জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর যে পরামর্শ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৩১ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই লক্ষে আজ বৃহস্পতিবার জুলাই গণ–ভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন কোনো ধরনের ফাটল না ধরে সে দিকে খেয়াল রাখতে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, এ ঐক্য ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ। এটি না হলে পতিত সরকার সুযোগ নেবে। তাই সবার সঙ্গে আলোচনা করে জুলাই আন্দোলনের ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করতে। যাতে সবাই মনে করে এটি তার ঘোষণাপত্র। এছাড়াও ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করতে গিয়ে যেন কাল বিলম্ব না হয়, আবার তাড়াহুড়োও না করা হয় সে বিষয়েও সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই ঘোষণা নিয়ে সর্ব দলীয় বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যেখানে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টিসহ অনেক দল অংশ নেয়।
বৈঠক শেষে সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, সব রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের সংগঠনগুলো সবাই বলেছেন ঐক্যমত প্রোষণ করে সর্বসম্মতিক্রমে একটা ডকুমেন্ট প্রস্তুত করতে। যত সময় লাগে সেটা যেন নেয়া হয়, তাড়াহুড়ো যেন না করা হয়, আবার যেন কালক্ষেপন করা না হয়। আলোচনা পরিচালনার জন্য যেন একটা কমিটি গঠন করা হয় সেই প্রস্তাবও এসেছে আমরা সকল প্রস্তাব কার্যকরভাবে বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া প্রায় সকল শক্তি ও রাজনৈতিক দল উপস্থিত ছিলো। বৈঠকে সবাই বলেছেন এ ধরনের ঘোষণার দরকার আছে। তবে মোটা দাগে পরামর্শ ছিল যে ঘোষণাপত্রে সবার অবদান ঠিক মতো বলতে হবে। এর ধারাবাহিকতা ঠিকমতো উল্লেখ করতে হবে। ঘোষণাপত্রের প্রকৃতি কী হবে- রাজনৈতিক ও আইন প্রকৃতি কী হবে তা স্পষ্ট করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে যে, এ ঘোষণাপত্রটা আরো বেশি আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দল, শক্তি, ছাত্র-জনতার বিভিন্ন ফোরামের মধ্যে আরও ইনটেনসিভ আলোচনার মাধ্যমে সর্ব সম্মতিক্রমে এটা প্রণয়ন করতে হবে। এর জন্য যতটা সময় লাগা প্রয়োজন সেটা নিতে হবে। তবে চেষ্টা করতে হবে অযথা যেন কাল বিলম্ব না হয়। সবাই একমত পোষণ করেছে। সবার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে আরও নিবিড় আলোচনার ভিত্তিতে এ ধরনের ডকুমেন্ট প্রস্তুত হওয়া উচিত। সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে এ পক্রিয়ায় আমরা সফল হতে সম্ভব হবো। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে অটুট জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছি সেই ঐক্যের নেরেটিভ সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রণয়ন করতে পারবো আশাবাদ রেখে সভা শেষ হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি, শুধু প্রসেস নিয়ে বিভিন্ন মতামত এসেছে। সব মতকে আমরা স্বাগত জানাই। কোথাও অনৈক্যের সুর দেখি না। বরং সবার মত যেন গুরুত্ব পায়, সবাই যেন অনুভব করে যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে মালিকানা তারও আছে। এটার পক্ষে বিভিন্ন মত এসেছে। যে মতামত ঐক্যের পথে আরও সুদৃঢ় হবে বলে আমরা মনে করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে সবচেয়ে জরুরী ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা। যেটি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। সেই ঐক্যকে যেন আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে নিয়ে আসতে পারি। যার মাধ্যমে আমরা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি- এটাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। সবাইকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক যে কোনো বক্তব্য আমরা দিতে চাই। যাতে অনৈক্যের বিজ আমাদের মধ্যে বোপন না হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাড়ে পাঁচ মাস পর কোনো ঘোষণাপত্রের প্রয়োজন ছিল কি না সেটা আমরা প্রশ্ন রেখেছিলাম। যদি থেকে থাকে সেটার রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও আইনি গুরুত্ব কী? যাতে একে কেন্দ্র করে জুলাই যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে সেখানে যেন কোনো ফাটল না ধরে। সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলিল প্রস্তুত করতে হলে সেখানে যেন সবাইকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়, পরামর্শ নেয়া হয়, আলোচনা করা হয়। সরকারকে অনুরোধ করেছি যেন তারা সে হিসেবে পদক্ষেপ নেন। যাতে জাতীয় ঐক্যে ফাটল না হয়।
প্রফেসর মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ঘোষণাপত্র নিয়ে সব দল ঐক্যমত হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করার জন্য যে খসড়া রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে সেটি বিলম্ব হওয়ায় দলীয় ফোরামে অনেকে আলোচনা করতে পারেনি। তাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বৈঠকে আলোচনা করা যায়নি। আমরা পরামর্শ দিয়েছি, সরকারের এমন একটা মূল্যবান দলিল তৈরির পেছনে যেন কোনো অস্থিরতা, অসঙ্গতি, অসমন্বয় না হয়, ধীরস্থীরভাবে করার জন্য। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের মতবিনিময় হওয়া দরকার। তিনি বলেন, এখানে অনেক মৌলিক বিষয় বাদ পড়েছে। ইসলামী শক্তির অবদান এ কাঠামোয় স্থান পায়নি। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অবদান, নিরিহ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেয়া, আয়নাঘর, গুম, খুন বাদ পড়েছে। আমরা বলেছি যেন সব অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সবার সঙ্গে কথা বলতে, যেন সবাই মতামত দিতে পারেন। পরওয়ার বলেন, প্রাথমিক বৈঠক সফল হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আবার বৈঠক হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেন, সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ নেয়ার জন্য বলেছি। এটা আসলে কী হবে- প্রোক্লেমেশন, ডিক্লারেশন- সব ঐক্যমতের ভিত্তিতে হবে। ড্রাফট কমিটি করতে বলেছি। যেখানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি থাকবে। যেটি ভবিষ্যতে আমাদের কাজে লাগবে। সব মিলিয়ে পদ্ধতিগত জায়গায় প্রস্তাব করেছি।
এমবি//