ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

নোবিপ্রবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন ও প্রতারণার অভিযোগ ছাত্রীর

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১০:০৭ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:০৮ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ বৃহস্পতিবার

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বাংলাদেশ এন্ড মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। 

বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। 

২০১৯-২০ সেশনের এক ছাত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ দেড় বছর প্রেমের সম্পর্ক করে অন্যত্র বিয়ে করায় এই অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, ‘২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ তিন মাস তিনি আমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক জড়ানোর জন্য আমাকে মানসিক অত্যাচার করে। পরবর্তীতে আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে না চাইলেও সব জায়গা থেকে তাকে ব্লক দিলে সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে বলতেন তোমাকে পেলে সুস্থ হয়ে যাবেন তিনি।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে লিখেন, ‘এমন করে করে তিনি আমাকে গিল্টের মধ্যে ফেলে দিতেন এবং মানসিকভাবে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একটা পর্যায়ে ভাবতে থাকি আমার কারণে একটা মানুষ এতো কষ্ট পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি তার পিএইচডি ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন, আমার আশেপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন।’

‘আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, তার প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি ও জোরাজোরি এবং নানান বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকার কারণে আমি উনার সাথে সম্পর্কে যেতে রাজি হই। আমার সাথে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে। এর মধ্যে কয়েকদফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন। কিন্তু আমি বলেছি ফ্যামিলিকে জানানোর পর বিয়ে করবো।’

‘২০২৪ সালের কুরবানি ঈদের সময় থেকে তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না। এর মধ্যে আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং সকলে সম্মতি প্রকাশ করে আমাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত তিনি আমাকে বোঝাতে থাকেন উনার পরিবার অন্যত্র পাত্রী দেখছেন কিন্তু তিনি আমাকেই চান।’

‘গত ৮ এবং ৯ অক্টোবর আমার খালামনির সাথে কথা বলেন মোস্তাফিজ এবং বলেন যে সে তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবেন। পরিবার ছাড়া একাই বিয়ে করবেন কাজী অফিসে, তবে আমার পরিবারের কেউ যেতে পারবে না। তার সব শর্তে রাজি হয় পরিবার। পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা তাল বাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে আমার থেকে তড়িঘড়ি বাড়ি যাবে বলে বিদায় নেয়।’

‘পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন। যার সাথে তার ৩ মাস আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।’ 

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী এ ঘটনার বিচার চেয়ে বলেন, ‘আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে এখন প্রতারণার করছেন। এতে পরিবারসহ মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমি এর বিচার চাই৷’

উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিতে এসে ভুক্তভোগীর মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক আমার মেয়ের সাথে যা করেছে সেটা অন্যায়। বিগত কয়েকদিন আমাদের পরিবারের কারো চোখে ঘুম নেই। মেয়েটার টেনশনে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তিনি যদি আমাদেরকে কোনোভাবে বলতেন তিনি অন্যত্র বিয়ে করবেন তাহলে আমরা আমাদের মেয়েকে বুঝিয়ে বলতাম। তাকে সে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে বারবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নিজের আইডি ডিজেবল করে রেখেছেন। 

অভিযোগের বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ শুনেছি এবং অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি নির্মূল কমিটি রয়েছে, তারা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন। অপরাধ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইননুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য।

এএইচ