বিশ্ব প্রযুক্তি কাঁপিয়ে দিলো নতুন চীনা এআই ডিপসিক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:০৫ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ মঙ্গলবার
চিনা প্রযুক্তির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডিপসিক বিশ্ব বাজারে আলোড়োন সৃষ্টি করেছে ৷ যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার চিপনির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর প্রযুক্তির জোরে গত কয়েক মাস যেভাবে তর তর করে এগিয়েছে বাজারে, তাতে ধস নামিয়ে দিয়েছে এই চৈনিক এআই।
গত ২০ জানুয়ারি চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান ডিপসিক তাদের সর্বশেষ এআই মডেল, ডিপসিক-আর১ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে। এরপর মাত্র একদিনেই প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের লোকসান হয়েছে এনভিডিয়ার। তাদের শেয়ার নেমে গেছে ১৭ শতাংশ। ৩ ট্রিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানের মুকুটও হারিয়ে গেছে তাতে।
আন্তর্জাতিক লার্জ মডেল লিডারবোর্ড এরিনা তাদের শুক্রবারের বেঞ্চমার্ক পরীক্ষায় ডিপসিক-আর১’কে সব ক্যাটাগরিতে রেখেছিল তৃতীয় অবস্থানে। স্টাইল কন্ট্রোল মডেল বিভাগে এটি ওপেন এআই-এর ০১-এর সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম স্থান দখল করে।
চীনের নিজস্ব এআই মডেল ডিপসিক যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চলে ফ্রি অ্যাপ ডাউনলোড তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে এটি পেছনে ফেলেছে আগের শীর্ষস্থানীয় এআই চ্যাটজিপিটিকেও। একইসঙ্গে এটি চীনের ফ্রি অ্যাপ তালিকায়ও শীর্ষ স্থান দখল করেছে। চায়না ডেইলির খবরে জানা গেলো এ তথ্য।
ডিপসিক মূলত উন্নত এআই মডেল। চীনের হ্যাংজোভিত্তিক একটি গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে মডেলটি। ২০২৩ সালে গবেষণাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৌশলী লিয়াং ওয়েনফেং। ওপেন-সোর্সভিত্তিক এআই মডেলটির চ্যাটবট অ্যাপ অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে উন্মুক্তের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে চ্যাটজিপিটির তুলনায় বেশিবার নামানো হয়েছে। আর তাই ডিপসিক এআই মডেলটি সিলিকনভ্যালিসহ এআই দুনিয়াকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।
প্রথম থেকেই ডিপসিক সাশ্রয়ী মূল্য ও দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। আর তাই ডিপসিকের আরওয়ান মডেলটি অন্য সব এআই মডেলের চেয়ে কম খরচে ব্যবহার করা যায়। এর ফলে মেটা ও ওপেনএআইয়ের তৈরি জনপ্রিয় এআই মডেলগুলোর ওপর বেশ চাপ তৈরি হয়েছে। উন্নত মডেলের এআই তৈরি করতে ব্যয়বহুল এআই প্রসেসর প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে ডিপসিকের সাশ্রয়ী মূল্যের এআই হার্ডওয়্যার ও মডেল প্রশিক্ষণের জন্য উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। ওপেন-সোর্স কোড থাকার কারণে ডেভেলপাররাও কম খরচে সহজে ডিপসিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারবেন।
ডিপসিকের আগমনের পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে বলে মনে করেন অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্র চীনের উন্নত সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। শুধু তাই নয়, এআইখাতে চীনকে চাপে রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ডিপসিক সেই চাপকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের মডেল বাজারে এনে বড় ধরনের চমক তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে প্রশ্ন বিদ্ধ করছে। ডিপসিকের উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। ডিপসিকের সাফল্যের কারণে এনভিডিয়া, মেটা ও মাইক্রোসফটসহ অনেক এআই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে গেছে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এআই মডেলের তুলনায় কম খরচে চীনের এআই মডেলের উত্থান নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এর ফলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের এআই খাতে বিনিয়োগের ধারা বদলে যেতে পারে। ডিপসিকের কারণে এআই প্রসেসর নির্মাতাদের মুনাফাও কমতে পারে।
পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক দশকে এআই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র চীনের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও, ডিপসিকের এআই মডেল এই ভারসাম্যের সমীকরণ বদলে দিতে পারে।
এমবি//