ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

বেড়েছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ  

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪১ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৪ রবিবার

গত আওয়ামী লীগ সরকারের ঋণ পরিশোধের চাপে পড়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ এসেছে, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল ও কর্নফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় বেড়ে গেছে পরিশোধ। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৫ কোটি ডলার। 

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-আগস্ট) বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অথচ এই সময়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ৮৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যার মধ্যে শুধু আসল পরিশোধই বেড়েছে ৩১ কোটি ডলার। তবে চলতি অর্থবছরে কমে গেছে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল ও কর্নফুলী টানেলসহ বেশকিছু বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। যার ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে আলাদা চাপ তৈরি হয়েছে। অথচ মেট্রোরেল বাদে পদ্মা রেল সংযোগ ও কর্নফুলী টানেল থেকে তেমন রিটার্ন আসছে না। যা আয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি মেনটেইনেন্সে খরচ হয়ে যাচ্ছে। সরকারকে নিজের তহবিল থেকে এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। 

সূত্রে আরও জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ৩৩৫ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬৮ কোটি ডলার বেশি। এর আগে কোন অর্থবছরে সরকারকে এত ঋণ পরিশোধ করতে হয়নি। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৬৭ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল। মূলত সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। গত অর্থবছরে শুধু সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৪১ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে এই ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৪৫০ ডলারে পৌছাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৮৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় প্রতিশ্রুতি কমেছে ২৮৫ কোটি ডলার। 

ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত সরকারের সময় করা ঋণচুক্তির প্রস্তাবগুলো বর্তমান অন্তর্বতী সরকার নতুন করে পর্যালোচনা করছে। এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঋণচুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে না। তবে পর্যালোচনা শেষে প্রস্তাবিত ঋণের প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং তখন লক্ষ্য অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি আদায় হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, অন্তর্বতী সরকার গঠনের পর বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বহুপাক্ষিক এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ ও বাজেট সহায়তার প্রাথমিক আশ্বাস দিয়েছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কোন ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। তবে অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে অনুদান পাওয়া গিয়েছিল ৯ কোটি ৫ লাখ ডলার এবং ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ২৭৯ কোটি ডলার। ঋণ ও অনুদান মিলে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ২৮৮ কোটি ডলার। 

প্রকল্প প্রস্তুত ও কাজের অগ্রগতি না হওয়ার কারণে ঋণের প্রতিশ্রুতি এবং অর্থছাড় কমেছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী। 

তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় অর্থছাড় হয়ে থাকে কাজের অগ্রগতির উপর। যতটুকু কাজ হয়েছে সেটির উপরই উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড় করে থাকে। যেহেতু এই দুই মাস আন্দোলনের কারণে কাজ হয়নি তাই ঋণের অর্থছাড়ও কম হয়েছে। কাজের অগ্রগতি বাড়লে অর্থছাড়ও বাড়বে, এটি সাময়িক। 

জানা গেছে, বাংলাদেশকে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য উচ্চ সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতে সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) বেড়েছে। বর্তমানে এসওএফআর ৫ শতাংশের বেশি যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির আগে ১ শতাংশের এর কম ছিল। আবার বাংলাদেশের বাজারভিত্তিক ঋণও ক্রমগত বাড়ছে। এ কারণে বাংলাদেশকে এখন সুদ বাবদ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

এসএস//