ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে, উপকূল জুড়ে আতঙ্ক

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৩৭ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ বৃহস্পতিবার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট জুড়ে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে বাগেরহাট জেলা জুড়ে বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া বইছে। দুপুরেও সূর্যের দেখা নেই উপকূলীয় এই জেলায়। 

সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে আতঙ্ক বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। বসত বাড়ি, গবাদি পশু ও মৎস্য ঘের নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় “দানা” আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। সকল সমুদ্রবন্দরকে  ৩ (তিন)নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। 

ঘূর্ণিঝড়টি আচ সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টার মধ্যে যেকোন সময় আঘাত হানতে পারে।

রাতে আঘাত হানার খবরে উপকূলবাসীর কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। জান-মাল হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন নাজুক বেরিবাঁধ ও বেরিবাঁধ না থাকা এলাকার মানুষ। জলচ্ছ্বাস হলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের জীবনেরও ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

রামপাল উপজেলার রোমজাইপুর গ্রামের মোঃ তুহিন বলেন, আমাদের এলাকায় কোন বেরিবাঁধ নেই। বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারে বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করে। ঝড়ে কি হবে জানি না, আশ্রয় কেন্দ্রও অনেক দূরে।

পেরিখালী ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্য হেনা বেগম বলেন, রামপালে ও মোংলা উপজেলার বেশিরভাগ অংশ বেরিবাঁধের বাইরে। যেকোন ঝড়-জলচ্ছ্বাসে এই এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দানার খবরে সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমরাও মানুষকে সচেতন করছি। যাতে মানুষের জান মালের ক্ষতি কম হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বেরুনী বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও ব্লক প্রস্তুত আছে। বিভিন্ন পোল্ডারের বাঁধগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ৩৫/১ পোল্ডারের বাঁধে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী অংশে ৫শ’ মিটারের মত ঝূকিপূর্ণ রয়েছে। প্রয়োজনে জরুরি মেরামত করা হবে। এছাড়া মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপালের বেশকিছু এলাকায় বেরিবাঁধ নেই। তাদেরও সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।

বিরামহীন বৃষ্টিতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। রহিম নামের এক রিকশা চালক বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি রাস্তায় তেমন লোক নাই। মাত্র ৭০ টাকা আয় করেছি। রাতে নাকি বড় ঝড় হবে। কি খেয়ে বাঁচব তা জানি না।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। উপকূলের মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জেলায় ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় ৮০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া শিশুখাদ্য জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা নগদ বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। আপদকালীন মানুষদের সহযোগিতার জন্য ৩ হাজার ৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছে। ৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসান।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জরুরি সভা করেছি। জেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা ও দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও গর্ববতী নারীদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। গবাদি পশু ও মাছের ঘেরগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। সবাইকে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নির্দেষ মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান জেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

ঘূর্ণিঝড় দানার খবরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিদেশী জাহাজ ও সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষার জনন্য খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এখন পর্যন্ত বন্দরের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড ও গণসংযোগ বিভাগের উপ-সচিব মোঃ মাকরুজ্জামান।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপকূলীয় উপজেলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম। 

সভায় সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. বদরুদ্দোজা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা করামকর্তা ড. শর্মী রায়, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ, থানার ওসি(তদন্ত) মো. নাজমুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল জাবিরসহ সকল দপ্তরের কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

এএইচ