কর্মের ফল পেতে হবে দুনিয়াতে ও আখিরাতে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:২৬ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বুধবার
মানুষের ইহকালীন জীবনের হিসাব হবে পরকালীন জীবনে। হাশরের দিন আল্লাহ তাআলা মানুষের পাপ-পুণ্যের ফয়সালা করবেন এবং যার যার দুনিয়ার কর্মফল অনুযায়ী নিখুঁত বিচার করবেন।
যে দুনিয়ায় সৎ কাজ করবেন, আল্লাহ তার প্রতিদান হিসেবে চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যাঁরা অন্যায়-অপরাধ করবেন, তাঁদের জন্য রয়েছে জাহান্নামে ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তাই আল্লাহকে ভয় করে সতর্কতার সঙ্গে জীবন পরিচালনা করতে হবে।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘যে সৎকর্ম করে, সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দকর্ম করবে, তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের প্রতি কোনো প্রকার জুলুম করেন না।’ (সুরা-৪১ হামিম সাজদা, আয়াত: ৪৬)
‘যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে নিয়ামতে পূর্ণ জান্নাত, সেখানে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। আল্লাহ তাআলার প্রতিশ্রুতি সত্য। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ৮-৯)
‘আজ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে, আজ কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ১৭)
‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তার প্রতিফল দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কর্ম করলে তার প্রতিফলও দেখতে পাবে।’ (সুরা-৯৯ জিলজাল, আয়াত: ৭-৮)
আল্লাহ পাক হাশরের দিন আমলনামার লিখিত প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করবেন। এ সময় মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, হাত-পা কথা বলবে এবং ন্যায়-অন্যায়ের সাক্ষ্য দেবে। কোরআন মাজিদে রয়েছে, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা-৩৬ ইয়াসিন, আয়াত: ৬৫)
‘আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে যা আছে, সবই আল্লাহর। আর তোমাদের অন্তরে যা আছে, তা তোমরা প্রকাশ করো বা তা গোপন করো, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে এর হিসাব নেবেন। অতঃপর, তিনি যাকে চাইবেন ক্ষমা করবেন এবং যাকে চাইবেন শাস্তি দেবেন। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৮৪)
‘প্রত্যেকের মর্যাদা তার কর্ম অনুযায়ী, এটা এ জন্য যে আল্লাহ প্রত্যেকের কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৯) ‘আর তারা সবাই আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। তখন দুর্বল লোকেরা অধিকারীদের বলবে, নিশ্চয় আমরা তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম। অতএব, তোমরা আমাদের আজাবের কিছুটাও কি দূর করতে পারো? তারা বলবে, আল্লাহ যদি আমাদের হিদায়াত দিতেন, তাহলে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে হিদায়াত দিতাম। আমাদের জন্য এখন বিলাপ করা বা ধৈর্য ধারণ করা উভয়ই সমান। রক্ষা পাওয়ার কোনো পথ আমাদের নেই।’ (সুরা-১৪ ইব্রাহিম, আয়াত: ২১)
‘যখন সময় আসবে, তখন অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তাদের সবাইকে তার কর্মফল পুরোপুরিভাবে দেবেন। তারা যা করে, নিশ্চয়ই তিনি সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-১১ হুদ, আয়াত: ১১১)
‘প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মের জন্য দায়ী থাকবে। কেউ অন্যের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। তারপর তোমাদের পালনকর্তার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি সেসব বিষয়ে বলে দেবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৬৪)
‘যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি পাবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া নিজের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। আর নারী-পুরুষের মধ্য থেকে যারাই সৎকর্ম করে এবং বিশ্বাসী হয়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। অণু পরিমাণও তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১২৩-১২৪) ‘মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই; সুতরাং যে ক্ষমা করে ও আপস–মীমাংসা করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে। নিশ্চয়ই তিনি অত্যাচারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ৪০)
কর্মফল সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক থাকলে ব্যক্তিজীবনে শুদ্ধাচার চর্চা সহজ হবে, পারিবারিক জীবন সুখের হবে, সমাজ অপরাধমুক্ত হবে; মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান নিরাপদ হবে। দুনিয়ার জীবনে শান্তি ও পরকালে মুক্তি নিশ্চিত হবে।
এএইচ