ঢাকা, শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪,   কার্তিক ২ ১৪৩১

ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপি কীভাবে কাজ করে?

ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

প্রকাশিত : ১০:৫১ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৪ বৃহস্পতিবার

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেরাপি একটি অত্যন্ত কার্যকর ও প্রমাণিত পদ্ধতি। এই চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন রশ্মির সাহায্যে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা হয়। প্রায়শই সার্জারি বা কেমোথেরাপির পাশাপাশি রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করা হয়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলোকে পুরোপুরি নির্মূল করা যায় এবং রোগ পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি কমানো যায়।

রেডিয়েশন থেরাপি কীভাবে কাজ করে?

রেডিয়েশন থেরাপিতে এক ধরনের এক্স-রে বা গামা রশ্মি ব্যবহার করা হয়, যা ক্যান্সার কোষের ডিএনএ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে, কোষগুলো বিভাজিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে না ও ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যায়। রেডিয়েশন থেরাপি মূলত দুটি পদ্ধতিতে প্রদান করা হয়; একটি - এক্সটার্নাল বিম রেডিয়েশন থেরাপি, যেখানে একটি মেশিনের সাহায্যে স্তনের বাইরের অংশে রশ্মি প্রক্ষেপণ করা হয়। সাধারণত, প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট করে ৩-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত এই থেরাপি দেওয়া হয়। অন্যটি – ব্র্যাকিথেরাপি, যেখানে স্তনের ভেতরে একটি ক্ষুদ্র রেডিয়েশন উৎস বসানো হয়, যা সরাসরি ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করে। 

রেডিয়েশন থেরাপি কখন প্রয়োজন হয়?

রেডিয়েশন থেরাপি সাধারণত যেসব পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয় তা হলো; ল্যুমপেকটমির পরে - ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ অপসারণের পর স্তনের বাকি অংশে রেডিয়েশন দেওয়া হয়, যাতে এর পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। মাস্টেকটমির পরে - পুরো স্তন অপসারণের পর যদি ক্যান্সার কোষ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে, তবে রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয়। লিম্ফ নোড আক্রান্ত হলে – ক্যান্সার যদি লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়ে তবে তা ধ্বংস করতে রেডিয়েশন থেরাপি কার্যকর হতে পারে।

রেডিয়েশন থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও রেডিয়েশন থেরাপি বেশিরভাগ সময় নিরাপদ, তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন; তাত্ক্ষণিক (আকিউট) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া - চিকিৎসার স্থানে ত্বক লালচে বা কালো হয়ে যাওয়া, ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা, বুকের বা ত্বকের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি এবং বিলম্বিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া - হৃদরোগ ও ফুসফুসের রোগ (বিরল)। 

চিকিৎসকের পরামর্শ ও পরিচর্যা:

রেডিয়েশন থেরাপির সময় ও পরে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি। চিকিৎসার পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, এবং ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। রেডিয়েশন থেরাপি স্তন ক্যান্সার চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ক্যান্সারের পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি কমিয়ে জীবনমান উন্নত করতে সহায়ক। চিকিৎসকের পরামর্শ ও সচেতনতা মেনে চললে, এই চিকিৎসা প্রক্রিয়ার সুফল পাওয়া সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা ও মানসিক শক্তি নিয়ে স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব।

লেখক:
সিনিয়র কনসালটেন্ট, ক্লিনিক্যাল ও রেডিয়েশন অনকোলজি,
কো-অর্ডিনেটর – রেডিয়েশন অনকোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।