ঢাকা, শুক্রবার   ২৪ জানুয়ারি ২০২৫,   মাঘ ১১ ১৪৩১

নৌকা ডুবিয়ে গায়েব তারা, আছেন আরামে-আয়েশে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৬ এএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে শেখ হাসিনা সরকারের আমলের মন্ত্রী, এমপি এমনকি দলের হেভিওয়েট নেতারা গ্রেফতার হয়েছেন। অনেকে পালিয়ে গেলেও আটককৃতদের সংখ্যাওকম নয়। তবে ব্যতিক্রম দলটির অঙ্গ, সগযোগী  ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।  

মাত্র ছয় মাস আগেও এদের দাপটে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও একসময় তটস্থ থাকতে। তবে ৫ আগস্টের পর নৌকা ডুবিয়ে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। সচিবালয়-মন্ত্রী পাড়া ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিল যাদের আধিপত্য, তারা এখন দলের বিপদ দেখে সটকে পড়েছেন। 

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজপথে ছাত্র-জনতার ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সগযোগী  ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। বিশেষ করে ছাত্রলীগ। সারাদেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তারা সাধারণ ছাত্রদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে।  

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে- মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ও তাঁতী লীগ।

যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠার বয়স কম হলেও সংগঠনের নেত্রীদের দাপট ব্যাপক ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্ষমতায় থাকাকালীন সচিবালয় ও বিভিন্ন অফিসে প্রভাব দেখিয়েছেন। তাদের তদবির, টেন্ডারে ভাগ দেওয়া নিয়ে অতিষ্ঠ ছিলেন মন্ত্রী-এমপিরা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে এই নেত্রীরা এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে নানা অপকর্ম করলেও তাদের বিরুদ্ধে মিডিয়ায় প্রতিবেদনও করা যেত না। সেই দোর্দ--দাপুটে নেত্রীরা এখন কোথায়? -এমন প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে!

যুব মহিলা লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ডেইজি সরোয়ার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি সিলেট অঞ্চলের কোথাও থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন সংগঠনের একাধিক নেত্রী। সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়ার পর অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেত্রীদের বাদ দিয়ে সংগঠনে ‘ইডেন’ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। সেই লিলি এখন লাপাত্তা। 

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ভারতে পাড়ি জমান। সংগঠনের  ভারপ্রাপ্ত কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে- এমন এক তথ্য পেয়ে কয়েক দিনের মাথায় তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরে তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এখন তিনি জেলহাজতে। 

সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির বিদেশ যাওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ সস্ত্রীক কানাডায় অবস্থান করছেন। সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল রয়েছেন ভারতে। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের কথা হলেও চেয়ারম্যান কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না। কারও ফোনও ধরছেন না তিনি। বিদেশে বসে বেশ আয়েশি জীবনযাপন করছেন চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। 

মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। অনেকের ধারণা, তিনি দেশেই রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক শবনম পারভিন শিলা সিঙ্গাপুরে আছেন বলে দাবি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের। দুই নেত্রীই কারও সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন না বলে জানা গেছে। 

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেসবাউল হক সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু ভারতে আছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান সাঈদ দেশেই রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী নস্কর দুবাইয়ে বসে আলীশান জীবনযাপন করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

তাঁতী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থান করছেন বলে নেতা-কর্মীদের ধারণা। 

এদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে,তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র নাথ ভারতে অবস্থান করছেন। 

আর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। কিছুদিন চুপ ছিলেন। বর্তমানে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়েছেন।

এসএস//