ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়া হলো না যে কারণে 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১৫ এএম, ৮ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার

উন্নত চিকিৎসায় নভেম্বরের শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার কথা থাকলেও এতে বিলম্ব হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। বিএনপি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল মনে করছে না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও দেশে ফেরেননি। এমন পরিস্থিতিতে চেয়ারপারসনকেও দেশের বাইরে পাঠানোর ঝুঁকি নিতে চাইছে না বিএনপি।

তবে বিদেশ যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। খালেদা জিয়াও আগের চেয়ে সুস্থ। তবে কি কারণে দেরি হচ্ছে তা সরাসরি সম্পষ্ট করতে নারাজ খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। 

একজন সদস্য গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাতে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ম্যাডামের বিদেশযাত্রা দেরি হবে। আগামী সপ্তাহেও হতে পারে কিংবা আরও পরে। বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না। ম্যাডাম আগের চেয়ে সুস্থ আছেন। বাসায় ওনার চিকিৎসা চলবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ম্যাডামের সঙ্গে তার ছোট পুত্রবধূ গুলশানে আছেন। এবার ম্যাডাম ও তার ছেলে তারেক রহমানের একসঙ্গে ওমরাহ হজ পালন করার কথা রয়েছে। সেটি বিদেশ যাওয়ার সময়ও হতে পারে, আবার দেশে ফেরার পথেও হতে পারে।

সবশেষ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হজ পালন করেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। বিএনপির চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একজন নেতা জানান, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার সব প্রস্তুত। তবে রাজনৈতিক কারণে যেতে বিলম্ব হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। লন্ডন থেকেই গ্রীন সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। রাজনৈতিক অবস্থাও স্থিতিশীল বলা যায় না। এই মুহূর্তে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা দেশে না থাকা দলের জন্য একটু ঝুঁকি তো বটেই। অন্যদিকে তারেক রহমানও মামলার কারণে দেশে আসতে পারছে না।

মেডিকেল বোর্ডের আরেকজন সদস্য ডা. মামুন বলেন, ম্যাডামের লন্ডনের ভিসা গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) হাতে পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা পৃথিবীর সেরা চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য দুই দেশের ভিসা একসঙ্গে নিচ্ছি। পরিস্থিতি বলে দেবে আমাদের কী করতে হবে। উন্নত চিকিৎসায় প্রয়োজনে লন্ডন থেকে যুক্তরাষ্টে ও জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। সবমিলিয়ে ম্যাডামের বিদেশ যেতে একটু সময় লাগছে। যাত্রার নির্দিষ্ট তারিখ বলা যাচ্ছে না। মেডিকেল বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ম্যাডাম এখন বিমানে ভ্রমণ করতে পারবেন। মানে ভ্রমণ করার মতো ফিট আছেন। কখন কি হয় সেটি তো আর কেউ বলতে পারবে না। আমরা ছয়জন চিকিৎসক সঙ্গে যাচ্ছি। সবমিলিয়ে হয়তো ১৬ জনের মতো সফরসঙ্গী থাকতে পারে।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদেশ যাওয়ার কথা রয়েছে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. শাহাবুদ্দিন, ডা. শামসুল আরেফিন, ডা. নূর উদ্দিন, ডা. এফএম সিদ্দিক ও ডা. আল মামুন। এ ছাড়া দুই নার্স ও তিন সহকারীসহ ১৬ জনের সফরসঙ্গী থাকতে পারেন।

গত কয়েক দিন আগে ডা. জাহিদ হোসেন আগে সাংবাদিকদের বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে প্রথমে লং ডিসেটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডন নেওয়া হবে। সেখানে থেকে তাকে তৃতীয় একটি দেশে মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হবে। তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদেশে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। অতি দ্রুত যেন ওনাকে বিদেশে মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হাসপাতালে নিতে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তার অংশ হিসেবে আমরা লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার জন্য কাজ শুরু করেছি, যোগাযোগ চলছে। তিনি আশা করেন, প্রক্রিয়া শেষ করে অতি দ্রুতই খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ম্যাডাম গুলশানের বাসায় আগের মতোই মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়নে আছেন। উনার অবস্থা স্থিতিশীল।

তিনি জানান, খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও চিঠি দেওয়া হয়েছে। জাহিদ বলেন, কারণ ম্যাডামের সঙ্গে চিকিৎসক-নার্সসহ আত্মীয়স্বজন যারা যাবেন তা জানানো হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের লিভার ট্রান্সপারেন্ট করতে হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র দুয়েকটি সেন্টার রয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৭৯ বছর বয়সি সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। অন্যদিকে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন। গত ৬ আগস্ট দুপুরে দ্রুতগতিতে তার পাসপোর্ট নবায়নের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পরে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেত্রীর পক্ষে তার প্রতিনিধির কাছে নবায়নকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) হস্তান্তর করা হয়।

এসএস//