ঢাকা, শনিবার   ১৯ অক্টোবর ২০২৪,   কার্তিক ৪ ১৪৩১

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যা ভাবছে ভারত সরকার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৭ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার

প্রায় আড়াই মাস হতে চলল বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান নিয়েছেন। তারপর থেকে তাকে আর এক মুহূর্তের জন্যও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি, সোশ্যাল মিডিয়াতেও তার কোনও ছবি ‘লিক’ হয়নি, নানা কথিত ফোনালাপের অডিও ফাঁস হলেও সেগুলো যে তারই কণ্ঠস্বর তারও কোনও প্রমাণ মেলেনি। ভারতে নামার পর থেকে তিনি যেন কার্যত হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন!

ছোটবোন শেখ রেহানা নিয়ে দিল্লিতে নামার পর থেকে শেখ হাসিনা কীভাবে আছেন, কোথায় আছেন তা নিয়ে ভারত সরকারের মুখপাত্র, মন্ত্রী বা নীতি-নির্ধারকরা আজ পর্যন্ত একটি শব্দও খরচ করেননি। কোনও সাংবাদিক সম্মেলনেও না, কোনও সাক্ষাৎকারেও না।

তবে ভারত সরকার বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ও পরোক্ষে এটুকু শুধু জানিয়েছে যে, তিনি এখনও ভারতেই অবস্থান করছেন। 

শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারত সরকার সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রাখতে সফল হয়েছে এটা যেমন ঠিক, তাকে কতদিন ভারতে রাখতে হবে সে ব্যাপারে দিল্লি কিন্তু এখনও পুরোপুরি অন্ধকারে।

দিল্লির সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তার ধারণা, বেশ লম্বা সময়ের জন্যই শেখ হাসিনাকে ভারতে থাকতে দিতে হবে। এই বাস্তবতার জন্যই সরকার এখন ক্রমশ প্রস্তুত হচ্ছে।

তাহলে কি অতীতে যেভাবে তিব্বতি ধর্মগুরু দালাইলামা বা আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর স্ত্রী-সন্তানদের ভারত ‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম’ বা রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল, শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে?

এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে দিল্লিতে বিবিসি বাংলা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তার ভিত্তিতে যে উত্তরটা পাওয়া যাচ্ছে তা মোটামুটি এরকম :

প্রথমত, ভারতের চোখে এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা হলেন একজন ‘গেস্ট, বাট আন্ডার কমপালশন!’ অর্থাৎ তিনি রাষ্ট্রের একজন সম্মানিত অতিথি– যাকে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ভারতে চলে আসতে হয়েছে। নিজ দেশে তার নিরাপত্তা বা সুরক্ষা বিপন্ন হয়ে উঠেছিল বলেই তিনি ভারতে এসেছেন, এটাও ভারত খুব ভালো করেই জানে। এখন এই ‘অতিথি’র স্ট্যাটাসেই তাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এ দেশে রেখে দেওয়া যেতে পারে– ভারতের তাতে কোনও অসুবিধা নেই। দেশের পুরনো বন্ধু ও অতিথি হিসেবে তিনি সব প্রাপ্য সম্মানই পাবেন।

দ্বিতীয়ত, পরে পরিস্থিতি অন্যরকম হলে অন্য কিছু ভাবা যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় বা অ্যাসাইলাম দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা ভারতের নেই। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি নিজেও অ্যাসাইলামের জন্য কোনও আবেদন করেননি। কিন্তু যদি সত্যিই পরে সেরকম কোনও প্রস্তাব আসে, ভারত সরকার জানে এ ব্যাপারে দেশের সব দলই একমত হবে এবং শেখ হাসিনাকে অ্যাসাইলাম দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা কোনও সমস্যাই হবে না। 

কিন্তু এখনই আগ বাড়িয়ে এরকম কোনও পদক্ষেপ দিল্লি নিতে চাইছে না। ফলে এক কথায় বলতে গেলে, আপাতত ভারত শেখ হাসিনাকে ‘আতিথেয়তা’ দিতে চাইছে ‘আশ্রয়’ নয়।

শেখ হাসিনা এখনও ভারতেই আছেন, ভারত সরকার এটা কনফার্ম করলেও তিনি রাজধানী দিল্লিতেই আছেন কি না– সেটা কিন্তু নিশ্চিত নয়। শেখ হাসিনা ঠিক কোথায় থাকতে পারেন, তা নিয়ে দু’রকম জল্পনা শোনা যাচ্ছে– ক) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত মেয়ে সাইমা ওয়াজেদের বাসভবনে তার সঙ্গেই শেখ হাসিনাকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।  খ) দিল্লির কাছে উত্তরপ্রদেশের মীরাট বা হরিয়ানার মানেসরে একটি আধাসামরিক বাহিনীর অতিথিনিবাস বা ‘সেফ হাউসে’ তিনি থাকছেন।

শেখ হাসিনাকে গত আড়াই মাসের মধ্যে দিল্লির বিখ্যাত লোদি গার্ডেনে মর্নিংওয়াক করতেও দেখা যায়নি, তিনি রাজধানীর কোনও সুপারস্টোরে কেনাকাটাও করতে যাননি। এগুলো শতকরা একশভাগ গুজব– এই সব দাবির স্বপক্ষে কেউ কোনও ছবিও দেখাতে পারেনি, কেউ তাকে ওসব জায়গায় নিজের চোখে দেখেছে এমন দাবি নিয়েও এগিয়ে আসেনি।

এএইচ