ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ১২ ১৪৩১

বাংলাদেশ ছাড়ার আগে কী বলে গেলেন রাহাত ফতেহ আলী খান 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:০৪ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ বুধবার

'স্পিরিটস অব জুলাই' এবং বিপিএল মিউজিক ফেস্টে অংশ নিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন পাকিস্তানি সুফি গায়ক রাহাত ফতেহ আলী খান। এরইমধ্যে দুটি অনুষ্ঠান শেষে পাকিস্তানে ফিরে গেছেন এই জনপ্রিয় গায়ক। 

ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনারের বাসায় এক সংবর্ধনার ফাঁকে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে তিনি এক একান্ত সাক্ষাৎকার দেন।

ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের প্রত্যেক মানুষের ভ্রাতৃত্ব ও অন্যের প্রতি ভালোবাসা থাকা উচিত।’

রাহাত ফতেহ আলী খান আরও বলেন, ‘আমাদের কাওয়ালিও শান্তি ও শৃঙ্খলার বার্তা দেয়। বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক।’

তিনি তার দাদা ফতেহ আলী খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কাওয়ালিসহ সুফি ভক্তিমূলক বিভিন্ন গান বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিচ্ছেন।

রাহাত খান বলেন, ‘আমরা কোনো যুদ্ধ বা ধ্বংস চাই না... অতীতে যেসব বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর লক্ষ্য ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা।’

সুফি গানের এই শিল্পী ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে এমন একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, যে পরিবারের সদস্যরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আধ্যাতিক গানের মাধ্যমে বিশেষত কাওয়ালির মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার আবেগ-অনুভূতি ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে নিজেদের নিবেদিত করে আসছে এবং এর জন্য এ পরিবার ‘কাওয়াল পরিবার’ উপাধি অর্জন করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, ‘আমি আহতদের দ্রুত সুস্থতা এবং আল্লাহর দরবারে নিহতদের পরিবারকে এই ক্ষতি সহ্য করার মতো শক্তি কামনা করছি।’

ওস্তাদ রাহাত আলী তার সুমধুর কণ্ঠে হারমোনিয়ামে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন। গজল ও শাস্ত্রীয় গানের জন্যও আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন এবং উর্দু ও হিন্দি চলচ্চিত্রের সংগীতেও কণ্ঠ দিয়েছেন।

অভিনেতা শবনম, নাদিম বেগ, রবিন ঘোষ এবং পরে সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার মতো সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তারকাকে স্মরণ করে রাহাত ফতেহ আলী খান তার দেশ এবং বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধনের উপাদান হয়ে উঠবে বলে আশা করেন।

তিনি বলেন, ‘এটি সাংস্কৃতিক ঐক্য, একটি বিপ্লবও... এটি সাংস্কৃতিক শিল্পের জন্যও কল্যাণময়।’

ওস্তাদ রাহাত আলী বাংলা গান শোনেন কি না- জানতে চাইলে ইতিবাচক উত্তরে বলেন, ‘আমি হিন্দুস্তানি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির হৃষিকেশ মুখার্জির ছবিতে অনেক পুরনো বাংলা গান শুনেছি।’

প্রচলিত বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে গ্ল্যামারের পরিবর্তে গানে সরলতা ও উষ্ণতা পছন্দ করা চলচ্চিত্র নির্মাতা মুখার্জির কথা উল্লেখ করে ওস্তাদ রাহাত আলী খান বলেন, ‘আমি সত্যিই বাংলাদেশের এই ধরনের সংগীতের প্রশংসা করি।’

তার পরিবার ও সংগীত শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে রাহাত ফতেহ আলী খান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, আমার পরিবার ৬০০ বছর ধরে কাওয়াল পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সংগীত শিক্ষা আমাদের পরিবারে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত।’

তিনি বলেন, ‘নুসরাত ফতেহ আলী খান আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন, কিন্তু তার জীবন ছিল মাত্র ৪৮ বছরের। তাই তিনি আমাকে যে সময় দিয়েছেন তা খুবই সংক্ষিপ্ত। এখনও আমি আমার গুরু নুসরাত ফতেহ আলী খানকে মিস করি। আমার বাবা তার ছোট ভাই ছিলেন। তিনি আমাকে আমার বাবার কাছ থেকে দত্তক নেন।’

বাংলাদেশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হওয়া সব বিপ্লবের আমি প্রশংসা করি। সেটা বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা বিশ্বের যেকোনো দেশেই হোক না কেন, বিপ্লব যদি শান্তির পক্ষে হয়, তাহলে আমরা তার প্রশংসা করি।’

বাংলাদেশে তার প্রিয় গায়িকা কে জানতে চাইলে রাহাত ফতেহ আলী খান তাৎক্ষণিকভাবে রুনা লায়লার নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি সবসময় তার গান শুনি। তিনি একজন অসাধারণ গায়িকা, একজন বড় মনের কিংবদন্তি শিল্পী।’

এমবি