শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ বিষয়ে কী ভাবছে ভারত, যা জানা গেল
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:২৫ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ বুধবার | আপডেট: ০১:৫৯ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ বুধবার
গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পাঠানো কূটনৈতিক বার্তার ‘আইনি বৈধতা’ কতটা খতিয়ে দেখছে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশের ওই কূটনৈতিক বার্তার উত্তরের জন্য তাড়াহুড়ো করতে চায়না দেশটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সব দিক খতিয়ে দেখে বাংলাদেশের চিঠির জবাব দিতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, রাজনৈতিক কারণে আশ্রয় নেওয়া কোনও নেতা বা নেত্রীকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত পাঠাতে কোনও দেশ বাধ্য কিনা, তার আইনি দিক দেখা হচ্ছে। ভারতের অন্তত ৫০টি প্রত্যর্পণের আবেদন পড়ে রয়েছে ওয়াশিংটনে। ভারত যদি শেখ হাসিনাকে তাঁর জীবননাশের সম্ভাবনার আশঙ্কা সত্ত্বেও ফেরত পাঠিয়ে দেয়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ শক্তি হিসাবে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান অনেকটাই লঘু হয়ে যাবে ভুটান, শ্রীলঙ্কা, নেপালের মতো দেশের কাছে।”
আরও বলা হয়, “বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরাতে এবং সে দেশের ভারত-বিরোধিতার পালে বাতাস লাগাতেই এই ‘নোট ভার্বাল’ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে দেশের প্রধান শিল্পক্ষেত্র, বস্ত্র কারখানাগুলো থেকে হাজারে হাজারে ছাঁটাই চলছে। বিদেশে রফতানি কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। দেশের বাজারে আগুন দাম। সব মিলিয়ে কোণঠাসা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগ-বিরোধী জাতীয়তাবাদের তাস খেলছে। অন্তর্বর্তী সরকার গত চার মাসে এমন কিছু দিতে পারেনি যাতে বাংলাদেশের মানুষের স্বস্তি মেলে।”
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “হাসিনা এখানে যে আশ্রয় চেয়েছেন এবং সেটা যে ভারতের সুপ্রাচীন ‘অতিথি দেবো ভব’ নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ— এ কথা স্পষ্টভাবেই বলে এসেছিলেন পররাষ্ট্রসচিব। তার সঙ্গে এটাও বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বার্থের কথা ভেবেই ভারত যা করার করতে চায়। বাংলাদেশে আগুন জ্বললে তার ধোঁয়া সবার আগে ভারতের রাজ্যগুলোতেই আসবে। ফলে দু’দেশের স্বার্থেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। সে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দিকটিকেও মাথায় রাখতে হবে।”
“বাংলাদেশ সরকারকে চাপে রাখার উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় রফতানি বন্ধ করার পথেও যে হাঁটা হবে না, সে কথা বারবার জানিয়েছে সাউথ ব্লক। কারণ, সেই পদক্ষেপ বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থকে ব্যাহত করবে। কালক্রমে তা ভারত-বিরোধিতায় উস্কানি দেবে।”
“ভারতও চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন করুক অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপির একাংশ যোগাযোগ রাখছেন ভারতীয়নেতৃত্বের সঙ্গে। বিএনপিও ইউনূস সরকারের উপর চাপ দিচ্ছে ভোটের জন্য।”
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “আপাতত দৃষ্টি রাখা হচ্ছে, আগামী ২০ জানুয়ারির দিকে। অর্থাৎ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্প বসার পর বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের গতিবিধিতে কিছু পরিবর্তন আসে কিনা, তার দিকে। বারবার ভারতের উপর নানাভাবে চাপ তৈরি করা এবং উগ্র ভারত-বিরোধী আবেগ জিইয়ে রাখার ব্যাপারে পাকিস্তানকে সামনে রেখে চিনের কোনও ভূমিকা রয়েছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এএইচ