ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৯ জানুয়ারি ২০২৫,   পৌষ ২৬ ১৪৩১

জানুয়ারিতে দেশে আসবেন শেখ হাসিনা, দাবিটি নিয়ে যা জানাল রিউমার স্ক্যানার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:০৯ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০২৫ বুধবার | আপডেট: ০৭:১১ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০২৫ বুধবার

সম্প্রতি শেখ হাসিনা ভারতের সংবাদমাধ্যমকে জানুয়ারিতে দেশে আসবেন বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফরম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার বলছে, এটি পুরনো ভিডিও এবং দেশে ফেরার দাবি করাটি ভিত্তিহীন।

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের কোনো গণমাধ্যমকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি দেশে আসবেন বলে সাক্ষাৎকার দেননি। ভিন্ন ঘটনার একাধিক পুরনো ফুটেজ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। ভিডিওতে শুরুতে শেখ হাসিনার দুটি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। পররর্তীতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিনি সেটা করতে পারেননি তবে, শেখ হাসিনা সেই ভাষণ ভারতে গিয়ে একটি ভিডিও বার্তায় দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য ৬ আগস্ট একটি ভিডিও বার্তা শেয়ার করেন দাবি করেন। এ ছাড়া উপস্থাপক শেখ হাসিনা সেই ভিডিও বার্তায় বলেছেন দাবি করে বলেন, ‘সাময়িক সময়ের জন্য আমি দেশ ছেড়েছি, আজীবনের জন্য নয়।

আমার সঙ্গে যা ঘটেছে তার সব কিছুর হিসাব নেব আমি। এটা আমার বাবার দেশ, এটা আমার হাতে গড়া বাংলাদেশ। এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার মতো পাত্রী আমি নই। মনে রেখো দিনটা তোমার ছিল বাট বছরটা আমার হবে।

তবে টিকটকের এই ভিডিওর ফুটেজে শেখ হাসিনাকে এমন কিছুই বলতে শোনা যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে ভিডিও ফুটেজটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআইয়ের ‘ANI News’ ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি “India is trusted friend…” Bangladesh PM Sheikh Hasina lauds India’s role during 1971 Liberation War শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ভিডিওটি প্রতিবেদনে থাকা শেখ হাসিনার ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফুটেজের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

পুরো প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটিতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ভারত আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা আমাদের সমর্থন করেছিল। ১৯৭৫ সালের পরে, যখন আমরা আমাদের পুরো পরিবার হারিয়েছিলাম তারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। তাই ভারতের জনগণের প্রতি আমাদের শুভ কামনা।
 
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, একটি ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনের ভিডিও এবং ভিডিওটি বাংলাদেশে ধারণকৃত।

এছাড়া ভারতের এনডিটিভির ওয়েবসাইটে একই দিনে প্রকাশিত সংবাদ থেকেও একই তথ্য জানা যায়। অর্থাৎ ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিওটিতে দেখানো শেখ হাসিনার দ্বিতীয় ফুটেজটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘NEWS24’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই ‘শেখ হাসিনা পালায় না : প্রধানমন্ত্রী | News24’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় ফুটেজটির সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, এই ভিডিওর সাথেও আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং, জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা দেশে আসবেন বলে ভারতের একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
 
ছাত্র জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেদিনই ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর তার বিরুদ্ধে হত্যা, গুমসহ বিভিন্ন অভিযোগে অনেক মামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

গত ২৩ ডিসেম্বর শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে ভারতকে ‘নোট ভারবাল’ (কূটনৈতিক বার্তা) পাঠায় বাংলাদেশ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেই অনুরোধ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে এ বিষয়ে এ পর্যায়ে আর কিছু বলার নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

এসএস//