বইমেলায় বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ চলবে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৩৩ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সোমবার

বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত থাকবে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুঃখপ্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি।
বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, বইমেলার ওয়াশরুমের পাশে নারী ও শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করা হবে। বইমেলার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ড্রিমার ডংকি স্পন্সরের সহায়তায় তাদের কার্যক্রম চালালেও, নির্ধারিত নীতিমালা মানতে ব্যর্থ হয়েছে। অনুমতি না নিয়ে মেলায় যত্রতত্র বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট স্টলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, নারীদের প্রয়োজন ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বইমেলার একটি কর্নারে প্রাণ- আরএফএল গ্রুপের স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্র্যান্ড “স্টে-সেফ” তাদের স্টলে স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদর্শন ও বিতরণ করে আসছিল। তবে বইমেলায় কেন “গোপন পণ্য” বিক্রি করা হচ্ছে, তা নিয়ে আপত্তি তোলে একটি গোষ্ঠী। এরপর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে অন্য কোনো পণ্য স্টলে রাখতে প্রাণ- আরএফএলকে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে “মব আশঙ্কার” কথা উল্লেখ করা হয়।
‘মব আশঙ্কায়’ বইমেলা থেকে সরানো হলো স্যানিটারি ন্যাপকিন‘মব আশঙ্কায়’ বইমেলা থেকে সরানো হলো স্যানিটারি ন্যাপকিন
এরপর রবিবার প্রতিষ্ঠানটি মেলা থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরিয়ে নেয়। পাশাপাশি বন্ধ রাখা হয় সংশ্লিষ্ট স্টল দুটি। রবিবার বিকেলে বইমেলায় স্টল দুটি কালো কাপড় দিয়ে স্টল ঢেকে রাখা অবস্থায় দেখা যায়।
তখন বাংলা একাডেমি জানিয়েছিল, বই ছাড়া অন্যকিছু বিক্রির সুযোগ বইমেলায় নেই তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ‘স্টে-সেফ’ এর উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে, মেলায় ন্যাপকিন বিক্রি করা হচ্ছিল, এমন নয়। এটি ফ্রি দেওয়া হচ্ছিল।
বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে রবিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা একাডেমি বইমেলায় বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ অব্যাহত রাখার কথা জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার বিক্রিসংক্রান্ত একটা ইস্যু বহুজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও ফোনে বহুজন বাংলা একাডেমির কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পর্কে বিশদ জানানো জরুরি বলে মনে করছে বাংলা একাডেমি।”
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজমের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলা একাডেমি আয়োজক হলেও বইমেলার প্রয়োজনীয় কাজগুলো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান করে থাকে। এবার এ দায়িত্ব পেয়েছে ‘ড্রিমার ডংকি’। কিন্তু স্পনসর ঠিক করার ক্ষেত্রে সংখ্যা এবং ধরন বিবেচনায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু নীতি লঙ্ঘন করেছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং ডায়াপার বিষয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানটি বাংলা একাডেমিকে জানিয়েছিল, ওয়াশ রুমের পাশে রেখে নারী ও শিশুদের প্রয়োজনমতো বিনামূল্যে এসব পণ্য সরবরাহ করবে। কিন্তু মেলা কর্তৃপক্ষ দেখতে পায়, তারা এ দুই পণ্যসহ আরও কিছু পণ্য বিক্রি করছে। ফলে তাদের স্টল বন্ধ করতে বলা হয়। শুধু স্যানিটারি ন্যাপকিন নয়; ডায়াপার, পেস্ট, ব্রাশসহ আরও কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।”
বাংলা একাডেমির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রসার ও ব্যবহার সম্পর্কে বাংলা একাডেমির কোনো প্রকার সংকোচ থাকার প্রশ্নই আসে না। বইমেলার পণ্যায়নের একটা ব্যাপার স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে অন্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তার প্রমাণ, একদিকে আমরা অন্য অনেকগুলো পণ্যের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নিয়েছি। অন্যদিকে ইভেন্টকে বলেছি, সৌজন্য হিসেবে তারা যেন স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রয়োজনমাফিক বিতরণ করে।”
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওয়াশ রুমের পাশে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা রাখবে, এটাও আমরা নিশ্চিত করছি।”
এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রাণ-আরএফল গ্রুপকে দেওয়া ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ড্রিমার ডংকি’র পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাকিব হাসান সই করা চিঠিতে বলা হয়, আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্রান্ড স্টে-সেইফ বইমেলা প্রাঙ্গণে দুটি স্টল পরিচালনা করে আসছে। প্রথম দিকে কোনো সমস্যা না থাকলেও গত ১১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে বেশ কিছু ইসলামিস্ট গ্রুপ ন্যাপকিনকে গোপন পণ্য বলে আখ্যা দেয়, এবং এর প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিক্রি বন্ধের দাবি জানায়। এর পরদিন আরও অনেক মানুষ একই দাবি নিয়ে হাজির হয়। পরে বাংলা একাডেমি পুলিশ, আনসারসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি ঠান্ডা করা হয়। গতকাল (১৩ ফেব্রুয়ারি) স্টল দুটি খুলে দিলে কিছু গ্রুপ সরাসরি এসে বাংলা একাডেমিতে অভিযোগ করে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এদেশে এই মুহূর্তে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মব হচ্ছে। এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য উক্ত স্টল দুটি বন্ধ করা অত্যাবশ্যকীয়। আপনাদের ব্যবসায়িক স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে স্টল দুটি অন্য পণ্য (যেমন শিশুশিক্ষা সরঞ্জাম) দিয়ে প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে আলোচনা সাপেক্ষে। এমন অবস্থায় উক্ত স্টল দুটি আলোচনা সাপেক্ষে অন্য পণ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করার জন্য জানানো হলো। আপনার বিশেষ সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য।
সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছেও চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়।
ভাইরাল হওয়া ওই চিঠির কপিতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম এর সই দেখা গেছে। সেখানে মহাপরিচালক লিখেছেন, এই পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। অতিদ্রুত এ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
গতকাল রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা ট্রিবিউনকে ওই চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ড্রিমার ডংকি’র পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাকিব হাসান।
তিনি বলেন, বইমেলায় যেহেতু অনেক নারী আসেন। তাই নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতার কথায় মাথায় রেখে স্টলে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখতে আমরা আপত্তি জানাইনি। কিন্তু পরে কিছু মানুষ এটিকে ‘গোপন পণ্য’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানায়। তাই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাধ্য হয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ন্যাপকিন সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানাই। পরে তারা তাদের পণ্য সরিয়ে নিয়েছে।
এদিকে স্টল দুটি বন্ধ রাখার বিষয়ে বাংলা একাডেমির সচিব ও বইমেলা টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান সেলিম রেজা সংবাদমাধ্যম রোববার সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মেলায় অনুমোদন ছাড়া পণ্য বিক্রির জন্য স্টল দুটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি।
এসএস//