধর্ষণ করে খুল করা হয়েছিল বলে তাদের মনে হচ্ছে।

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, তরুণীর দেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তরুণীর বয়স ২০-২২ বছরের মতো হবে। তার পরিচয় পুলিশ এখনো জানতে পারেনি। তদন্ত চলছে।

কৃষ্ণনগরে তরুণীির মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কৃষ্ণনগরে তরুণীির মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। 
কৃষ্ণনগরে তরুণীর পরিচয় এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।ছবি: DW
পুরুলিয়ার ঘটনা

পুরুলিয়ায় কুমারী নদীর তসরুবাকি ঘাটের পাশে তরুণীর মৃতদেহ পুঁতে রাখা ছিল। ঘাটে রক্তের দাগ ছিল। তার কিছুটা দূরেই বালির উঁচু স্তূপ দেখে স্থানীয় মানুষদের সন্দেহ হয়।। সেই বালি সরাতেই মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এরপর বরাবাজার থানায় খবর দিলে পুলিশ আসে। তাদের অনুমান, এই তরুণীর বয়সও ২০ থেকে ২২ বছরের মতো হবে। তরুণীর দেহে জিনসের প্যান্ট, শার্ট ও গলায় ওড়না জড়ানো ছিল।

এই তরণীরও পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

তবে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে, আরজি কর কাণ্ড নিয়ে যতই হইচই হোক না কেন, পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতন ও খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। দুর্গাপুজোর আগে 'উৎশব' নাম দিয়ে রাজ্যের কোন কোন জায়গায় ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তা ম্যাপে চিহ্নিত করে সামাজিক মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছিল। আরজি করের ঘটনার পর অন্য জায়গায় ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার কথা এইভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। সেই তালিকায় আরো দুইটি ঘটনা যুক্ত হলো।

মালদহের ঘটনা

মালদহের মৌলীপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চার বছরের শিশুকে নিয়ে আসা হয় শিশুটির কয়েকদিন ধরে জ্বর ছিল। এক চিকিৎসক শিশুটিকে ভর্তি কর নেন। কিন্তু  পরে অন্য চিকিৎসক তাকে বড় হাসপাতালে রেফার করে দেন। এই নিয়ে রোগীর পরিবারের আত্মীয়রা ক্ষুব্ধ হন।

ডাক্তারের অভিযোগ, রোগীর আত্মীয়রা চিকিৎসককে প্রথমে গালাগালি ও পরে মারধর করেন। আর রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, পুলিশ তাদের কার্যত ধাক্কা দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটির শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দেখে তাকে বড় হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলা হয়। তাতে রোগীর আত্মীয়রা চড়াও হন। পুলিশ গোলমালের খবর শুনে আসে। চিকিৎসক পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এর পাশাপাশি মানকচক গ্রামীণ হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর আত্মীয়রা প্রবল ক্ষুব্ধ হন। তারা অভিযোগ করতে থাকেন, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের এই নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন। তারা বারবার বলছেন, এখনো চিকিৎসকদের কোনো নিরাপত্তা নেই। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। তারা এই ব্যাপারে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, তা আলোচনা করে সুপারিশ করবে।

বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে, একের পর এক জায়গায় চিকিৎসকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে এত প্রচার, হইচই সত্ত্বেও নারী নির্যাতন ও চিকিৎসকদের হেনস্থা করার বিষয়টি আগের মতোই আছে।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে