ভালুকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে সন্ত্রাসী নাঈম গ্রেপ্তার
ভালুকা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮:১৯ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:৩৬ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার
ময়মনসিংহের ভালুকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে কুখ্যাত সন্ত্রাসী নাঈম সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাতে ভালুকার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর মেজর মো. নোমান মুনসির নেতৃত্বে ২০ জনের একটি দল উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার নাঈম সরকার একজন কুখ্যাত অপরাধী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সে ভালুকার কুখ্যাত ভূমিদস্যু আওয়ামী দোসর জাপা নেতা আবু জাফরের ছেলে। বিগত সরকারের ছত্রছায়ার হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হানিফ মোহাম্মদ নিপুনের সহযোগী হিসেবে ও হবিরবাড়ি যুবলীগের প্রচার সম্পাদকের ক্ষমতা ব্যবহার করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতেন বলে জানা গেছে।
থানা সূত্রে আরও জানা যায়, বিগত সরকারের সময় নাঈম এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্র প্রদর্শন, ভুমি দখল ও চাঁদাবাজি সহ নানা অপরাধে জড়িত ছিল। ৫ আগস্টের পর নাঈম সরকার ও তার দোসররা এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়। তার পিতা জাফর সরকার এলাকায় ভূমিদস্যু ও মাফিয়া হিসেবে পরিচিত। এলাকার বহুলোক তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে হামলা মামলার শিকার হয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। বহু শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকগনও তাদের প্রতারনার শিকার হয়ে ভালুকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলেও ক্ষমতার দাপটে ওই সব মামলা থেকে বেরিয়ে এসে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে কুখ্যাত ভূমিদস্যু জাফর, তার ছেলে নাঈম সহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী। ইতোমধ্যে জাফরেরে বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ও অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও সে এখনো ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে ভূমিদস্যুপনা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সম্প্রতি হবিরবাড়ীর আমতলীর ১৫৪ দাগে এক প্রবাসী শিল্পপতির কাছে ৫ কোটি টাকা চাঁদাদাবী করলে ওই প্রবাসী শিল্পপতি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তার জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে জমি জবর দখলের চেষ্টা করেন। এতে ওই শিল্পপতির ম্যানেজার ,কেয়ারটেকারদের অপহরন করে নিয়ে মধ্যযোগী কায়দায় পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন জাফর ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা।
এ বিষয়ে,২০২৪ সালের ২৮জানুয়ারী, ১৬এপ্রিল, ১০জুলাই, ৩০ জুলাই, ১৭ আগষ্ট, ৬ সেপ্টেম্বর, ২৪ নভেম্বর এবং ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর প্রবাসী ওই শিল্পপতি, তার ম্যানেজার ও কেয়ার টেকার বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় ভূমিদস্যু জাফর ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে পৃথক ৮টি অভিযোগ দায়ের করলেও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এই ভূমিদস্যু ও তার দোসররা ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যায়। তাই ভোক্তভোগী ও সাধারন মানুষের দাবী কুখ্যাত ভূমিদস্যু জাফর ও তার দোসরদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করার।
আসামী মো. নাঈম সরকার তার ভাগ্নীর বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ভালুকা চেয়ারম্যান বাড়িতে আসে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মো. নাঈম সরকারকে স্কয়ার মাস্টারবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ছোট কাশর এলাকায় দেশের সুনামধন্য আরেক ব্যবসায়ীর জমি জবর দখল করে নির্মিত তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে যৌথ বাহিনী তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে। পরে আসামি নাঈমকে রাতেই ভালুকা মডেল থানায় সৌপর্দ করা হয়। সে দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল।
সেনাবাহিনীর মেজর মো. নোমান মুনসি জানান, নাঈম সরকারের গ্রেপ্তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অটল অঙ্গীকারের প্রমাণ বহন করে। এটি একটি কঠোর বার্তা দেয় যে, অপরাধী যত প্রভাবশালী এবং শক্তিশালী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে ভালুকা মডেল থানার ওসি শামছুল হুদা খান জানান, যৌথ বাহিনী নাঈমকে আটকেরপর থানায় সৌপর্দ করেন। সন্ত্রাসী নাঈম বিগত সরকারের আমলে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলার আসামী ছিলো। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে থানায় বিভিন্ন অপরাধে একাধীক মামলা রয়েছে।
এমবি