চীন-মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের ফলে যেভাবে লাভবান হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
জাহিদ আল আসাদ
প্রকাশিত : ০৯:১৮ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় পালা বদলের ফলাফলে বদলে যেতে চলেছে বিশ্ব বাণিজ্যের অনেক হিসেব৷ একটি দেশের সাথে অন্য আরেকটা দেশের বাণিজ্য বাড়বে কি কমবে তা অনেকটা নির্ভর করে আমদানি ও রপ্তানি শুল্কের উপর।
যেমন ট্রাম্প মেক্সিকো এবং কানাডা থেকে আমদানির উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন। এতে মেক্সিকো এবং কানাডা থেকে আমেরিকায় আমদানি কমতে পারে। একই পণ্য বিকল্প কোনো দেশ থেকে আসবে কিংবা ট্রাম্প নিজের দেশেই সেই পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।
ট্রাম্প প্রশাসন তার মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ শিল্প খাতকে সুরক্ষা দেওয়ার যে কৌশল নিয়েছে তা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে রপ্তানি বাণিজ্যে লাভবান হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুসারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ এবং মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এতে শুল্ক প্রতিযোগিতায় বড় ধরনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত।
বাংলাদেশ মূলত দুই ভাবে সুবিধা পাবে। প্রথমত, আমেরিকার বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ চীন ও মেক্সিকোর সাথে প্রতিযোগিতা করে। সেখানে চীন ও মেক্সিকো থেকে আমদানিতে যদি অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয় তবে নিশ্চিত ভাবেই সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়বে। ফলে আমাদের রপ্তানি বাড়বে।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের পোশাক খাতে চীনা বিনিয়োগ বাড়বে। কারণ চীনকে যেহেতু নিজ দেশ থেকে সরাসরি পোশাক রপ্তানিতে বেশ মোটা অংকের শুল্ক গুনতে হচ্ছে, তাই তারা তৃতীয় কোনো দেশের কারখানা স্থাপন করে সার্টিফিকেট অফ অরিজিন লাভ করতে হবে। এবং সেখান থেকে মার্কিন বাজারে পোশাক ও অন্যান্য দ্রব্য রপ্তানি করবে।। আর তৈরি পোশাক উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ হচ্ছে চীনের কাছে সর্বোত্তম বিকল্প।
এভাবে, বাংলাদেশের হাতে আসতে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ। একইসাথে আসবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) লাভের সুযোগ।
ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে বাংলাদেশের পণ্যে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা রয়েছে। কম হারের এ শুল্ক সুবিধা নিতে চীনা উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। ফলে চীন-মার্কিন শুল্ক লড়াইয়ে দুই দিক থেকে লাভবান হবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের রপ্তানির তথ্য বলছে, তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে এ পণ্য থেকে। আবার একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ আসে দেশটি থেকে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনা দাপট নিরঙ্কুশ। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারের ২১ শতাংশ চীনের দখলে। অন্যদিকে বাংলাদেশের দখলে আছে ৯ শতাংশ বাজার। যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন মার্কিন শুল্ক যুদ্ধ আমাদেরকে যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজার সিংহভাগই বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ইতোপূর্বে ট্রাম্পকে প্রথম মেয়াদে চীনের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরয়ক্ল্রার সুবিধা বাংলাদেশ কিছুটা হলেও লাভ করেছিল। এখন চীনের উপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে যে বড় সুযোগ বাংলাদেশের দুয়ারে কড়া নাড়ছে, তা গ্রহণ করার জন্য আমরা কতটা প্রস্তুত?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় পালা বদলের ফলাফলে বদলে যেতে চলেছে বিশ্ব বাণিজ্যের অনেক হিসেব৷ একটি দেশের সাথে অন্য আরেকটা দেশের বাণিজ্য বাড়বে কি কমবে তা অনেকটা নির্ভর করে আমদানি ও রপ্তানি শুল্কের উপর।
এমবি//