শীতে ঘুরতে যাওয়ার মতো দেশের জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৪১ পিএম, ২ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার
শীত মানেই উৎসব আর ছুটির আমেজ। অনেকেই বছর শেষে শীতকালীন ছুটিকে বেছে নিন ভ্রমণের জন্য। শীতের আগমনে বাংলাদেশে ভ্রমণের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়া ভ্রমণের জন্য একেবারে আদর্শ, আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও এ সময়ে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর রূপে ধরা দেয়।
শীতের শুরুতে দেশের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ-প্রেমীদের মন জয় করে। পাহাড়ি এলাকা, সমুদ্রসৈকত, কিংবা ঐতিহাসিক স্থান প্রতিটি জায়গায় শীতের সময় বিশেষ বৈচিত্র্য দেখা যায়। আসুন জেনে নিই, শীতে কোন স্থানগুলো ভ্রমণের জন্য সেরা।
কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত
শীতকালে কক্সবাজার ভ্রমণ মানেই এক দারুণ অভিজ্ঞতা। ঠান্ডা বাতাস আর নীল জলরাশির ছোঁয়া পর্যটকদের মনকে প্রশান্ত করে। কক্সবাজারের ইনানী ও হিমছড়ি সৈকতও বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া সোনাদিয়া দ্বীপ ও মহেশখালী ঘুরে দেখার জন্যও এই সময়টা দারুণ। গরমের তীব্রতা না থাকায় সৈকতে হাঁটতে কিংবা সমুদ্রস্নান করতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
সিলেট: চা-বাগান আর জাফলংয়ের মোহনীয় দৃশ্য
সিলেটের প্রকৃতি শীতকালে আরও মুগ্ধকর হয়ে ওঠে। সিলেটের চা-বাগানগুলোতে হালকা কুয়াশার আবরণ এবং জাফলংয়ের পাথরভরা নদী এই সময়ে এক অন্য রকম সৌন্দর্য উপহার দেয়। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বা বিছানাকান্দির মতো জায়গাগুলোও শীতে বেশ আরামদায়ক থাকে, যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আদর্শ।
হাওরে ভেসে
শীতকালীন বন্ধে ছুট দিতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। এখন বেশ বিলাসবহুল নৌকা মেলে হাওরের বুকে। এসব হাউস বোটের প্রাইভেট রুমে আয়েশ করে বই পড়তে পড়তে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিতে পারেন অবসর সময়।
বান্দরবান: মেঘ-পাহাড়ের রাজ্য
যারা পাহাড় ও অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন, তাদের জন্য বান্দরবান শীতকালে এক বিশেষ আকর্ষণ। নীলগিরি, নীলাচল, বগালেক এবং চিম্বুক পাহাড়ে মেঘের ভেলার মধ্যে দিয়ে হাঁটার অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। শীতকালে বান্দরবানে তাপমাত্রা সহনশীল থাকে, তাই লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠাও তুলনামূলক সহজ হয়।
রাঙামাটি: কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য
রাঙামাটির কাপ্তাই লেক শীতকালে তার স্বচ্ছ ও শান্ত রূপে ধরা দেয়। লেকে নৌকা ভ্রমণ কিংবা শুভলং ঝরনার দৃশ্য পর্যটকদের মন মাতিয়ে তোলে। এ সময়ে রাঙামাটিতে থাকা হোটেল ও রিসোর্টগুলোতেও পর্যটকদের ভিড় জমে। মেঘ আর পাহাড়ের মিলনে তৈরি এই সৌন্দর্য শীতের শুরুতে দারুণ আকর্ষণীয়।
সুন্দরবন: বন্যপ্রাণী আর প্রকৃতির রাজত্ব
শীতকাল সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়। এই সময়ে বাঘ, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখার সম্ভাবনা বেশি থাকে, কারণ শীতল আবহাওয়ায় প্রাণীগুলো প্রায়শই বাইরে বের হয়। সুন্দরবনের দুবলার চরের রাস উৎসবও শীতের অন্যতম আকর্ষণ।
চর কুকরি মুকরি
ভোলা জেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত একটি দ্বীপ কুকরি মুকরি। বর্ষায় ডুবে থাকলেও শীতে এই চর ভেসে ওঠে। বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বৃহৎ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এই দ্বীপ ৷ নাম না জানা অসংখ্যা গাছ ও সারি সারি নারিকেল গাছ সাথে বিশাল বালুময় চর দেখলে আপনার মনে হবে সৈকতে দাঁড়িয়ে আছেন। চাইলে ক্যাম্পিং করে রাত্রিযাপনও করতে পারেন দ্বীপে।
পঞ্চগড়: হিমালয়ের দেখা মেলে
পঞ্চগড় শীতের শুরুতে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এখান থেকে পরিষ্কার আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতের দৃশ্য দেখা যায়। তেঁতুলিয়ার চা-বাগান এবং মহারাজা দিঘি শীতের হিমেল বাতাসে ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করে তোলে।
ঢাকার আশেপাশে
ঢাকার বাইরে যাওয়ার মতো সময় বের করতে না পারলে একদিনের ছুটিতে ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন রিসোর্ট থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পূর্বাচল ও গাজীপুরে বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে। ছুটি রিসোর্ট, সারাহ রিসোর্ট, ভাওয়াল রিসোর্ট, নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টসহ আরও অনেক রিসোর্ট পেয়ে যাবেন ঢাকার অদূরেই।
সবশেষে বলতে পারি,শীতকালে প্রকৃতি যেমন তার সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয়, তেমনি এসব ভ্রমণ আপনাকে মনের প্রশান্তি দেবে এবং স্মৃতিতে ভরপুর সময় উপহার দেবে।
এমবি