ই-অরেঞ্জের মালিকানার জটিলতা নিস্পত্তির নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:১০ পিএম, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৭:১১ পিএম, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রিয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উদ্যোগে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা উল্লেখযোগ্য অংকের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিউকম, ই-ভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠান সরকারের ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা অনুযায়ী আবার ব্যবসা শুরু করেছে। এ ধরণের আরেক প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ, যার মালিকানা নিয়ে জটিলতায় গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থার অবসানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ই-অরেঞ্জ এর মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ের আইনগত নিস্পত্তি করতে বলেছে। অন্যদিকে এর প্রতিষ্ঠাতা গ্রাহকের অর্থ ফেরত এবং প্রতিষ্ঠান চালু করতে চান বলে জানা গেছে।
গত ২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের কারিগরি কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে ৩৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের টাকা আটকে আছে। এর মধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠান ৬৭ হাজার অর্ডারের বিপরীতে প্রায় ৪১১ কোটি টাকা গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্যনীয় বিযয় হচ্ছে, ই-অরেঞ্জ কোনো টাকা ফেরত দেয় নি। অথচ গ্রাহকদের প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ই-অরেঞ্জ পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে।
প্রায় ৩ বছর পর প্রথমবারের মতো, ই-অরেঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন মালিক সোনিয়ার পক্ষে উপস্থিত আইনজীবি মোঃ শামসুল হুদা সভায় জানান, প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে । এর প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা সোনিয়া মেহজাবিন ২০২১ সালে জানুয়ারি মাসে ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে চুক্তিনামা করে জনৈকা বিথী আক্তারের কাছে ই-অরেঞ্জ এর মালিকানা হস্তান্তর করেন। চুক্তিনামা অনুযায়ী ১লা এপ্রিল'২১ থেকে ই-অরেঞ্জ এর সকল দায়িত্ব বিথী আক্তার এর। বিথী আক্তার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্সে মালিকানা পরিবর্তন করে তার নামে করে নিয়েছেন এবং তার স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকাও তুলেছেন। কিন্তু বিথী আক্তার এখন আর মালিকানা দাবি করছেন না।
অন্যদিকে সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান কারাগারে আটক রয়েছেন। তাদের জামিনে মুক্তি দিয়ে মালিকানা ফেরত দেওয়া হলে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ই-অরেঞ্জ মালিকানা সংক্রান্ত বিষয় আইনগতভাবে নিস্পত্তি করে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে।
ই-অরেঞ্জ এর মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়টি আইনগতভাবে নিস্পত্তির বিষয়ে সম্প্রতি সোনিয়া মেহজাবিনের পক্ষে তার আইনজীবি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ই-অরেঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবিন ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে আর মালিক নন। আর বীথি আক্তার মালিক হবার পরও, এখন মালিকানা দাবি করছেন না এবং গ্রাহকদের জন্য কাজ করছেন না। এ অবস্থায় বিভিন্ন মামলার চার্জশীট থেকে সোনিয়া মেহজাবিন এবং তার স্বামীর নাম বাদ দিয়ে তাদেরকে জামিনে মুক্তি দিলে এবং মালিকানা ফেরতের ব্যবস্থা নিলে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়া সহজতর হতো এবং ব্যবসা পুনরায় চালু করার সম্ভাবনা তৈরি হতো। চিঠিতে জানানো হয়, মালিকানার বিষয়টি আরবিট্রেশনের মাধ্যমে মীমাংসা করার চেষ্টা করা হবে অথবা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিনামা বাতিল করার জন্য মামলা করা হবে। তবে সোনিয়া মেহজাবিন কারাগারে থাকায় মালিকানা বিষয়ে মামলা করতে বেশ প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে। মামলার আরজি, ওকালতনামা, হলফনামাসহ বিভিন্ন জায়গায় তার স্বাক্ষরের দরকার হবে, যা দ্রততম সময়ে শেষ করা কঠিন। মালিকানার বিষয়টি আইনগতভাবে নিস্পত্তির জন্য এক মাস সময় চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ই-অরেঞ্জের সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ এখন সোনিয়া মেহজাবিনের হাতে নেই। এর নিয়ন্ত্রণ বীথি আক্তারের কাছে। কিন্তু বীথি আক্তার বর্তমানে পলাতক এবং মালিকানা দাবি করছেন না। বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের সভাতেও সার্ভার নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও এই ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এমতাবস্থায় সার্ভারে গ্রাহকের সকল তথ্য রয়েছে। কোন গ্রাহক কত টাকা দিয়েছেন, কবে দিয়েছেন, কোন পণ্য অর্ডার করেছেন, ডেলিভারি পেয়েছেন নাকি পান নি, কত টাকা পাবেন- এ জাতীয় সকল তথ্য রয়েছে। এসকল তথ্য সঠিক অবস্থায় পাওয়া না গেলে গ্রাহকের অর্থ ফেরত নিয়ে বড় ধরণের সমস্যা হবে। এ কারণে সার্ভার অতি দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হেফাজতে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ই-অরেঞ্জ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এর চাকুরিচ্যুত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম রাসেল যিনি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে জামিনে বের হয়েছেন। আর বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমানউল্লাহ। (যিনি সমপ্রতি জামিনে বের হয়েছেন) বীথি আক্তার অথবা আমানউল্লাহ কেউই এটি চালুর উদ্যোগ নেননি। তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কোনো যোগাযোগও করেননি। বীথি আক্তার পলাতক রয়েছেন। এ অবস্থায় গ্রাহকের টাকা ফেরত এবং পুনরায় ব্যবসা চালুর বিষয়ে আইনগত সমাধান জরুরি ।
উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ই-ভ্যালির সিইও মো: রাসেল জানান, ই-ভ্যালি ব্যবসা করার মাধ্যমে গ্রাহকের পাওনা সকল অর্থ ফেরত দেবে। কিউকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিপন মিয়া জানান, ‘এসক্রো’ সিষ্টেমে আটকে থাকা সকল টাকাই তারা গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছেন।
সভায় সুপারিশ করা হয় যে, পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ দ্রুত ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ প্রয়োজন। এজন্য সকল ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে চুড়ান্ত গ্রাহক তালিকা দাখিল করার জন্য এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গ্রাহকদের অভিযোগ জমা দেওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া যেতে পারে।
/আআ/