টিউলিপের সেই ফ্ল্যাটটি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১৭ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার | আপডেট: ১২:১৯ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার
যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড এলাকায় যে ফ্ল্যাটে কয়েক বছর বসবাস করেন সেই ফ্ল্যাট একটি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছিল বলে এক প্রতিবেদন জানিয়েছে দ্য সানডে টাইমস।
কর আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে নিবন্ধিত ওই কোম্পানির নাম পেডরক ভেঞ্চারস। এই কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের দুজন ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০০ সালে ২ লাখ ৪৩ হাজার পাউন্ড দিয়ে পেডরক ভেঞ্চারস ফ্ল্যাটটি কেনে। ২০১৬ সালে ফাঁস হওয়া পানামা পেপারস এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) সরবরাহ করা নথিতে দেখা যায়, হারবার্টন এস এ নামে একটি অফশোর কোম্পানি পেডরক ভেঞ্চারস কিনে নেয়। এরপর পেডরক ভেঞ্চারস বন্ধ হয়ে যায়।
করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা কর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন অফশোর কোম্পানি খুলে তাতে বিনিয়োগ করেন। সে কারণে ধনীরা অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পেডরক ভেঞ্চারস প্রতিষ্ঠানটির মালিক বাংলাদেশি নাসিম আলী ও মাসুদ আলী নামের দুই ব্যক্তি। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় নিবন্ধিত শ্যামলিমা লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির যৌথ মালিক তারা। বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, এমন বিদেশি জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলোকে লোকবল সরবরাহ ছাড়া আরও বেশ কিছু সেবা দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান।
শ্যামলিমা লিমিটেডের পরিচয় দিতে গিয়ে একে ‘বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ‘দীর্ঘ অভিজ্ঞতা’।
পাশাপাশি বলা হয়েছে, যে তাদের ‘প্রকল্পে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মীর কাছ থেকে ঘনিষ্ঠ ও পূর্ণ সহযোগিতা’ পাওয়া যায়, যা এ কাজে ‘বড় ধরনের সাহায্য’ করে থাকে। তাদের গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে শেভরন, শেল ও চীনের রাষ্ট্রমালিকানাধীন একাধিক তেল কোম্পানি। এই দুই ব্যক্তির এলএনজি ও সৌরশক্তির পৃথক ব্যবসাও রয়েছে।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা নথিতে বলা হয়, ১৯৭০ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান নাসিম আলী (৭০)। সেখানে এক শিল্পীকে বিয়ে করেন। তার ভাই অর্থাৎ মাসুদ আলী যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ব্যবসায়ের অংশীদার শহীদ ইনাম চৌধুরীর সঙ্গে মিলে তারা শুধু পেডরক বা হারবার্টন এস এ নয়, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে আরও একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এর মধ্যে একটি শ্যামলিমা লিমিটেড।
২০০৫ সালের জানুয়ারিতে এসে নাসিম আলী ও মাসুদ আলী হারবার্টন এস এ বন্ধ করে দিতে বলেন। এর ২৪ ঘণ্টার কম সময় পরে হ্যাম্পস্টিডের সেই ফ্ল্যাটের মালিকানা মঈন গনি নামের এক ব্যক্তিকে উপহার হিসেবে হস্তান্তর করা হয়। মঈন গনি একজন বাংলাদেশি আইনজীবী (ব্যারিস্টার)। সেই সময় তার বয়স ছিল ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। পরে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছবিও আছে। আন্তর্জাতিক একটি প্যানেলে ভূমিকা রাখতে শেখ হাসিনাই তাকে বলেছিলেন উল্লেখ করে মঈন গনি লিখেছিলেন, এটা তার জন্য অত্যন্ত সম্মানের বিষয়।
ঢাকার একটি সূত্র বলেছে, মঈন গনির বাবা–মায়ের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ২০০৯ সালের মার্চে সেই ফ্ল্যাট টিউলিপের বোন আজমিনাকে উপহার দেন মঈন গনি। আজমিনার বয়স তখন ১৮ বছর। সে সময় তার কোনো আয়-রোজগার ছিল না।
টিউলিপ সিদ্দিক বেশ কয়েক বছর ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। ২০১২ ও ২০১৪ সালে নিজের ঠিকানা হিসেবে তিনি এই ফ্ল্যাটের উল্লেখ করেছিলেন। টিউলিপের স্বামী ক্রিশ্চিয়ান পারসিও ২০১৬ সালে তার ঠিকানা হিসেবে ওই ফ্ল্যাটের উল্লেখ করেছিলেন। টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে ওই ফ্ল্যাটটি ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি করে দেন তার বোন আজমিনা সিদ্দিক।
এসএস//