ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

লুটের অস্ত্র দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকাকে হত্যা করে প্রেমিক

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৪৯ এএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ বুধবার

আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় বিয়ের জন্য চাপ দিলে প্রেমিকা শাহিদা ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করে কথিত প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়। হত্যার কাজে ব্যবহৃত পিস্তলটি তৌহিদ গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর ওয়ারি থানা থেকে লুট করেন। পরে ইউটিউবে ভিডিও দেখে তিনি পিস্তল চালানো শিখেন। 

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকালে মুন্সীগঞ্জ আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হোসাইন রনির কাছে আসামি তৌহিদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

এসব তথ্য জানিয়েছেন ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মো. ইয়াসিন।

তিনি বলেন, প্রেমিকা শাহিদা ইসলাম রাফাকে হত্যার পর ভোলার মনপুরা দ্বীপে পালাতে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ উঠে প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়। সোমবার ভোরে লঞ্চ থেকে অভিযুক্ত প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময় গ্রেপ্তার করে মুন্সীগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। 

আসামির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বটতলী বেইলি ব্রিজের নিচে পানি থেকে হত্যাকাণ্ড ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

মো. ইয়াসিন বলেন, তন্ময়ের বিরুদ্ধে মোট ৩টি মামলা হয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি কেরাণীগঞ্জ ডোবা থেকে উদ্ধারের ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া ওয়ারি থানা থেকে অস্ত্র লুটের ঘটনায় ওই থানায় দায়েরকৃত মামলায় তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হবে। হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি তৌহিদ গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর ওয়ারি থানা থেকে লুট করেন। পূর্বে অস্ত্র চালানোর অভিজ্ঞা না থাকায় সে ইউটিউবে ভিডিও দেখে পিস্তল চালানো শিখে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, টিকটকে পরিচয় হয় শাহিদার সঙ্গে তৌহিদের। ৪ বছর চুটিয়ে প্রেম করলেও প্রেমিক তৌহিদ শাহিদাকে বিয়ে করতে চায়নি। সে বিয়ে করতে চেয়ে ছিল পরিবারের ইচ্ছায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। 

তিনি আরও বলেন, একটি দুটি নয়, প্রকাশ্যে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ওপর ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়ে আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকাকে। এরপর ভোলার মনপুরা দ্বীপে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে আলোচিত শাহিদা হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি তৌহিদ।

ঘটনার আগের দিন ২৯ নভেম্বর শাহিদাকে ফোন করে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের করে তৌহিদ। পরে লোকাল বাসে করে দুজনেই চলে আসে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটে। রাতভর সেখানে ঘোরাঘুরির পর শনিবার (৩০ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে খানবাড়ি সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় আসেন তারা। সেখানে প্রেমিকা শাহিদা নিজেকে আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা দাবি করে প্রেমিক তৌহিদকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়।

তাদের মধ্যে চিল্লাচিল্লি শুনে এগিয়ে আসতে থাকলে তৌহিদ ওই নারীকে নিয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সার্ভিস লেন ধরে পদ্মা সেতু উত্তর টোল প্লাজা থেকে ২০০ মিটার অদূরে দোগাছি ফুটওভার ব্রিজ পার করে। একপর্যায়ে আর রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সঙ্গে থাকা থানা থেকে লুট করা পিস্তল দিয়ে প্রথমে গুলি ছুড়লে সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরপরই আরও ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়লে সেগুলো শাহিদার শরীরের বিভিন্ন অংশে বিদ্ধ হয়। 

মুহূর্তেই সড়কে পড়ে শাহিদার মৃত্যু হয়।

শনিবার সকালে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের দোগাছি এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় শাহিদা ইসলাম রাফার মা জরিনা বেগম শ্রীনগর থানায় কথিত প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে প্রধান অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

তৌহিদকে প্রধান সন্দেহভাজন চিহ্নিত করে তার মোবাইল নাম্বারের সর্বশেষ লোকেশন নিশ্চিত হয় ডিবি।
একসঙ্গে তৌহিদের মা, বোন ও বোন জামাইয়ের মোবাইলের লোকেশন সদরঘাটে দেখতে পায়। সিসিটিভি ক্যামেরায় তৌহিদের লঞ্চে ওঠার দৃশ্য শনাক্ত করে তারা।

টার্গেট করা লঞ্চে অনুসন্ধানে ডিবির হাতে ধরা পড়ে তৌহিদ।

নিহত শাহিদা রাজধানী ঢাকার ওয়ারীতে পরিবারের সাথে থাকতেন। সে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামের মৃত মো. মোতালেবের মেয়ে তিনি। তারা ২ ভাই ও ৩ বোন।

এএইচ