ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ত্রিমুখী বক্তব্য রাষ্ট্রপতির, নেপথ্যে কি?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৪ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৪ সোমবার | আপডেট: ১০:৫৮ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৪ সোমবার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার প্রায় তিন মাস হতে চলেছে। তাকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা এখনো চলমান। তার পদত্যাগ নিয়ে ধোঁয়াশা যেন কাটছেই না। তিনি কি দেশ ছাড়ার আগে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন নাকি করেননি তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে দুইপক্ষের নানান বাহাস। 

এর কারণও শেখ হাসিনা। তিনি কিছুদিন আগে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করেননি। যে কোনো সময় চট করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারেন। 

এরপর মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী কি সত্যিই পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করে থাকলে তার পদত্যাগপত্রই বা কার কাছে রয়েছে?

এমন ধোঁয়াশার মধ্যে গত ১৯ অক্টোবর দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের প্রধান সম্পাদক তার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লেখেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে হাসিনা পদত্যাগপত্র দিয়েছেন বলে তিনি অস্বীকার করেছেন। 

তবে শেখ হাসিনা ভারত চলে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানদের সামনে রেখে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি। 

সেসময় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা হয়। আলোচনায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ভাষণে সংসদ বিলুপ্তির ঘোষণাও দেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপ্রধানের এই দ্বিমুখী বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।  

এমতাবস্থায় সারাদেশে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র টক অব দ্যা কান্ট্রিকে রূপান্তরিত হয়েছে। 

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, শেখ হাসিনা যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। কারও কাছে এর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। 

প্রতিবেদনে ওই সম্পাদক লেখেন, শেখ হাসিনার জমানায় বঙ্গভবন ছিল আমার জন্য নিষিদ্ধ। রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ পেয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করি স্যার, আপনি কেমন আছেন? ভাই, আপনি আমাকে স্যার বলবেন না। আমরা তো দু’জনই একসঙ্গে সাংবাদিকতায় এসেছিলাম। আমি পাবনায় আর আপনি ঢাকায়। বাংলার বাণীতে দু’জনই কাজ করেছি। পুরোনো স্মৃতি স্মরণ করে আবেগ জায়গা করে নিলো অনেকক্ষণ। স্বাভাবিক হতেই প্রশ্ন করলাম আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে? আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়ত সময় পাননি। ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি আসছেন না। 

প্রেসিডেন্ট বললেন, চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই। এক পর্যায়ে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না। যা সত্য তাই আপনাকে বললাম। যাই হোক, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। মনে হয় সে সময় পাননি জানানোর। সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট বললেন, এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এটাই সত্য। তারপরও কখনো যাতে এ প্রশ্ন না উঠে সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়েছি। 

এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির অবস্থান পরিবর্তন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতার। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নানা মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব নানা মত দিচ্ছেন।

এমতাবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে নেই গণমাধ্যমে দেওয়া এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছে বঙ্গভবন।

আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মীমাংসিত বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান করছেন রাষ্ট্রপতি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন মিডিয়ায় যে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে সেগুলোর যাবতীয় উত্তর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্টের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি গত ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত চাওয়ার প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ এই মতামত দিয়েছিলেন। মীমাংসিত এই বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার জন্য রাষ্ট্রপতি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আগামীকালকের মধ্যে রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিষয়ে কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা জানান, রাষ্ট্রপতির অপসারণে দ্রুত কর্মসূচি আসছে। 

এছাড়া অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরাও রাষ্ট্রপতির এমন বক্তব্যের পর তার পদত্যাগ দাবী করছেন। 

এসএস//