৩ অঙ্গরাজ্যে ভাগ্য ঝুলছে ট্রাম্প-কমলার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:২৬ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০২৪ সোমবার
আধুনিক যুগের সবচেয়ে নাটকীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চলে এসেছে নাকের ডগায়। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে চূড়ান্ত উত্তেজনা বিরাজ করছে। শেষ কদিন ধরেই জরিপের ফল ঘনঘন পরিবর্তন হতে দেখা গেছে। শুরুর দিকে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস প্রায় প্রতিটি জরিপে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের তুলনায় ভালো অবস্থানে থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
পলিটিকো নামে মার্কিন রাজনৈতিক ডিজিটাল নিউজ আউটলেট লিখেছে, শেষ সময়ে এসে আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাগ্য ঝুলে রয়েছে তিনটি রাজ্যের প্রতিযোগিতা তথা বাজির ওপর। এই রাজ্যগুলো পরপর তিন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউসের মসনদে বসার পথ মসৃণ করে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গরাজ্য রয়েছে ৫০টি। এগুলোর ভেতরে এমন কতগুলো স্টেট বা রাজ্য আছে যেগুলোকে রিপাবলিকান রেড স্টেটস বা রিপাবলিকানদের ঘাঁটি বলা হয়। এখানে ট্রাম্প প্রচার না চালালেও খুব সহজেই জিতে যাবেন।
অপরদিকে কিছু রাজ্য আছে যেগুলোকে ডেমোক্রেটিক ব্লু স্টেটস বলা হয়। নিশ্চিতভাবেই সেখানে কমলা হ্যারিস জয়লাভ করবেন। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, উভয় প্রার্থীই সতর্ক করে বলেছেন, বিভক্ত মার্কিন জাতির ভাগ্য নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ঝুলে আছে। আর দুই প্রার্থীর ভাগ্য ঝুলে আছে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের ওপর।
পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমলা হ্যারিস মনে করেন তার ট্রাম্পবিরোধী জোট এতটাই বিস্তৃত এবং গভীরভাবে অনুপ্রাণিত যে তারা যে কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলে নিতে পারবে। আর তার প্রতিপক্ষ ট্রাম্পের বাজি হলো বিশ^ব্যাপী ক্ষমতাবিরোধী চাপের মুখে ডেমোক্র্যাটদের নড়বড়ে অবস্থা।
সূর্যের তেজের পাশাপাশি এবারের মার্কিন গ্রীষ্মকালটা তেঁতে উঠেছে নির্বাচনের গরমে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের ওপর গুলিবর্ষণ কিংবা কমলার সংসদীয় অভ্যুত্থানে জড়িয়ে পড়ার পর ২৪-এর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর ভাগ্য সম্পূর্ণরূপে অনুমানযোগ্য তিন রাজ্যে ঝুলে আছে বলে মনে হচ্ছে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর রণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত মিশিগান, উইসকনসিন এবং পেনসিলভানিয়ার এক লাখেরও কম ভোটারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে ট্রাম্প-কমলার ভাগ্য।
ট্রাম্প তার প্রচারে বাইডেন আমলের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে মার্কিনিদের অসুখী অবস্থাকে পুঁজি করার চেষ্টা করছেন। ভোটাররা চার বছর আগের তুলনায় এখন ভালো আছে কি না সে সম্পর্কে রোনাল্ড রিগ্যানের লাইন ধার করে বানানো স্ক্রিপ্ট আউড়ে যাচ্ছেন যথাযথভাবে। ট্রাম্প তার প্রচারণায় একের পর এক লোভনীয় উপহার এমনভাবে ঘোষণা করছেন যেন আমেরিকানদের পছন্দের হোস্ট এড ম্যাকমোহন তাদের বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।
সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্যের ভেতরে সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল কলেজ পেনসিলভানিয়ায়-১৯টি। এবার সেখানে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন ইহুদি ভোটাররা। অধিকাংশ মার্কিন ইহুদি ভোটার ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দিয়ে থাকলেও গাজা যুদ্ধের কারণে এবার তেমনটি হবে না বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কারণ গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশটিতে মুসলিমবিদ্বেষের মতো ইহুদিবিদ্বেষও সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশের মতো ইহুদি হলেও পেনসিলভানিয়ার মোট জনসংখ্যার ৩.৩ শতাংশ ইহুদি। ট্রাম্প এবং তার দলের কর্মীরা স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনবিরোধী হলেও কমলা ফিলিস্তিনিদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল।
তাছাড়া রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে পেনসিলভানিয়াতে। যে ঘটনা পরিণত হয় অন্যতম নির্বাচনি ইস্যুতে। ১৯টি ইলেকটোরাল কলেজের এই রাজ্য সর্বশেষ দুই নির্বাচনেই নিয়েছে বিজয়ীর পক্ষ। এবারও বিজয়ী নির্ধারণে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এবিসি নিউজের জরিপে ১ পয়েন্ট এবং ফাইভ থার্টি এইট ডটকমের জরিপে শূন্য দশমিক চার শতাংশ ব্যবধানে এখানে এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট-শচার স্কুল পরিচালিত জরিপে এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা।
১০ ইলেকটোরাল ভোটের আরেক দোদুল্যমান রাজ্য উইসকনসিনে গত ছয় নির্বাচনের পাঁচটিতে জয়লাভ করেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীরা। তবে যে একটিতে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন, সেই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ রাজ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টি ভালো করলেও প্রতিবারই জিতেছে খুবই সামান্য ব্যবধানে। এবারের রিপাবলিকান পার্টির ন্যাশনাল কনভেনশন হয়েছে এই রাজ্যে, ট্রাম্প দলীয় নমিনেশনও নিয়েছেন এখান থেকেই। রাজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ শ্বেতাঙ্গ। ফলে উইসকনসিনের ১০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটকে টার্গেট করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন পোস্ট-শচার স্কুল পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে এখানে এগিয়ে কমলা হ্যারিস। তাকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৫০ ভাগ ভোটার আর ট্রাম্পকে ৪৭ ভাগ ভোটার। তবে ফাইভ থার্টি এইট ডটকমের জরিপ অনুসারে, কমলা হ্যারিস এই রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় অক্টোবরের শুরুতে ২ শতাংশের বেশি ব্যবধানে থাকলেও বর্তমানে সেই ব্যবধান মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে।
সুইং স্টেটগুলোর মধ্যে অন্যতম ১৫টি ইলেকটোরাল কলেজের রাজ্য মিশিগানে ১৯৯২ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হওয়া সাতটি নির্বাচনের মধ্যে ছয়বারই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জয়লাভ করে। ২০২০ সালের নির্বাচনেও বাইডেন এখানে জয়লাভ করেছিলেন। তবে ভোটের ব্যবধান বেশি ছিল না। ফাইভ থার্টি এইট ডটকমের সর্বশেষ জরিপের তথ্য অনুযায়ী ০.৩ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে ডেমোক্র্যাট শিবিরে।
এখানে ডেমোক্র্যাটদের চিন্তার কারণ হচ্ছেন এখানকার মুসলিম এবং আরব-আমেরিকান ভোটাররা। জনসংখ্যার অনুপাতে মিশিগানে আরব-আমেরিকান বংশোদ্ভূত ভোটারদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গাজা এবং লেবাননে ইসরাইলের আক্রমণ বন্ধ করতে বাইডেন প্রশাসনের নীরবতা রাজ্যটির ৩ লাখ আরব-আমেরিকান ভোটারকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। আর এর জন্য বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিসকেও সমানভাবে দায়ী করছেন তারা। ক্ষুব্ধ এই অংশটি যারা এর আগের নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিতেন তারা এবার কমলার পরিবর্তে গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন কিংবা ট্রাম্পকে ভোট দিতে পারে। ফলে জরিপে আপাতত এগিয়ে থাকলেও মিশিগানে স্বস্তিতে নেই কমলা।
এসএস//