ভারতের জন্য দুঃসংবাদ, দেশেই হচ্ছে আধুনিক হাসপাতাল!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:১৩ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০২৫ বুধবার
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বাংলাদেশি রোগীদের ভারতে চিকিৎসা নেয়া। এবার আরও বড় ধাক্কার মুখোমুখি হতে চলেছে ভারতীয় হাসপাতালগুলো।
জানা গেছে, চীন ও তুরস্ক বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই হাসপাতালগুলো থেকে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা পাবেন দেশের মানুষ। ফলে আর ভারতে গিয়ে বিপুল টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিতে হবে না।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, গত বছর চিন্ময় দাস ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার কয়েকটি হাসপাতাল এবং কিছু চিকিৎসক ‘বাংলাদেশি রোগী দেখবেন না’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে চাপে ফেলা। তবে এবার তার ফল হতে চলেছে উল্টো।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিগত ৫ মাসে বাংলাদেশ থেকে রোগী আসা প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে যেসব হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের ওপরে অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল, তারা বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছেন। ধস নেমেছে কলকাতাসহ ভারতের অন্যান্য শহরের হাসপাতাল ব্যবসায়। আর রোগীর অভাবে গত পাঁচ মাসে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ভারতের অনেক হাসপাতালের।
এমতাবস্থায় ভারতের অনেক নাগরিকই মনে করেন, বাংলাদেশিদের বিপাকে ফেলার ছক কষতে গিয়ে নিজেরাই বিপাকে পড়েছে ভারত।
এই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয়রা মোদীর এই কূটচালের নিন্দা জানাচ্ছেন।
এছাড়া বাংলাদেশি পর্যটক প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় আরও বিপাকে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের হোটেল, রেস্তোরাঁগুলো। এছাড়াও ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পড়েছে ভারতীয় রুপীর দাম।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ রোগী চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। এতে ভারতে স্বাস্থ্যসেবা নিতে তাদের বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়।
এমন পরিস্থিতিতে চীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে চায়।
সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাতে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ঢাকায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণে বেইজিংয়ের সহায়তা এবং চীনে রোগী পাঠানো নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাছাড়া চীনের সহযোগিতায় ঢাকার পূর্বাচলে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনাও দিয়েছেন তিনি। যার জমিসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে বাংলাদেশ সম্মতি জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চীনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য চীনের কুনমিংয়ে তিন থেকে চারটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেয়ার অনুরোধ জানাবে ঢাকা।
এছাড়া মন্ত্রণালয় আরও জানায়, তুরস্কও দেশে আধুনিক হাসপাতাল তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এর আগেও করোনাকালীন সময়ে চীন, তুরস্ক ও সৌদি আরব দেশে আন্তজাতিক মানের হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা তখন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যত মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে তথা ভারতে যান, তাদের কথা মাথায় রেখেই এ দেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল তৈরি করতে চায় তারা।
তারা প্রস্তাব দিয়েছিল, সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ ও থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের আদলে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল তৈরি করা হবে। তবে তিন দেশের এই প্রস্তাবে বাধ সাধে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আপাতত এই নিয়ে ভাবছে না তার সরকার।
ওই সময়ে এই নিয়ে দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার। সে সময় দেশের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাহলে কি বন্ধু মোদির দেশের লোকসানের কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসিনা?
সে প্রশ্নের উত্তর মিলেনি তৎকালীন সরকার ও সরকারপ্রধানের কাছ থেকে। তবে বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, ভারতের বৈদিশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান একটি খাত বাংলাদেশি রোগী ও পর্যটকরা। প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি ভারতে চিকিৎসার জন্য যায় আর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় এতে। সেখান থেকে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে ভারত। ফলে আর্ন্তজাতিক মানের হাসপাতাল তৈরি হলে ভারতের ওপর থেকে একক নির্ভরতা কমে যাবে বাংলাদেশিদের।
এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ চীন ও তুরস্কের এই প্রস্তাবে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। সরকারও চাইছে দেশের মাটিতেই তৈরি হোক আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক হাসপাতাল। তাতে স্বল্প খরছে দেশেই উন্নত চিকিৎসা পাবেন দেশের সাধারণ মানুষ।
এসএস//