ঢাকা, শুক্রবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৬ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমারের অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্র!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৩ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ শুক্রবার | আপডেট: ১২:৪২ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ শুক্রবার

ভারতের মূল ভূখণ্ডের বাইরে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সেভেন সিস্টার বলে খ্যাত সাতটি রাজ্য রয়েছে। বহুদিন ধরেই গুঞ্জন আছে, সেভেন সিস্টারকে ভারতের মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কিছু অংশ নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। তবে এবার সেই গুঞ্জনে ঘি ঢাললেন, ভারতের সেভেন সিস্টারের একটি রাজ্যের ক্ষমতাধর মূখ্যমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ তোলেন, মিজোরামের মূখ্যমন্ত্রী লাল দোহমা এই নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের নেপথ্যে রয়েছেন। 

মনিপুরের মূখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এমনই অভিযোগ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তবে এই শঙ্কা নতুন নয়, বহু বছর ধরেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ অংশ মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের কিছু অংশ নিয়ে আলাদা খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের গুঞ্জন চলে এসেছে। 

দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ট দেশ থাকলেও খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ট কোনো দেশ নেই। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে খ্রিস্টান ধর্ম্বালম্বীর সংখ্যাও কিছুটা কম। ভারতে খ্রিস্টান অধিবাসীদের অনুপাতিক সংখ্যা ৫ শতাংশেরও কম। তবে সেভেন সিস্টার অন্তর্ভূক্ত মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডের অধিবাসীদের প্রধান অংশ খ্রিস্টান।

মণিপুর রাজ্যটির মূখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা এন বীরেন সিং বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক অনুষ্ঠানে মিজোরামের মূখ্যমন্ত্রী লাল দোহমার দেয়া এক বিতর্কিত ভাষণ তাদের হাতে এসেছে। যেখানে বাংলাদেশ ভারত এবং মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনার কথা জানান লাল দোহমা। ভবিষ্যতে এই রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে লাল দোহমা আত্মবিশ্বাসী বলেও ঘোষণা দেন।  

এই নিয়ে ভারত সরকারকে সতর্কও করেছেন মণিপুরের মূখ্যমন্ত্রী। খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনে অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়া, জমি দখল স্থানীয় লোকদের বিতারিত করা, স্বায়িত্বশাসিত প্রশাসন গঠনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি। মণিপুরের পাহাড়গুলোতে সম্প্রতি একের পর এক গ্রাম গড়ে উঠেছে বলে জানান বিজেপি নেতা। 

ভারত থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন সেভেন সিস্টার, দেশটির মূল ভূখণ্ডে থাকা রাজ্যগুলোর তুলনায় সুযোগ সুবিধায় অনেকটাই পিছিয়ে। বিভিন্ন জেরে স্বাধীনতার দাবিতে এই রাজ্যগুলোতে গড়ে উঠেছে বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীও। ভারত সরকার এইসব বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করলেও বিচ্ছিন্ন অঞ্চলটির সঙ্গে চীন-মিয়ানমারের সম্পর্ক দিল্লি ও মোদি সরকারকে বরাবরই আতঙ্ক ও চাপে রাখে।  

এদিকে সম্প্রতি মণিপুরের সংঘাতের জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে সীমান্তে বেড়া তোলার কাজ শুরু করে মণিপুর রাজ্য প্রশাসন। তবে এই নিয়ে কুকিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি এই কাজে কোনো প্রকার সহযোগিতা না করার ঘোষনাও দিয়েছেন তারা। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দুই লাখ বর্গ কিলোমিটারের এলাকা নিয়ে আলাদা একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের তৎপরতার বিষয়ে গুঞ্জন উঠেছে।

মণিপুরে থাকা কুকিদের একই সম্প্রদায়ভূক্ত বাসিন্দা রয়েছে সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের চিন রাজ্যে। বাংলাদেশের পাহাড়েও তাদের একটি অংশের বাস। মণিপুরে কয়েকমাস ধরেই চলছে অস্থিরতা। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে উত্তাল মিয়ানমারেও স্বাধীনতার দাবিতে আলাদা রাজ্যে সক্রিয় রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এছাড়া সীমান্তের কাছাকাছি দেশগুলো সঙ্গে সেভেন সিস্টার বাসিন্দাদের রয়েছে অবিচ্ছেদ্য যোগাযোগ। রয়েছে সীমান্তের সঙ্গে থাকা দেশগুলোতে ছড়িয়ে আছে পরিবার, জাতি ও ধর্মের লোকজন। 

গুঞ্জন রয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত থাকা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কুকিচিন ও খ্রিস্টান অধ্যূষিত এলাকাগুলোকে নিয়ে প্রথমে একীভূত করা ও পরবর্তীতে একটি স্বতন্ত্র ক্রিস্টার রাষ্ট্র ঘোষণার। এমতাবস্থায় ভারতসহ বাংলাদেশ মিয়ানমার ও চীনও এই নতুন রাষ্ট্রটিকে নিয়ে কি ভাবেছে ও তাদের কার্যকলাপ কি হবে তা ভবিষ্যতই বলতে পারে।  

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, রয়টার্স, এপি, বিবিসি বাংলা, ইরাবতী

এসএস//