ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ১৮ ১৪৩১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কি বদলে যাচ্ছে ‘কিংস পার্টি’তে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:২৬ পিএম, ২ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার

সম্প্রতি বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং সংবিধান বাতিলের মতো দাবিতে সক্রিয় হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন পক্ষ। গত কয়েকদিনে তারা ধারাবাহিকভাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটির এভাবে মাঠে নামার পর তাদের এই সক্রিয়তার নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে, তা নিয়ে রাজনীতিতে নানা আলোচনা চলছে। তাহলে ছাত্ররা কি ‘কিংস পার্টি’ গঠনের চেষ্টা করছে?

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী নেতারা এখন তিনভাগে বিভক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করছেন। তিনজন ছাত্রনেতা বর্তমানে সরকারে আছেন, আর বাকিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এসব নেতাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে। তবে সরকারে থাকা তিন ছাত্র প্রতিনিধি প্রকাশ্যে এসব প্রক্রিয়ায় যুক্ত নেই। 

বাংলাদেশে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা শুরু হয় সেপ্টেম্বরে, যখন ঢাকায় আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় ধারাবাহিক সফর শুরু করেন। তবে দল গঠনের আলোচনাটি মূলত নাগরিক কমিটিকে ঘিরেই দেখা যায়।

এ বিষয়ে ক্রীড়া ও শ্রম মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করছেন না। দেখুন, আমরা দল গঠন করছি কি না, এই প্রশ্নটা উঠল কোথা থেকে? এই প্রশ্ন এসেছে কারণ মানুষ চেয়েছে যে, গণঅভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা একটা রাজনৈতিক দল করুক। কিন্তু আমার জানামতে, ছাত্ররা এতে এখনও সায় দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, কিংস পার্টির প্রসঙ্গ যা বলা হচ্ছে, সেখানে সরকারের বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। যদি এমন কিছু হতো, তাহলে আপনারা এতদিনে তা দেখতে পেতেন। ছাত্ররা বা নাগরিক কমিটির কেউ যদি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায়, তাদের সে অধিকার আছে। তবে আমাদের দিক থেকে আমরা প্রথম দিন থেকেই জাতীয় ঐক্য তৈরির জন্য কাজ করছি এবং জাতীয় ঐক্যের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, এমন কিছুই আমরা সাজেস্ট করব না।

সেপ্টেম্বরে ঢাকায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা শুরু হয়।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় ধারাবাহিক সফর শুরু করেন। তবে দল গঠনের আলোচনা মূলত নাগরিক কমিটিকে ঘিরেই দেখা যাচ্ছে। সংগঠনটি এরইমধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক কাঠামো চূড়ান্ত করেছে এবং দেশের অধিকাংশ জেলায় সম্ভাব্য কমিটি প্রস্তুত, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলের কাঠামো হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কিন্তু নাগরিক কমিটি কি আসলেই কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে?

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ভাঙনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তারুণ্যের শক্তি আমরা চাই ভবিষ্যতের ক্ষমতায় আসুক। এখানে নাগরিক কমিটি সরাসরি দল গঠন করে তাদের ক্ষমতায় আনবে এমনটা নয়। আমরা চাই, বিএনপি, জামায়াত বা অন্য দলগুলো তরুণদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক। কারণ তরুণরা পচে-গলে যায়নি, তারা কারও সঙ্গে আঁতাত করেনি।

তাহলে যদি দলগুলো তরুণদের ক্ষমতায় না আনে, তবে কী হবে?

এ প্রশ্নের জবাবে পাটোয়ারী বলেন, যারা তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারবে না, তারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাদের ক্ষমতায় আসার পথ বাধাগ্রস্ত করতে এবং একজন ভালো মানুষকে ক্ষমতায় আনার লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটি কাজ করবে। যদি প্রয়োজন হয়, কেউ দল গঠন করতে পারে, তবে সেটা এই প্ল্যাটফর্ম থেকে হবে না।

সূত্র: বিবিসি।

এসএস//