চট্টগ্রামে চিন্ময় অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, বিজিবি মোতায়েন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:১৩ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:৩৬ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার
চট্টগ্রামে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আদালত ভবন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ এবং টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।
এসময় আদালতে নির্দেশের পর গ্রেপ্তার হওয়া চিন্ময় দাসকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে ইসকন সমর্থকরা প্রিজন ভ্যান অবরোধ করে রাখে এবং তার মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ইটিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মিদের উপর চড়াও হয় ইসকন কর্মিরা।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে মোট ১০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিজিবি।
এতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীর শাহবাগ, মৎস্য ভবন ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এলাকায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একই কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীতেও মোতায়েন করা হয়েছে ৬ প্লাটুন বিজিবি।
জানা যায়, ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন-৬ এর কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে তোলা হলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
মূলত চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করছেন তার অনুসারীরা। বিক্ষোভ ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য সতর্কতামূলকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের সাবেক অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর (৩৮) জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে কঠোর নিরাত্তায় সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন চিন্ময় দাসের ভক্তরা।
এর আগে সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গত ৩১ অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত) বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়।
মামলা অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। সেখানে ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এই মামলার পর ইসকন প্রবর্তক ধাম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রসঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি মামলাটি সনাতনীদের আট দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেন।
ওই বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সনাতনীদের ওপর চালানো হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলন বর্তমান সরকার কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়।’
এসএস//